Site icon The Bangladesh Chronicle

এবারের বিশ্বকাপে নজর থাকবে যে ৫ অলরাউন্ডারের ওপর

এবারের বিশ্বকাপে নজর থাকবে যে ৫ অলরাউন্ডারের ওপর – ছবি : সংগৃহীত

যেকোনো বিশ্বকাপ মিশনে দলগুলোর সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অলরাউন্ডাররা। ব্যাট ও বলে দক্ষতা প্রদর্শনের কারণে তাদের মুল্যায়নও বেশি। আগের বিশ্বকাপগুলোতে নিজ নিজ দলের হয়ে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন জ্যাক ক্যালিস, কপিল দেব, স্টিভ ওয়াহ, যুবরাজ সিং ও ইয়ান বোথামের মতো অলরাউন্ডাররা।

এবারের বিশ্বকাপের আলোচনায় পাঁচ অলরাউন্ডার :

১। হার্দিক পান্ডে (ভারত) : বিশ্ব ক্রিকেটে তিনি সবচেয়ে আগ্রাসী ব্যাটারদের একজন। পান্ডে যে শুধু ব্যাট হাতে দক্ষতা দেখান তা নয়, বোলার হিসেবেও তিনি বেশ দক্ষ। ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাটার হিসেবে হার্দিক পান্ডের ব্যাটিং গড় ৩৩.৮১। বল হাতেও তার স্ট্রাইক রেট ১১০.২২, যেটি যেকোনো মানেই মনোমুগ্ধকর।

বল হাতে ওয়ানডে ক্রিকেটে এ পর্যন্ত ৩৬.০৪ গড়ে ৭৯টি উইকেট সংগ্রহ করেছেন হার্দিক। বল হাতে তার পরিসখ্যান খুব একটা আশানুরূপ না হলেও সাম্প্রতিক বোলিং দক্ষতায় উন্নতি করেছেন তিনি। সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে চমৎকার পারফর্ম করেছেন হার্দিক। আসন্ন বিশ্বকাপেও এমন ছাপ রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আইসিসি ওয়ানডে অলরাউন্ডারের র‌্যাংকিংয়েও একধাপ এগিয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠেছেন হার্দিক। মিচেল সান্তনার, ক্রিস ওকস ও মেহেদি হাসানদের ছাড়িয়ে গেছেন ২৪৩ রেটিং পয়েন্টধারী এই অলরাউন্ডার। টিম ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজনে যেকোনো পজিশনে ব্যাট করতেও সম্মত এই অলরাউন্ডার। এটাই তাকে ভারতীয় দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তারকায় পরিণত করেছে।

২। মার্কাস স্টয়নিস (অস্ট্রেলিয়া) : স্টয়নিস হচ্ছেন একজন বিধ্বংসী ব্যাটার, যিনি বেশ সাবধানতার সাথে নিজের ইনিংস খেলে থাকেন এবং সহজেই উইকেট বিলিয়ে দিতে চান না। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকে অনেক ম্যাচে জিতিয়েছেন তিনি। ২০২১ টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দলকে বের করে আনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকাকে কোনোভাবেই খাট করে দেখা যাবে না।

বল হাতেও বেশ পারদর্শী স্টয়নিস। সদ্যসমাপ্ত আফ্রিকা সফরে ভালোই বল করেছেন তিনি। পুরনো বলে বেশ ভালোই আঙ্গুল ঘোরাতে পারেন। দলের প্রয়োজনে নতুন বলেও সমান দক্ষতা দেখাতে পারেন স্টয়নিস। ব্যাট বলের দক্ষতার কারণে দলের মধ্যে বেশ মূল্যবান খেলোয়াড়ের আসনে রয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে তিনি সবসময় ভালো পারফর্মেন্স করে থাকেন এবং অভিজ্ঞতার কারণেও অসি শিবিরে তার বেশ কদর আছে। স্টয়িনস এমন একজন অলরাউন্ডার যাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো পজিশনে খেলনো যায়। প্যাট কামিন্সকে তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে আসন্ন বিশ্বকাপে এই তারকা অলরাউন্ডারের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে হবে। ২০২৩ বিশ্বকাপে স্টয়নিস হবেন সেরা অল রাউন্ডারদের একজন।

৩। সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) : আইসিসি অল রাউন্ডারদের রেটিংয়ে এই মুহূর্তে শীর্ষস্থান দখল করে আছেন সাকিব আল হাসান। দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ যেসব সেরা খেলোয়াড় পেয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম সাকিব আল হাসান।

উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে তিনি সবসময় ভালো পারফর্ম করে থাকেন। আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সাকিব বেশ ভালোভাবেই জানেন ভারতের মাটিতে কী করতে হবে। ওয়ানডে ক্রিকেটে সাকিবের সাম্প্রতিক ব্যাটিং গড় ৩৭.৪৮। তবে ২৯.৩২ বোলিং গড়ও বেশ আকর্ষনীয়। ওয়ানডে ক্রিকেটে এ পর্যন্ত সাত হাজার ৩৮৪ রান সংগ্রহ করা সাকিবের উইকেট সংখ্যা ৩০৮টি। বিশ্বের খুব কম সংখ্যক ক্রিকেটারেরই এমন একটি পরিসংখ্যান রয়েছে।

দুই বিভাগেই বাংলাদেশ দলকে দারুণ সমর্থন দিয়ে থাকেন সাকিব। তার সাথে বাংলাদেশ দলে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তরা বেশ ভালো পারফর্ম করছেন। যার কারণে সাকিবের ওপর থেকে চাপ কমবে । ফলে আসন্ন বড় ইভেন্টে স্বাভাবিক খেলাটা উপহার দিতে পারবেন তিনি।

৪. মার্কো জানসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা) : তিনি হচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট দলের একজন উদীয়মান তারকা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাম্প্রতিক ওয়ানডে সিরিজে নিজের ব্যাটিং পারদর্শিতার প্রমাণও দিয়েছেন জানসেন। সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে তিনি দ্রুত ৪৭ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ডেথ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে ৫ উইকেট সংগ্রহ করেছেন।

মার্কো জানসেন এমন এক দীর্ঘদেহী পেসার যিনি ব্যাটারদের খুব একটা সুযোগ দেন না। তিনি সব সময় সঠিক লাইনে বল করেন, এতে যে সবসময় উইকেট পান তা নয়, ব্যাটিং সামর্থ্যের কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকদের আস্থায় থাকেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ বেশ শক্তিশালী। তবে কোনো কারণে যদি টপ অর্ডার ব্যর্থ হয় তখন তাদের নির্ভর করতে হয় মার্কোর ব্যাটিংয়ের ওপর। সম্প্রতি ব্যাট হাতে দারুণ পরিপক্কতার প্রমাণ দিচ্ছেন তিনি।

৫। বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড) : গোল্ডেন আর্মের বেন স্টোকস হচ্ছেন সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। সৌভাগ্যবশত অবসর কাটিয়ে আবারো দেশের হয়ে বিশ্বকাপে খেলতে নামবেন তিনি। বলতে গেলে একক প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন স্টোকস এবং অচিরেই সেটি রক্ষার মিশনে নামবেন।

বেন স্টোকস হচ্ছেন বড় ম্যাচের একজন তারকা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তিনি একটি বলও করেননি। ব্যাটার হিসেবেই দলে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বাটলার যদি তাকে বোলিংয়ে পাঠান তাহলে বিস্মিত হওয়া কিছু থাকবে না।

স্টোকস বড় মঞ্চ পছন্দ করেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের মাধ্যমে বিদায় নেয়ার চেয়ে বড় অর্জন তার ক্যারিয়ারে আর কিছুই হতে পারে না। এটি এমন একটি অর্জন যেটি তাকে আরো সম্মানিত স্থানে বসিয়ে দেবে।

সাধারণত সঙ্কটময় মুহূর্তে সেরা ক্রিকেট খেলে থাকেন বেন স্টোকস। ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার যে মানের তাতে মির্ডল অর্ডারে বাড়তি শক্তি যোগ করবেন স্টোকস। ২০২৩ বিশ্বকাপে তিনি অবশ্যই আলোচিত অলরাউন্ডারদের একজন।
সূত্র : বাসস

Exit mobile version