Site icon The Bangladesh Chronicle

এনএসআইয়ের তিন কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়েছেন

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৯

 

জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স-এনএসআইয়ের তিন কর্মকর্তা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এদের দুজন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এ এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং এরা এনএসআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিও চুরি করে নিয়ে গেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এই কর্মকর্তারা হলেন-এনএসআইয়ের যুগ্ম পরিচালক বদরুল আহমেদ (বিদ্যুৎ), উপ-পরিচালক আমিনুল হক পলাশ ও সহকারী পরিচালক তানভীর হোসেন খন্দকার। দুবাই কনস্যুলেট, কলকাতা মিশন এবং ঢাকা থেকে এরা পালিয়েছেন। আমিনুল হক পলাশ বিকল্প পাসপোর্টে ভারত থেকে ব্রিটিশ ভিসা নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেলেও অন্য দুই কর্মকর্তা কোন দেশে পালিয়ে গেছেন এনএসআইয়র সদর দপ্তর এখনো জানতে পারেনি। এ ঘটনা গোয়েন্দা সংস্থাটিতে রহস্যের সৃষ্টি করেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পলাতক তিন কর্মকর্তার মধ্যে উপ-পরিচালক আমিনুল হক পলাশ প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের দায়ের করা সব মামলা ও তাকে হয়রানির কারিগর হিসেবে পরিচিত। ‘র’-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করার কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য তিনি ‘র’-এর কাছে পাচার করেছেন। ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্টধারী হলেও বেআইনিভাবে রাখা বিকল্প পাসপোর্ট (সবুজ পাসপোর্ট) নিয়ে তিনি লন্ডনে পালিয়েছেন এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলে কলকাতার কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। স্বপক্ষ ত্যাগ করে এভাবে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে এখনো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কলকাতা ও দুবাই থেকে পালিয়ে যাওয়া এনএসআইয়ের দুই কর্মকর্তাকে দেশে তলব করলেও তারা আসেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নোটিস জারির পর তাদের ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাতিল করেছে।

পলাতক কর্মকর্তা আমিনুল হক পলাশ সম্পর্কে আরো জানা গেছে, এনএসআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) টিএম জোবায়ের শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পেছনে লাগিয়েছিলেন। তার কাজ ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা। এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য মামলায় ড. ইউনূসকে ফাঁসানো, জেলে বন্দি করা, আদালত প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া এবং তার আন্তর্জাতিক সম্মান ও মানমর্যাদা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

পলাতক যুগ্ম পরিচালক বদরুল আহমেদও ‘র’-এর হয়ে কাজ করেছেন। তার দায়িত্ব ছিল ২০১৮ সালের রাতের ভোট ও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করা। তিনি এনএসআইয়ের তৎকালীন ডিজি টিএম জোবায়েরের বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। পলাতক সহকারী পরিচালক তানভীর জাল সার্টিফিকেট দিয়ে এনএসআইয়ের চাকরিতে যোগদান করেন। তার বাবা এম খুরশীদ হোসেন র‌্যাবের সাবেক ডিজি, তিনিও পালিয়েছেন।

এনএসআই কর্তৃপক্ষ সংস্থাটির তিন কর্মকর্তা পালানোর বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে আমার দেশকে জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পলাতক উপ-পরিচালক আমিনুল হক পলাশের ব্যাপারে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাকে (এমআই-৬) ইতোমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। পলাশ সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। ড. ইউনূসকে ফাঁসানোর পুরস্কার হিসেবে পলাশকে কলকাতায় পোস্টিং দেওয়া হয়। তাকে দেশে তলব করা হলে তিনি আর্টিকেল ৪৭ অনুযায়ী দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এর আট কর্মদিবসের মধ্যে তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে রিপোর্ট করার কথা। কিন্তু তিনি বহিঃবাংলাদেশ ছুটির আবেদন করেন। এই সময়টায় তিনি ব্রিটিশ ভিসা নেওয়ার চেষ্টা চালান।

এনএসআই কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে এনএসআইতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে এই তিন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে ফাইল পাঠানো হয়েছে।

পলাতক কর্মকর্তা বদরুল আহমেদের প্রেষণের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর সাত মাস আগে তাকে দায়িত্ব ত্যাগ করে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট এ বিষয়ে চিঠি পাঠায় কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগ দেননি। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার ৬০ দিন পার হওয়ায় তাকে পলাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ডিজারশনের অভিযোগে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার অফিসে ফাইল পাঠানো হয়েছে।

এনএসআইয়ের পলাতক যুগ্ম পরিচালক বদরুল আহমেদ (বিদ্যুৎ) ছাত্র জীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০১১ সালে এনএসআইয়ের ফিল্ড অফিসার হিসেবে যোগদান করে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি সহকারী পরিচালক হন। তিনি ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার নির্বাচন জালিয়াতির ক্ষেত্রে ‘কী-রুল’ পালন করেন। ২০২৪ সালের আগে তিনি দুবাইতে কনস্যুলার অ্যাটাচি হিসেবে (দ্বিতীয় সচিব) কাভার পদে ছিলেন। সেখানে তিনি ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ থেকে কর্মরত ছিলেন। ২০২৪-এর নির্বাচনে তাকে দুবাই থেকে ঢাকায় এনে নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজে নিয়োগ করা হয় এবং সংস্থার নির্দেশ মতো তিনি হাসিনা সরকারের পক্ষে কাজ করেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি দুবাই থেকে বিকল্প পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে যান।

আমিনুল হক পলাশ যেভাবে ড. ইউনূসকে মামলায় জড়ান

আমিনুল হক পলাশ এনএসআইয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে কলকাতা দূতাবাসে কনস্যুলার অ্যাটাচে (দ্বিতীয় সচিব) ছিলেন। ছাত্র জীবনে তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট ছাত্রলীগের আহবায়ক ছিলেন। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাকে কলকাতা দূতাবাসে পাঠানো হয়। এর আগে এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি টিএম জোবায়ের তাকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার যাবতীয় বিষয় দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। তিনি এবং এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুর রহমান ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কতসংখ্যক মামলা দেওয়া যায়, কী কী ধরনের মামলা দেওয়া যায়, সাক্ষী এবং অভিযোগকারী কাকে কাকে করা যায়, গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণ বিভিন্ন সংস্থার কর্মচারীদের, বিভিন্ন সময়ে চাকরি যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কীভাবে মামলার কাজে, রাজপথে প্রতিবাদের কাজে লাগানো যায়, আইনজীবী কাদের নিয়োগ করা যায়, মামলার উপযুক্ত আর্জি তৈরি করা ইত্যাদি যাবতীয় কাজ করেন। মামলা হওয়ার পর ওই কর্মকর্তারা ড. ইউনূস যাতে হয়রানির শিকার হন, নির্যাতনের শিকার হন সে জন্য আদালতে লিফট বন্ধ করে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচ-ছয় তলায় উঠানো-নামানো, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে ফ্যান চালানো বন্ধ করা ইত্যাদি কাজ করা হতো।

আমিনুল হক পলাশ কলকাতা মিশন থেকে পালান ২০২৪ সালের নভেম্বরে। এখন তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে বিভিন্ন টিভিতে তিনি টকশোতেও অংশ নিচ্ছেন। ৩ নভেম্বর ২০২৪ তাকে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসেননি। তিনি কলকাতা থেকে কীভাবে লন্ডন পালিয়ে গেছেন তাও রহস্যজনক। আমিনুল হক পলাশ লন্ডনে যাওয়ার ক্ষেত্রে এনএসআইয়ের অনুমতি নেননি। তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা লাল পাসপোর্ট ছিল। কিন্তু ভিসা কিংবা লন্ডন যাওয়ার সরকারি অনুমতিপত্র (জিও) ছিল না। এগুলো ছাড়াই তিনি লন্ডনে পালান। কলকাতার কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ‘র’-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করার কারণে তিনি ভারত থেকে তার কাছে থাকা বেআইনি সবুজ পাসপোর্টে ব্রিটিশ ভিসা পেতে সক্ষম হন। কূটনৈতিক পাসপোর্ট থাকার পরও সবুজ পাসপোর্ট রাখা বেআইনি। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা।

আমিনুল হক পলাশ এনএসআইতে যোগ দেন ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট সহকারী পরিচালক হিসেবে। তিনি কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাই কমিশনে দ্বিতীয় সচিব (কনস্যুলার) হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে। তার বিরুদ্ধেও জুলাই অভ্যুত্থনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শৃঙ্খলা বিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে এনএসআই জানায়। তাকে গত বছরের ৩ নভেম্বর দেশে ফিরে আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তিনি ফিরে আসেননি। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার ৬০ দিনের অধিক হওয়ায় তাকেও পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে এবং ডিজারশনের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার অফিসে ফাইল পাঠিয়েছে এনএসআই।

তানভীর হোসেন খন্দকার জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করেন

তানভীর হোসেন খন্দকার এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক। ২০২৩ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেনের ছেলে তিনি। তানভীর পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি এনএসআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টও সরিয়েছেন।

তানভীর হোসেন খন্দকার এনএসআইয়ের চাকরি বাদ দিয়ে কেন পালিয়েছেন, কোথায় পালিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ কী কী নথি গায়েব করেছেন সে সম্পর্কে বড় ধরনের রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এনএসআই সূত্রে জানা গেছে, সহকারী পরিচালক তানভীর হোসেন ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর এনএসআইয়ের চাকরিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন শৃঙ্খলা ভঙ্গ সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রয়েছে অনুমতি ছাড়া ডরমেটরির বাইরে অবস্থান, রুল কলে অনুপস্থিত থাকা, পিটি ড্রিলে না আসা অনুশীলনের নির্দেশনা উপেক্ষা করা, অতিথি বক্তার ক্লাস শেষে অনুমতি ছাড়া ইনস্টিটিউট ত্যাগ করা, মাদক সেবন ইত্যাদি। এ বিষয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। কিন্তু তার উপযুক্ত জবাব তিনি দেননি। প্রশিক্ষণের পরীক্ষা ও অনুশীলনের ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৯.৪৬ নম্বর পেয়ে তিনি অকৃতকার্য হন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। পুলিশের (এসবি) ভেরিফিকেশনে তার মাস্টার্সের সার্টিফিকেট জাল বলে প্রমাণিত হয়। জাল সার্টিফিকেট নিয়ে তিনি এনএসআইতে যোগদান করেন। গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে পলাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে এনএসআই ফাইল পাঠিয়েছে।

ড. ইউনূসের নামে মামলা হয় যেভাবে

শেখ হাসিনার নির্দেশে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৬৮টি মামলা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ফৌজদারি আদালতে একটি, দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি এবং বাকি ১৬৬টি মামলা হয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে। মামলাগুলোর মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম সংশ্লিষ্ট মামলা ছিল ৬৪টি, গ্রামীণ কল্যাণ সংক্রান্ত ৬৯টি, গ্রামীণ কমিউনিকেশন সংক্রান্ত ২৫টি ও গ্রামীণ ফিশারিজ সংক্রান্ত ৮টি মামলা।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা, নির্যাতন এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দসহ দেশের বিশিষ্টজনরা বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার হয়রানি বন্ধ হয়নি। ১৮০ জন নোবেল জয়ীসহ বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের বিবৃতিও উপেক্ষিত হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্কের আহ্বানেও সাড়া দেয়নি তৎকালীন সরকার।

ড. ইউনূসকে হয়রানি প্রসঙ্গে তার আইনজীবী

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মামলা দিয়ে যত ধরনের হয়রানি করা যায়, তার কোনোটাই বাদ দেননি শেখ হাসিনা। তাকে আদালত ভবনের লিফট বন্ধ রেখে ৮ তলার উপরেও হেঁটে উঠানো হয়েছে। এমন শাস্তি সম্ভবত আর কেউ পায়নি বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।

ব্যারিস্টার মামুন বলেন, একের পর এক মামলা করে এবং গোয়েন্দা সংস্থা লাগিয়ে ড. ইউনূসকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসা নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনাকে বিতর্কিত করার নীলনকশা হিসেবে এসব মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।

আমার দেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করা, হয়রানি করার ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এনএসআইয়ের তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম জোবায়ের সর্বোচ্চ মহল থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পেয়েছিলেন। তিনি আমিনুল হক পলাশকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে পলাতক। এ বিষয়ে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুনের মন্তব্য জানতে চাইলে আমার দেশকে তিনি বলেন, ড. ইউনূস সাহেবের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর কোনো ভিত্তি বা আইনগত মেরিট ছিল না। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এসব মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা দিয়ে কীভাবে একজন নোবেল লরিয়েটকে হয়রানি করা হয়েছে, সেটা গোটা বিশ্ববাসী দেখেছে। অনেক দেশ ও খ্যতিমান ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার এসব অন্যায্য আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন।

ড. ইউনূস সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার নির্মম শিকার বলে মনে করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে শেখ হাসিনা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সীমাহীন হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। এটি বিশ্বে বিরল ঘটনা।

সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ড. ইউনূসকে হয়রানি করে শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মামলায় ঢাকা কোর্টে অনেক আসামিই যান। কাউকে কোর্টের লোহার খাঁচায় তেমন একটা নেওয়া হয় না। কিন্তু শেখ হাসিনার আদালত ড. ইউনূসকে খাঁচার মধ্যে ঢুকিয়ে অপমানের চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছিলেন।

এনএসআইয়ের বক্তব্য

তিন কর্মকর্তার বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে এনএসআইয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র আমার দেশকে জানান, পলাতক তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। তাদের নানা বেআইনি কার্যক্রম, রাজনৈতিক/শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রম চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। এনএসআইয়ের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং নিয়মশৃঙ্খলা শক্তভাবে প্রতিষ্ঠার সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এনএসআইয়ের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান কর্তৃপক্ষ কাজ করছে এবং এ ব্যাপারে বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ খুবই আন্তরিক।

Exit mobile version