Site icon The Bangladesh Chronicle

এসব আলাপের প্রাসঙ্গিকতা এখন কতটা

logo

নয়া দিগন্ত গ্রাফিক্স

ইদানীং এমন সব অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয় অসময়োচিত অনেক বিষয় প্রাসঙ্গিকতার কাতারে তুলে আনার নিয়ত প্রয়াস চলছে যা অবাঞ্ছিত। এসব উদ্যোগকে কেউ কেউ সরল সমীকরণ করে নিছক সময়ক্ষেপণ ও মস্তিষ্কের প্রশান্তিতে বিঘ্ন ঘটানোর কারণ বলে মনে করেন। অপ্রয়োজনীয় এমন আলাপের ‘মহৎ’ উদ্দেশ্যটা কী এবং উৎস কোথায়! এমন প্রশ্ন তুলে তৃতীয় নয়নের অধিকারীরা এসব বাক্যাবলির একটা স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা সংরক্ষণ করছেন। তাদের ব্যাখ্যায় রয়েছে, সমাজের এখন যে স্থিতির একটা আবহ তৈরি হচ্ছে। তাতে ঝামেলা বাধিয়ে তাকে একটু নেড়ে চেড়ে ঘোলাটে করে দেয়া। তারপর ঘোলা পানিতে মাছ শিকার। আবারো আগের মতো হযবরল অবস্থায় ঠেলে দিয়ে জনগণকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও হতাশায় নিমজ্জিত করা। সে অবস্থায় ফিরে গেলে দেশের পোড়খাওয়া মানুষগুলোকে ত্যক্ত-বিরক্ত ও ক্ষিপ্ত করে তোলা যেতে পারে, যাতে জনমনে পতিত অতীতের প্রতি হয়ত একটু করুণার সঞ্চার হতে পারে। এটি হলো বর্তমান সবকিছুর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে তাদের ধৈর্য ও সংযমের বাঁধ ভেঙে ফেলা; দায়িত্ব পালন নিয়ে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের এখন যে অখণ্ড মনোযোগ তা থেকে তাকে বিচ্যুতি করা। যার অনিবার্য ফলে পুরো দেশে প্রবল এক উত্তেজনা তৈরি হওয়া। মালিক মোক্তারসহ তখন যেসব হোলিগার্ডদের অত্যাচার-অনাচার ও জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ডে স্বৈরাচারকে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছিল। তাদের মধ্যে ঐক্যে ফাটল ধরানো। স্বৈরাচারকে তাড়ানো সেই অকুতোভয় জনতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলে পতিতদের পুনর্বাসনের একটা প্রক্রিয়া শুরু করা খুব সহজ হতে পারে বলে ওরা ধারণা করছে। এমন হীন চক্রান্তের মধ্যেই তাদের ভবিষ্যৎতের জন্য যত সুখানন্দের স্বপ্ন এখন বিরাজ করছে। এমন অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলায় আশায় বুক বেঁধে আছে ওই সব দূরাচারী দল। অর্বাচীন সেসব পামর-তস্করদের হৃদয়ের নিভু নিভু প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে সহায়তা দিচ্ছে এখন গুটিকতক মিডিয়া। এরা সেই মিডিয়া অতীতে যারা সব কিছু ওলট-পালট করে দিতে সহায়ক ছিল। তখন পতিত সরকারসহ তাদের সব হোলিগার্ডদের সাথে তথাকথিত অনেক মিডিয়াই লুটেপুটে, চেটে চুষে খেয়েছে। তারাই এখন সব ইতিবাচকতাকে নেতিবাচকতার অন্ধকারে ঢেকে দিতে চায়। যা কখনো খবর নয় এবং কখনোই খবর হতে পারে না, তাকেই খবর বানিয়ে রঙ মাখিয়ে সমাজে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তারা সব অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে প্রাসঙ্গিক করে তোলার অদ্ভুত এক প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে কে কার থেকে এক কাঠি সরেস, তা প্রমাণের জন্যই এখন মরিয়া ওই সব মিডিয়া। কোথাও একটু সূচাগ্রের মতো ফুটো পেলে তাকে বিরাট এক তাল বানাতে ব্যস্ত। এমন প্রচার করে লোক-সমাজকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে জড়িয়ে ফেলতে চায় তারা। এ জন্য প্রতিদিন ঠাণ্ডামাথায় নানা কৌশল এবং নীলনকশা করা হচ্ছে। গুটিকতকের স্বার্থচরিতার্থে, জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিতে এদের কোনো কুণ্ঠা বোধ নেই। তাদের এসব অপচেষ্টার কারণে আপাতত হয়ত ভুগতে পারে জনগণ, তবে আখেরাতে এর ফল বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে তাদের কাছেই। স্বৈরযুগে দেশের সব ইতিবাচক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা কী ভীষণ ও ভয়ঙ্কর জেল জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তখন এসব মিডিয়া খুশিতে ‘বাকবাকুম’ করেছে। নির্যাতনে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা। বরং তারা সে নির্যাতনের ন্যায্যতা প্রমাণে ঘুম হারাম করে অহর্নিশ কুকর্মে লিপ্ত ছিল। সেই নির্যাতিতরা অতীতে সব দুর্ভোগ কষ্টের স্মৃতি কি এখনই ভুলে গেছে। তবে হালে ওই সব মিডিয়া নির্যাচিতদের কাউকে কাউকে কাছে টানার চেষ্টা করছে বলে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে, যা অবাক করার মতো। ওই মিডিয়াকেই আপন করে তোলার পরিণতি কী হতে পারে। সেটি অতীতে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। এ কথা হয়তো অনেকেই ভাবছেন না বা জানেন না ওই হলুদ মিডিয়াকে জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে। এসব মিডিয়া এখন তাদের হারানো আস্থা ফিরে পেতে ওই সব ইতিবাচক রাজনীতিকের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। অথচ দিন শেষে তারা কার বরকন্দাজী করে সে খবর অনেকেই হয়ত রাখেন, অনেকেই জানেন না। সব নেতিবাচকতাকে সুগার কোটিন দিয়ে স্লো পয়জনিং করছে সেই মিডিয়া। সবাইকে জ্ঞানহারা করে আবারো পতিতের ফিরে আসার পথনকশা তৈরি করছে। অথচ মিডিয়াকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে মর্যাদাকে ধূলি মলিন করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। হয়তো পতিতদের পতনের প্রতিশোধ নিতে এরাই এখন ছদ্মাবরণে মাঠে নেমে পড়েছে। সময় এলে ছুড়ে ফেলতে পারে সেই আবরণ, তখন আবারো বেরিয়ে পড়বে তাদের আগেকার সেই কদাকার চেহারা। পতিতদের পতনের কালে ওই সব মিডিয়াই সাময়িক সময়ের জন্য বহু কষ্টে, অতীতকে মন্দ বলে উচ্চারণ করছেন, তবে সেটি কখনো তাদের মনের কথা ছিল না। পতনের অব্যবহিত আগেও তাদের পতন রোধে পতিতদের প্রতি আহ্লাদে ভরা বাকবচন উচ্চারণ করেছে, যারপরনাই চেষ্টা-তদবির করেছে। ইতিহাস এমন সব আচার-আচরণ সুচারুভাবে ধারণ করে রেখেছে। তাদের দ্বিচারিতার এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ সংরক্ষিত আছে। এরই মধ্যে দেশের নানা নদী দিয়ে কোটি কোটি কিউসেক মিষ্টি পানি সমুদ্রের লবণ পানির সাথে মিশে গেছে বটে, তবে কথার নদী এখনো বহমান। কথা নদী কিন্তু সমুদ্রে গড়ায় না, দূরাচারীদের ওই সব কথা মানুষের হৃদয়ে এবং স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে, থাকবে। আর কাল সাক্ষী ইতিহাস কখনই কারো ব্যাপারে এতটুকু তারতম্য করে না। নিক্তিতে মেপে সত্য-মিথ্যাকে পৃথক করে তবেই সংরক্ষণ করে।

কিছুকাল থেকে সম্ভবত গণতন্ত্রের নতুন ব্যাখ্যা তৈরি করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়ার দায়িত্ব সব সময়ই সত্য সুন্দর ও ন্যায়নীতি মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রকে উচ্চকিত করা। কিন্তু সম্প্রতি ৫০০ ব্যক্তির একটা ‘মব’ লক্ষ মানুষের নানা অধিকারের বাধা দিয়ে চলেছে। ৫০০ মানুষের মব লক্ষ মানুষের চলার পথ অনবরত রুদ্ধ করছে। অথচ মিডিয়া সেই ৫০০ জনের মবকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। অথচ লক্ষ মানুষের কষ্ট দুর্ভোগের কথা তারা মনে রাখে না। এটা কি গণতন্ত্রের শিক্ষা! গত আগস্ট বিপ্লবের পর গণতন্ত্রের নামে যে অপচর্চা দেখা গেছে, এখনো তার জের কাটেনি। এ কেমন আবদার, পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি দিতে হবে। যারা নিজেরাই অযোগ্য তারা শিশু- কিশোরদের সুুশিক্ষিত করে তুলবেন কোন যোগ্যতায়। অথচ এসব অযৌক্তিক আবদারকে প্রাসঙ্গিক করে তুলছে কিছু মিডিয়া। তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের সভা-সমাবেশ, পথ অবরোধকে চমৎকার করে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরছে। তাদের যোগ্যতার ঘাটতির বিষয়টি ভুলেও উল্লেখ করা হচ্ছে না। এমনটা কি আসলেই মিডিয়ার দায়িত্বশীলতা। কোথায় ছিলেন তারা, যখন লাগাতার ১৫ বছর যোগ্যদের বঞ্চনা-বঞ্চিত করা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা? অন্য দিকে অযোগ্যদের পুরস্কৃত করা হয়েছে! এটা কোন বিচার। উপরে দেয়া উদাহরণ একটি মাত্র। এমন নজির তো বেশুমার। এসব অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা কোনোক্রমে সময়োপযোগী হতে পারে না। জনতা দেখছে, নির্বাচন নিয়ে ওই সব মিডিয়া এখন একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অথচ প্রচারমাধ্যমের অন্যতম প্রধান দায়দায়িত্ব দেশকে নির্বাচনমুখী করা। স্বচ্ছ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোথায় কোন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে সেগুলো চিহ্নিহ্নত করে, তার প্রতিকারের পথনকশা দেয়া। সৎ উপদেশ ও গঠনমূলক আলোচনা করা। শুধু এই মুহূর্তেই নয়, এ দেশে মানুষ সবসময় গণতন্ত্রগতপ্রাণ। গণতন্ত্রের প্রধান অনুশীলন হচ্ছে, ভোটদান প্রক্রিয়া। অথচ গত তিন তিনটি ইলেকশনকে পতিত সরকার নিছক সিলেকশনে পরিণত করেছিল। জনগণের ভোটের কোনো প্রয়োজন হয়নি। আজকের ছদ্মবেশী মিডিয়া সেই সিলেকশনকে ইলেকশনে রূপ দিতে কত না চেষ্টা-তদবির করেছে। ভোটের হাজারো ভুয়া পরিসংখ্যান মনের আনন্দে ফলাও করে প্রকাশ করেছে। আগামীতে যে নির্বাচন আসতে চলেছে তা নিয়ে এখন ছুতানাতা ধরে মানুষের ভেতর অবিশ্বাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের অর্থ হচ্ছে স্বল্পকালীন একটা ব্যবস্থা। সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দায়দায়িত্ব পালনেরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গত ১৫-১৬ বছর কখনই নির্বাচনের ‘ন’ উপস্থিত ছিল না। সে ‘ন’ কে এখন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেখানে ওই মিডিয়াকে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং তাদের কথা ‘ন’ ব্যতিরেকেই হোক এক ‘থোড় বড়ি খাড়া’ মার্কার একটা ভোট। যাতে-তাকে অতীতের সিলেকশনের ভোটের সমতুল্য করে দেখানো যায়। এ নিয়ে বির্তক সৃষ্টির এই চেষ্টা হলো অতীতের নিন্দিত সিলেকশনের নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা। বর্তমানে অতীতের সব অপকর্মের ঝাড়াই-বাছাই হচ্ছে। তাকে অর্থহীন করতে পারলে ষোলো আনা লাভই হবে পতিতের। সেখানে লাভের ভাগ অবশ্যই পাবে আজকের খল মিডিয়া।

অথচ এসব অপকর্ম নিয়ে কেউ এখন কথা বলছে না। এসব জাতীয় সমস্যা। এ প্রসঙ্গে সবাইকে কথা বলতে হবে। সব খলনায়কদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, সবারই। তাই সবাইকে সমান্তরালভাবে চলা সব দুর্যোগকালের শিক্ষা। এখন কথা হতে পারে নির্বাচন নিয়ে।

শুধু পতিত অতীতে কেন, বর্তমান সময়ে অনেকেই চটজলদি যেনতেন ভোট নিয়ে উতলা। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হোক বা না হোক। এমন অসময়োচিত আলাপচারিতা কি খুব যুক্তিযুক্ত। যে ভোট নিয়ে গত ১৫ বছর মানুষ অপেক্ষা করছে, তাকে ষোলো আনা সুষ্ঠু হতে হবে। সে জন্য জনগণ অপেক্ষা করতে কোনো আপত্তি করছে না। এই জন-মনোবাঞ্ছাকে উপেক্ষা করা কি ঠিক হবে! সে ক্ষেত্রে লোকসমাজে নানা প্রশ্ন তৈরি হবে। তাতে কাঙ্ক্ষিত ভোটের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এ নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে। ভোট সবাই চায়, কিন্তু তার সময় নিয়ে নানা মত আছে। প্রশ্ন আছে এর একটা সমন্বয় অবশ্যই জরুরি। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বিতর্ক কেউই আশা করবে না। বরং সমঝোতায় পৌঁছানো ব্যতিরেকে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া সঠিক বিবেচনা হবে না। দ্বিধা সৃষ্টির সময় এখন নেই। লন্ডন আলোচনার পর নতুন কিছু বলার সরল অর্থ হচ্ছে, সবকিছু ভেস্তে গেছে। দলবিশেষের প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরতে পারে।

ndigantababar@gmail.com

Exit mobile version