Site icon The Bangladesh Chronicle

এক দিনে ২৪ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ধার দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

 দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট গভীর হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বুধবার সংকটে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক রেকর্ড ২৪ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ধার নিয়েছে। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা ধার নেয়ার রেকর্ড ছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমানতের ধীর প্রবৃদ্ধি, ঋণ আদায়ের ধীর গতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা উঠে আসছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন সরাসরি সরকারকে ঋণ দিচ্ছে না। সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে, যার কারণে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার সাত দিন মেয়াদি রেপোর বিপরীতে ২৫টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়েছে ১২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা, যার সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এক দিন মেয়াদি রেপোর বিপরীতে একটি ব্যাংক ৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা নিয়েছে, যার সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শরিয়াহভিত্তিক ছয়টি ব্যাংক ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ১৪ দিন মেয়াদি ধার করেছে ৪ হাজার ২৭ কোটি টাকা। ‘স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি’ হিসেবে একটি ব্যাংক ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এক দিনের জন্য নিয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। আর এক দিন মেয়াদি তারল্য সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংকে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে নিয়েছে ৭ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, সরকারের বিল ও বন্ডে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ছে। আবার ডলার বিক্রির বিপরীতে টাকা উঠে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক মানি সাপ্লাই কমাতে পলিসি রেট বাড়িয়েছে, যার কারণে মার্কেটে তারল্য ঘাটতি তৈরি হবে। সেটাই হচ্ছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার না দিলে সংকট বাড়বে। তাছাড়া একবারে সব দিক দিয়ে সংকোচন করা যায় না, যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ধার দেয়া অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক কলমানিতে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কলমানিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যার গড় সুদ হার ছিল ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর আগে গত বুধবার এ ধারের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, যার গড় সুদহার ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জুনে গড় কলমানি রেট ছিল ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ, জুলাইয়ে তা কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ৪২ শতাংশে দাঁড়ায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূলনীতি সুদহার বা পলিসি রেট বাড়ানোর এক দিন পর অক্টোবরে এই কলমানি রেট বেড়ে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ হয়ে যায়। ডিসেম্বরের শুরুতে কলমানি রেট ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশে গিয়ে ঠেকে।

মূল্যস্ফীতি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছর পলিসি রেট বা রেপো রেটÑযে সুদহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ধার দেয়, তা কয়েক দফায় বাড়িয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর ফান্ড কস্ট বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে কলমানি বাজারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ পলিসি রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটছে। এছাড়া রিভার্স রেপো (বর্তমান নাম স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি বা এসডিএফ) নিম্নসীমার সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়। একই সঙ্গে নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্পেশাল রেপো বা এসএলএফের (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় সংকটে পড়া ব্যাংক উচ্চ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পলিসি রেট বাড়ার রিফ্লেকশন হচ্ছে কল মানি মার্কেটে। এখন টাকা আরও টাইট হয়ে যাবে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি ঋণ প্রবাহ আরও কমবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কল মানি মার্কেট ছিল ব্যাংকগুলোর জন্য সহজে প্রয়োজন মেটানোর, অর্থাৎ তারল্য ব্যবস্থাপনার একটা মাধ্যম। এখানে রেট বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, ব্যাংকগুলো আরও বেশি সুদে ডিপোজিট সংগ্রহের দিকে ঝুঁকবে।’

শেয়ার বিজ

Exit mobile version