বিদেশি মুদ্রার সংকটে ধুঁকছে পাকিস্তান। ১৩ থেকে ১৫ দিনের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বিদেশি মুদ্রা থাকছে না তাদের রিজার্ভে। এ কারণে সীমিত করতে হচ্ছে আমদানি, যার প্রভাব পড়েছে দেশটির ওষুধ খাতেও।
ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের অভাবে পাকিস্তানের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালে ইনসুলিন ও ডিসপ্রিনের মতো ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এমনকি মাথাব্যথার ওষুধও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না।
পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে এনডিটিভি জানাচ্ছে, সরকারি হাসপাতালগুলোয় মাত্র ১২ দিনের ওষুধ মজুত আছে। তারপর কী হবে, কেউ-ই তা জানে না। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ওষুধ কোম্পানিগুলোকে স্বল্প মূল্যে আরও বেশি পরিমাণ ওষুধ তৈরির নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু ওষুধ কোম্পানিগুলোর সংগঠনের অভিযোগ, ওষুধ তৈরির কাঁচামাল তাদের হাতে নেই।
যতক্ষণ না কাঁচামাল হাতে আসছে, ততক্ষণ চাহিদামাফিক উৎপাদন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে। পাকিস্তানে তৈরি ওষুধের ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল আসে অন্যান্য দেশ থেকে, যার মূল উৎস ভারত ও চীন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পাকিস্তানের রিজার্ভ তলানিতে এসে ঠেকেছে।
এ কারণে আমদানি করার মতো প্রয়োজনীয় ডলার তাদের হাতে নেই। ওষুধ কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, ব্যাংকগুলোও ঋণ দিতে চাইছে না। তা ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বেড়েছে পাকিস্তানে। মানুষের পক্ষে তা কেনাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (পিএমএ) দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু পিএমএর অভিযোগ, সরকার ওষুধঘাটতির হিসাব কষতে গিয়ে সময় নষ্ট করে ফেলছে। কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এর আগে জানুয়ারির প্রথম দিকে পাকিস্তান ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিপিএমএ) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারুক বুখারি বলেছিলেন, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ওষুধ উৎপাদনের গতি কমে গেছে। আমদানি সীমিত করার নীতি আরও চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ থাকলে দেশে ভয়াবহ ওষুধসংকট হতে পারে বলে তিনি তখন হুঁশিয়ারি করে দিয়েছিলেন।
এদিকে সংকট নিরসনে সীমান্ত খুলে দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ওষুধের কাঁচামাল কেনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে পিএমএ।
পরিস্থিতি এতটা সঙিন যে চিকিৎসকেরা আপাতত এখনই না করলে নয়—এমন রোগ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের দিন পিছিয়ে দিচ্ছেন। অনেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখাও বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
সংকট মোকাবিলা
এদিকে সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেইল আউট চেয়েছে। কিন্তু ৬৫০ কোটি ডলার ঋণের এই আলোচনা তেমন একটা অগ্রসর হয়নি। গত মাসে আইএমএফের প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফরে এলেও কর্মী পর্যায়ের ঐকমত্য হয়নি।
তারা আগামী মাসে আবারও আসবে। এদিকে ইকোনমিক টাইমসের খবরে বরা হয়েছে, অর্থনৈতিক দুর্দশা মোকাবিলায় বারবার আইএমএফের শরণাপন্ন হচ্ছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি গত ৭৫ বছরে ২৩ বার আইএমএফের কাছে বেইল আউট সহায়তা নিয়েছে। তারা বলছে, এ যেন দাতা সংস্থাটির ‘কঠিন ভালোবাসার’ প্রতি পাকিস্তানের ‘আদি-অকৃত্রিম আসক্তি’।
বেইল আউট নেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান শীর্ষে, আর ২১ বার বেইল আউট প্যাকেজ নেওয়ায় দ্বিতীয় স্থানে আছে আর্জেন্টিনা। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মুর্তজা সায়িদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, আমরাই আইএমএফের সবচেয়ে নিয়মিত গ্রাহক।’
পাকিস্তানের গণমাধ্যম জিও নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় সায়িদ ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা দিয়েছেন। বলেন, ‘আমরা ও ভারত একই সময়ে একই সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু এই সময়ে ভারত মাত্র সাতবার আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। আর ১৯৯১ সালে মনমোহন সিংয়ের যুগান্তকারী সংস্কারের পর একবারও যায়নি।’
পাকিস্তানের রিজার্ভ এখন ৩০০ কোটি ডলার। কিন্তু আগামী কয়েক বছরে তাকে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পাকিস্তান নিশ্চিতভাবেই ঋণ খেলাপ করবে। এমনকি দেউলিয়াও হয়ে যেতে পারে। এদিকে কিছুদিন আগে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তান ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেছে।