Site icon The Bangladesh Chronicle

এবারো নিম্নমানের বই ছাপানোর শঙ্কা

পিয়াস সরকার

১২ আগস্ট ২০২৩, শনিবার

চলতি বছরে বিনামূল্যের বই নিয়ে হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয়েছে নিম্নমানের কাগজ ও অনুজ্জ্বল বই। তাও মেলেনি সঠিক সময়ে। অনেকের হাতে বই গেছে তিন থেকে চার মাস পরে। আবার পাঠ্যবইয়ে ভুল নিয়েও হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এরই মধ্যে আগামী বছরের বইয়ের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। কিছু মুদ্রাকর সিন্ডিকেট করে দিয়েছেন কমমূল্যের দর। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আগেই ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচনী বছর হওয়ায় ডিসেম্বরের পূর্বেই ছাপিয়ে ফেলা হবে বই।

ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে দরপত্র আহ্বান। এবার প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। এই চার শ্রেণির বই ছাপানোর দরপত্র আহ্বানে হয়েছে বিলম্ব।এনসিটিবি ভালো মানের বই ছাপাতে চায়।

তবে প্রাথমিকের ১০ কোটির বেশি বই ছাপানোর যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা প্রাক্কলিত দরের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম। আর মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের ক্ষেত্রেও একই হাল। মুদ্রাকররা অভিযোগ করেন, কয়েকজন মুদ্রাকর সিন্ডিকেট করে কম দর দিয়েছে।

এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেও অভিযোগ জানায় বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি। জুনে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, দু’টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে অস্বাভাবিক কাজ দেয়া, নির্ধারিত সময়ে বই না দেয়ার পরও জরিমানা না করা, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি কাজ দেয়ার অভিযোগ তোলেন তারা। জানানো হয়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যপুস্তক শিক্ষাক্রম বোর্ডের সহযোগিতায় সক্ষমতার চেয়ে অধিক কার্যাদেশপ্রাপ্ত অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস এবং কচুয়া প্রেস নামে দুইটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের বই সরবরাহ করে।

৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে বই পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা এপ্রিল-মে মাসে পৌঁছায়। দেরিতে বই দেয়ার জন্য অন্যান্য মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান জরিমানার মুখে পড়লেও অদৃশ্য কারণে এ দু’টি প্রতিষ্ঠানকে একটাকাও জরিমানা করা হয়নি। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৪ থেকে ৫ মাস দেরিতে বই দেয়ার পরও এনসিটিবি সফ্‌টওয়্যার জালিয়াতির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের বই ডিসেম্বরে ডেলিভারি দেখায়। এই জালিয়াতির সঙ্গে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান-উৎপাদন নিয়ন্ত্রক জড়িত বলে অভিযোগ করেন মুদ্রাকররা।

বলা হয়, মুদ্রণ শিল্প সমিতির কোনো আলোচনা ছাড়াই অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দরপত্র সংশোধন করে চেয়ারম্যান। এতে মুদ্রণ সক্ষমতার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দুইটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে সক্ষমতার অধিক কাজ দেয়া হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি ৪-৫ মাস পর বই দেয়। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২০২১ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের সকল অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল অগ্রণী ও কচুয়া প্রিন্টার্স। গত শিক্ষাবর্ষে এই দু’টি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত বই ৮০ জিএসএম-এর স্থলে ৬০ জিএসএম দিয়ে ছাপানো হয়।

এ ব্যাপারে একজন মুদ্রাকর বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান যদি প্রাথমিক-মাধ্যমিক মিলিয়ে ১০ কোটি বইয়ের কাজ পায়, সে যত বড় প্রতিষ্ঠানই হোক কোনোভাবেই সময়মতো বই দেয়া সম্ভব না। সময়মতো বই দিতে হলে এ প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন ১২ লাখ বই ছাপাতে হবে। আধুনিক মেশিনে প্রিন্ট যদিও সম্ভব হয় তাহলে বাঁধাই করা কোনোভাবেই সম্ভব না।

তিনি বলেন, তাতে ৬০ জিএসএম’র কাগজেও বই দেয়া সম্ভব হবে কি না সন্দেহ। সেখানে ৭০ থেকে ৮০ জিএসএম’র কাগজে বই মুদ্রণের কথা বলা হয়েছে। ৮০ শতাংশ উজ্জ্বলতার কাগজ চাওয়া হলেও মুদ্রাকরদের দর অনুযায়ী তা দেয়া সম্ভব হবে না। ২০২৩ সালে সক্ষমতার বেশি কার্যাদেশ পাওয়া কয়েকটি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাগজে বই সরবরাহ করে। এসব বই তিন-চার মাসের মধ্যেই পাঠের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এবারও সে রকমই বই মিলবে।

জানা যায়, মূলত কাজ পায় দু’টি প্রতিষ্ঠান। দু’টি কোম্পানিরই মালিকানা কার্যত এক এবং একই পরিবারের সদস্য। বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের বই এপ্রিল মাসে দিলেও তাদের কোনো জরিমানা করা হয়নি। তাদের জন্য সফ্‌টওয়্যার পরিবর্তন করেছে এনসিটিবি। আমরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবিতে লিখিত অভিযোগ জানাব। তাতে কাজ না হলে এনসিটিবি’র সামনে মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি দেয়ার চিন্তা করছি।

এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, আশা করা যায় অনেক আগেই আমরা বইয়ের কাজ শেষ করতে পারবো। প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে। বাকি যেগুলো রয়েছে এগুলোও শিগগিরই দেয়া হবে।

Exit mobile version