Site icon The Bangladesh Chronicle

এক কোটি দরিদ্র মানুষকে ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি

BOLOGNA, ITALY - JULY 08: Bangladeshi economist Muhammad Yunus Nobel Prize in 2006 for Peace receives the honorary cityzenship of Bologna at Bologna's City Hall on July 8, 2015 in Bologna, Italy. (Photo by Roberto Serra - Iguana Press/Getty Images)

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস  আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি এক কোটি গরিব মানুষকে একটি ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি। আমাকে যখন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেয়া হয়, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ মালিকানা আমাদের সদস্যদের কাছে ছিল। সুদ যদি গ্রহণ করে থাকেন, তারাই গ্রহণ করেছেন। আমি একজন কর্মচারী মাত্র, সেটা আপনারা জানতেন। আমি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক ছিলাম না কখনো। গতকাল দুপুরে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ জামিন শুনানি শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।
এর আগে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়েরকৃত মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। আসামিপক্ষের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ২রা জুন নতুন দিন ধার্য করেন। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এসএম মিজানুর রহমান।

এ মামলার অপর আসামি গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, এডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, এডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম এবং গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসানেরও জামিন মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া, গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক পারভীন মাহমুদের পাসপোর্ট সাময়িক সময়ের জন্য ফেরত চান তার আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম অনি।

এক্ষেত্রে দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল  আদালতকে বলেন, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। পাসপোর্ট ফেরত পেতে পারেন। পরে আদালত পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন।

আমি এক কোটি গরিব মানুষকে একটি ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি:
সকাল ১১টা ১৬ মিনিটে ঢাকা জজ কোর্টে প্রবেশ করেন ড. ইউনূস। জামিন আবেদনের শুনাসি শেষে আদালত থেকে বেড়িয়ে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি এক কোটি গরিব মানুষকে একটি ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি। আমাকে যখন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেয়া হয়, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ মালিকানা আমাদের সদস্যদের কাছে ছিল। সুদ যদি গ্রহণ করে থাকেন, তারাই গ্রহণ করেছেন। আমি একজন কর্মচারী মাত্র, সেটা আপনারা জানতেন। আমি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক ছিলাম না কখনো। বলেন, আজকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে দুর্নীতির। আমি জালিয়াতি করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি, অর্থ পাচার করেছি এ রকম বহু ভয়াবহ শব্দ আমার অপরাধ হিসেবে বলা হয়েছে। আপনারা আমাকে বহুদিন থেকে চেনেন, এ অপরাধগুলো আমার গায়ে লাগানোর মতো অপরাধ কিনা আপনারাই বিবেচনা করবেন। আগে যে রকম আপনারা বিবেচনা করেছেন।

সাংবাদিকদের এক পা্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটা আমার একার বক্তব্য নেয়ার তো দরকার নাই! দেশের মানুষের কাছে যান, তারা বলবে আদালত কি নিয়ন্ত্রিত না নিজের ইচ্ছায় চলে। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি তো খালি আদালত থেকে আদালতে যাচ্ছি, আমাকে বলা হচ্ছে আমি জোচ্চোর, আমি জালিয়াত, আমি অর্থ আত্মসাৎকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। তথ্য সব আপনাদের কাছে আছে, আপনারা বিচার করে বলেন, আমাকে দেখলে কি মনে হয়, আমি জোচ্চুরি করার জন্য এই ব্যবসায় নেমেছি?

২০২৩ সালের ৩০শে মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থার উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এরপর ২০২৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। দুদকের মামলায় আসামি ছিলেন ১৩ জন। চার্জশিটে নতুন একজন আসামির নাম যুক্ত হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

manabzamin

Exit mobile version