Site icon The Bangladesh Chronicle

উন্নয়ন সহযোগীরা ইতিবাচক, এক হাজার কোটি ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা

উন্নয়ন সহযোগীরা ইতিবাচক, এক হাজার কোটি ডলার পাওয়ার সম্ভাবনা

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এসব বৈঠকে তিনি ভালো অঙ্কের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে জুম প্ল্যাটফর্মে একটি বৈঠক হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, চীন প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররাও অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবার কাছ থেকে মোট ১ হাজার ২০ কোটি মার্কিন ডলার পাওয়া যেতে পারে বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাথিউ এ ভারগিসের নেতৃত্বে একটি দল সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার এক মাসের মাথায় বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়ে বিশ্বব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যা মূলত জ্বালানি খাতে খরচ করা হবে। ২ কিস্তিতে ৫০ কোটি ডলার করে এ অর্থ চেয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

এ ছাড়া আর্থিক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা দিতে পারে বিশ্বব্যাংকের। এই ঋণ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদে অনুমোদিত হওয়ার কথা। তবে ঋণ পেতে তিনটি শর্ত পালন করতে হবে বাংলাদেশকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খেলাপি ঋণের নতুন সংজ্ঞায়ন ও নবগঠিত টাস্কফোর্সের নিরীক্ষা কার্যক্রমের বিবরণী বিশ্বব্যাংকের কাছে পেশ করা—এই তিন শর্ত মানতে হবে বাংলাদেশকে।

গতকালের বৈঠক শেষে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সোজাসুজি বলা হয়েছে, সহায়তার জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হবে, সেগুলো যেন বাস্তবায়নযোগ্য হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় তারা এমন শর্ত দেয়, যেগুলো ঠিক বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এর ফলে সহায়তাও আটকে যায়, তা যেন না হয়। সে জন্য বিশ্বব্যাংককে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, এমন শর্ত দেওয়া হোক, যেগুলো বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে পারবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার কার্যক্রমের জন্য সহায়তা দরকার। তাৎক্ষণিক বাজেট সহায়তাও প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দরকার কারিগরি সহায়তা। তারল্য সহায়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আলোচনা ‘মোটামুটি’ ইতিবাচক হয়েছে। তাঁরা উন্মুক্ত মন নিয়েই আলোচনা করতে এসেছিলেন, আরও আলোচনা হবে। তবে আলোচনার মূল নজর ছিল সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে।

বাজেট সহায়তা প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ বছর আমরা বাজেট সহায়তা প্রত্যাশা করছি। এর আওতায় কী প্রকল্প হবে, ইতিমধ্যে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে আইএসডিবির রিজিওনাল হাব ম্যানেজার নাসিস সোলাইমানের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি)। বিভিন্ন খাতের জন্য এ অর্থ দেবে তারা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে এ ঋণ দেওয়া হবে। প্রান্তিক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণেও ঋণের অর্থ ব্যয় করা যাবে। এ ছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ঋণ দেবে তারা।

এদিকে গত রোববার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিংয়ের নেতৃত্বাধীন একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এডিবি। সংস্থাটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য দেবে ৫০ কোটি ডলার। এটা পাওয়া যাবে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে। এর বাইরে জ্বালানি খাতের উন্নয়নেও এডিবির কাছে ১০০ কোটি ডলার চেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটি চলমান প্রকল্পগুলোও অব্যাহত রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। রোববার সে দেশের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে। স্বাস্থ্য, সুশাসন, মানবিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি এবং মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এ অর্থ কাজে লাগানো হবে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির আলোকে এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে আইএমএফের কাছ থেকে বাড়তি ৩০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী সরকার। আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা ১ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের জানান, বাড়তি সহায়তা অনুমোদনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমানে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা হবে।

যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন ও জাপানের কাছ থেকে বাড়তি বৈদেশিক সাহায্যের আশ্বাস না মিললেও অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা বলে গেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে তাঁরা আগ্রহী এবং তাঁদের দেশের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত থাকবে।

prothom alo

Exit mobile version