- মো. মাঈন উদ্দীন
- ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৪৫
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য, মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব কাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংক খাতের সুষম কাঠামো, রেমিট্যান্স আহরণসহ ঋণ বিতরণ ও আদায়ের বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে। টেকসই অর্থনীতি নানা ঝুঁকির মধ্যে উচ্চ মাত্রায় খেলাপী ঋণ, ব্যাংকগুলোর মূলধনের অপর্যাপ্ততা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রবণতা বাণিজ্য ঋণের প্রবাহ হ্রাসের মতো বিষয়গুলোও রয়েছে। বর্তমানে নৃত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যে পরিমাণে বাড়ছে তাতে মানুষকে খাবারের তালিকা থেকে মাছ, গোশতসহ বিভিন্ন আমিষ জাতীয় খাবার বাদ দিতে হচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনা দুর্বলতায় এখনো মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি।
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতির তিনটি দিক প্রাসঙ্গিক তা হচ্ছে : আন্তর্জাতিক বাজারের সুদ হার কোন দিকে যাচ্ছে, পণ্য বাজারের মূল্য কোন দিকে যাচ্ছে, বিশেষ করে জ্বালানি তেল, সার, লোহা, সিমেন্ট ও শিল্পের কাঁচামাল। তৃতীয় বিষয় হচ্ছে ডলারের বিনিময় হার। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আমাদের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক নয়। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার হলে আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে ডলারের সরবরাহ বাড়বে। সুদ হার ও বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে দোদুল্যতার কারণে রফতানি ও রেমিট্যান্স দুই মাধ্যমে ডলারের সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের পুঁজি বাজারেও বিনিয়োগকারীরা আস্থার সঙ্কটে ভুগছে। ব্যাংক খাতে রয়েছে তারল্য সঙ্কট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায় তারল্য সঙ্কটে দেশে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারের (কলমানি) দৈনন্দিন লেনদেন ৫-৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এদিকে মেয়াদি ধারের সুদের হারও উঠেছে ৭.৫ শতাংশ। তারপরও কলমানি বাজারে চাহিদা অনুযায়ী তারল্য সংস্থানও হচ্ছে না। আমাদের অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সেসব সম্ভাবনা অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। আমরা যদি কমপক্ষে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ খাত বিশেষ করে উৎপাদন বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে অর্থাৎ রেমিট্যান্স আহরণ জোরদার, রফতানি আয় বৃদ্ধি সঠিক উপায়ে প্রয়োজনীয় খাতে বিনিয়োগ প্রদান ও খেলাপী ঋণ আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারি; তাহলে অর্থনীতির বর্তমান সঙ্কটকাল উত্তরণ সহজ হতে পারে।
দেশে প্রচুর সম্পদ রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যা হলো বড় সম্পদ, দেশের কৃষি জমি উর্বর। শিল্পে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। শুধু পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভর করে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে। তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বের দ্বিতীয় হলেও এখনো এর কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। শ্রমিকের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। অর্থনীতিতে ঘটেছে অনেক রূপান্তর। গ্রামীণ অর্থনীতি শুধু শস্য উৎপাদন নয়, হাঁস-মুরগিসহ নানা পেশার বিস্তৃতি ঘটেছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও গ্রামীণ অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের অর্থনীতির আকার ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার (৯ হাজার কোটি)। বর্তমানে এর পরিমাণ ৪৬৫ বিলিয়ন (৪৬ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার। কিন্তু আয় ও সম্পদের বৈষম্য দিন দিন বেড়ে চলেছে। রয়েছে সক্ষমতার অভাব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, সুশাসন এর অভাব। ৫০ শতাংশ লোক এখনো ব্যাংকিং আওতায় আসেনি, পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতে রয়েছে নানা ধরনের সমস্যা। আমাদের সক্ষমতা ও সু-শাসন নিশ্চিত করতে হবে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কটের ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও লেগেছে। ফলে চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব হবে না। স্থিতিশীল অর্থনীতি বজায় রাখা ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি উৎপাদন বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি সহনীয় করতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত না রাখলে সঙ্কট আরো ভয়াবহ হতে পারে। ধান উৎপাদনসহ কৃষি সামগ্রিক ও সবজি উৎপাদন বাড়াতে হবে। অন্য দিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি সঙ্কট, খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। আমাদের যে প্রচুর আবাদি জমি আছে তা সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি অনাবাদি জমি আবাদযোগ্য করে উৎপাদনে কাজে লাগাতে হবে। কৃষকরা কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য পায় না। কৃষিতে মুনাফা কম হওয়ায় নতুন প্রজন্ম এ খাতে আসতে চায় না। কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজন ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত, যাতে কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।
কৃষির পাশাপাশি শিল্প উৎপাদনে জোর দিতে হবে। শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা দূর করতে হবে। দেশের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হলে বাজারব্যবস্থার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। বাজারের কালোবাজারির মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দোরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। কারণ বাজার পণ্যের মূল্য এত বেশি যে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় বাড়ছে পণ্যের দাম। বিশেষ করে চাল, ডাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও স্থানীয় বাজারের এর কোনো প্রভাব নেই। অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত পণ্যের দামও কারণ ছাড়া ঊর্ধ্বমুখী। টেকসই অর্থনীতির জন্য তাই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখিতা দূর করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা উচিত। রেমিট্যান্স আহরণে প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবেশ করানো, হুন্ডি রোধে বিকল্প ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, প্রশিক্ষিত শ্রমিক বিদেশে পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতে হবে।
বৈদেশিক আয় দেশের অগ্রগতি প্রশ্নে জরুরি। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম (জুলাই-মার্চ) ৯ মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৬৩০ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে গত বছরের তুলনায় ৭৪ কোটি ডলার বেশি এসেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বের করতে হবে। বিদেশে গমনেচ্ছুদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে কয়টি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য। ফলে এ খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মার্চ ২০২৩ মাসে বৈধ পথে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু মোট রফতানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বিষয়টি আমলে নেয়া উচিত। দেশের রফতানি খাতে ৮৫ শতাংশ অবদান রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। এ পর্যন্ত বৃহদায়তন রফতানির সক্ষমতা গড়ে উঠেছে শুধু শিল্পটিতে। বৈশ্বিক পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশে^ দ্বিতীয় হলেও রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশ পোশাক পণ্যে কাঙ্ক্ষিত দাম পায় না। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের মানসিকতা ও নৈতিকতা পরিবর্তনে কাজ করতে হবে। অনুসন্ধান করতে হবে বড় ব্র্যান্ডগুলোর কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না। বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। এজন্য গুণগত মানও কানেক্টিভিটি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে মোট রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৩২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকে এসেছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। যা মোট রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশ। পাট ও পাটজাত দ্রব্যের অবদান ছিল ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয় বাংলাদেশের রফতানির বৈচিত্র্য আনতে হলে অন্যান্য পণ্য সংশ্লিষ্ট ট্যারিফ কাঠামোর পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি সেবা খাত ও বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো উদারীকরণনীতি গ্রহণ করতে হবে।
দেশের রফতানি খাত এককভাবে একটি পণ্যে (পোশাক খাত) কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়া সার্বিক অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রফতানি বৈচিত্র্যায়ণ জরুরি। রফতানি বাজারের বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে বৈচিত্র্যায়ণের পাশাপাশি কিছু নীতিগত সংস্কার প্রয়োজন। পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া শিল্প, ফুটওয়্যার এমনকি ফিশিংয়ের মতো খাতগুলোও রফতানিতে বেশ অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। টেকসই অর্থনীতি ও সঙ্কট উত্তরণে প্রয়োজন সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় খাতে ঋণ বিতরণ। প্রয়োজনীয় খাতে বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এসডিজি) যেসব সূচক নির্ধারণ করেছে তা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
বর্তমানে বৈশ্বিক সঙ্কটে বিনিয়োগকারীরা বাড়তি ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। সেজন্য মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমে এসেছে। এলসিও কমে গেছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালে প্রথম ৬ মাসে পুঞ্জীভূত (এফডিআই) কমেছে পাঁচ শতাংশ। ঋণপত্র খোলা কমেছে ৬৭ শতাংশ। শিল্প মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমতে থাকলে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি পরিষেবাগুলো আরো উন্নত ও ডিজিটালাইজ করা উচিৎ। আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা বাড়াতে নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির গুরুত্বারোপ করতে হবে। দেশের সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যার পরিমাণ ৪১০ কোটি ডলার। বিড়ার তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ২৫৬ কোটি ডলার। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, তৈরি পোশাক, কৃষি, আইসিটি, অবকাঠামো ও প্রকৌশলী সেবা, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সেবা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাসহ মোট ৯টি খাতকে সম্ভাবনাময়ী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা থাকলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং কানেক্টিভিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে।
অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ খেলাপী ঋণ আদায়। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপী ঋণ কমাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছে না। এজন্য দেশের বণিক শ্রেণীর সহায়তা ও ঋণ আদায়ে জোর তাগাদার পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ২০২০ সালে (৩১-১২-২০২০) খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর ২০২২ এ তা কমে দাঁড়ায় এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ- কিছু ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের গড়িমশি ও আইনি কাঠামোর দুর্বলতা। বর্তমানে ব্যাংক খাতকে মজবুত কাঠামোর মধ্যে আনতে হলে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে, খেলাপিসহ অবলোপনকৃত ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রয়োজন বৈষম্য কমানো। বৈষম্য কমাতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উদ্ভাবনী কর্ম পরিকল্পনা নিতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দক্ষতা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণকে মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে প্রযুক্তি উৎকর্ষতার ব্যবহার বাড়াতে হবে। বর্তমানে যে ডলার সঙ্কট তার জন্য শুধু আমদানি পণ্যে মূল্য বৃদ্ধি নয় বরং অর্থ পাচারও অনেকাংশে দায়ী। আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং যাতে না হয় সেজন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। কর জিডিপির অনুপাত কমপক্ষে ২২ শতাংশ থাকা উচিত। এজন্য কর কাঠামো সম্প্রসারণ করতে হবে। দুর্নীতি, অনিয়ম দূর করতে হবে। মূলত দেশের উন্নয়ন স্থিতিশীলতায় বাজেট বাস্তবায়ন ও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের শিল্প ও বাণিজ্য শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ সব খাতে বরাদ্দ থাকে বাজেটে। বাজেট বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতির ভালোমন্দ। বাস্তবায়ন নির্ভর করে সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপর।
লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক
main706@gmail.com