বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানিসহ সব পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এক দিনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। রমজানের আগে ৯ মার্চ শনিবার দলটি সারা দেশে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ করবে।
আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রোজার আগে দ্রব্যমূল্যের কারসাজিতে সরকারি সিন্ডিকেটের সদস্যেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সবজির ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজসহ সব জিনিসের দাম এখন আকাশচুম্বী। পরিকল্পিতভাবে নানা অঘটন ঘটিয়ে এরই মধ্যে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। শুল্ক কমানোর পর দাম তো কমেইনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেড়েছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে শিল্পমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, ‘খেজুরের বদলে বরই দিয়ে ইফতার করুন, আঙুর-খেজুর লাগবে কেন?’ এ ধরনের বক্তব্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতি রসিকতা। ডামি সরকারের মন্ত্রীরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মশকরা করছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গত ১৪ বছরে বিদ্যুতের দাম ১৩ বার বাড়িয়ে ১৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত ১৪ বছরে ১ লাখ ৪ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। গত ২০২২-২৩ সালে বিদ্যুৎ খাতে সরকার ৪৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ করেছিল, যার বড় অংশ ব্যয় হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জে।
রুহুল কবির রিজভী উল্লেখ করেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত বছর সংসদে বলেছেন, গত ১৪ বছরে ৮২টি বেসরকারি এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ মোট ১ লাখ ০৪ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্যাপাসিটি চার্জসংক্রান্ত অব্যবস্থাপনা, লুটপাট ও বিদ্যুৎ খাতে পুকুরচুরির কারণে সরকার বিদ্যুতে বিপুল ভর্তুকি দিতে বাধ্য হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে লোপাট করে আইনের হাত থেকে বাঁচতে ‘ইনডেমনিটি আইন’ করেছে।
রিজভী বলেন, কমিশন ও লুটপাটের জন্য সরকার তুলনামূলক কম টাকায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে কয়লা, তেল, গ্যাসসহ পরিবেশদূষণকারী ফুয়েল ব্যবহার করে দেশের পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। কয়লা, গ্যাস, তেল—ইত্যাদি আমদানির নামে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করছে। গ্যাস–সংকটে দেশের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িঘরে চুলা জ্বলছে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রমজান মাসে ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে সাধারণ মানুষ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খানকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা জানানো হয়। হাফিজ উদ্দিনকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ‘ফরমায়েশি’ রায়ে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
Prothom Alo