আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বেশ কিছুসংখ্যক নারী। এরা রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। নির্বাচনে প্রার্থীর ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতেও উত্তরাধিকার সূত্রে আসা অনেক নারী রয়েছেন।
তারাও আসন্ন নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য কাজ করছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইতোমধ্যেই তারা ভোট চাইছেন দাঁড়িপাল্লায়। তবে জামায়াত থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনীতিতেও এসেছেন অনেক নারী। তারাও প্রার্থী হবেন নির্বাচনে। তবে এই নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসেননি, তারা এসেছেন জুলাই-বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়ে। এছাড়া জাতীয় পার্টিসহ অন্য দল থেকেও আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। এই নারীরাও রাজনীতিতে এসেছেন, হয় পিতা কিংবা স্বামীর পরিচয়ে।
রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র নতুন কিছু নয়। উপমহাদেশের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে এর অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। যারাই রাজনীতিতে সফল হয়েছেন, তারা পিতৃতান্ত্রিক বা পরিবারতান্ত্রিক পরিচয়েই হয়েছেন। এর বাইরে সফল হয়েছেন এমন সংখ্যা খুবই বিরল। যেমন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক ও চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টো। তেমনি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট কোরাজন একুইনো। এক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম ইন্দিরা গান্ধী। রাজনীতিতে তার পরিচয় শুধু উত্তরাধিকার সূত্রেই নয়, তিনি বাবা জওহরলাল নেহরুর মেয়ে হওয়ার সুবাদে দীর্ঘ সময় রাজনীতি শেখা বা চর্চা করার সুযোগ পেয়েছেন। অক্সফোর্ডে পড়েছেন এবং উপমহাদেশের রাজনীতিতে একজন দক্ষ রাজনীতিক হয়ে উঠেছিলেন। বেনজীর ভুট্টোর বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭২ সালে পাকিস্তান-ভারত সিমলা চুক্তি করার সময় মেয়েকে সঙ্গে করে ভারতের সিমলায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনিও রাজনীতিতে বাবার সান্নিধ্য পেয়েছেন।
বাংলাদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ব্যতিক্রম। স্বামীর পরিচয়সূত্রে রাজনীতিতে এলেও তিনি জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকাকালে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে তিনি রাজনীতির মাঠে এসেছেন। রাজপথে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন করার মাধ্যমে। তিনি সক্রিয় কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপিকেও শক্তিশালী দলে পরিণত করেছেন। এর ফলে তিনি রাজনীতিতে নিজের একটি স্বকীয় পরিচয় দাঁড় করাতে সক্ষম হন। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতি আলোকিত এবং আলোড়িত করেন। অন্যদিকে ভারতে পলাতক শেখ হাসিনা তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজনীতিতে আসেন এবং ক্ষমতা লাভ করেন। তিনি যতদিন রাজনীতি ও ক্ষমতায় ছিলেন, বাবার রাজনীতিকে পুঁজি করেই ছিলেন। বাবার জয়গান গেয়েই তিনি বছরের পর বছর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তরাধিকার ও পারিবারিকসূত্রে অনেক নারী এসেছেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যারা এসেছেন এবং আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন—
প্রবীণ রাজনীতিক ও ভাষাসংগ্রামী অলি আহাদের মেয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ সরাইল আসন থেকে নির্বাচন করতে চান।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব এবং সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ। তিনি ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রয়াত উপদেষ্টা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। তিনি হাটহাজারী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তার বাবাও এই আসন থেকে চারবার এমপি হয়েছিলেন।
বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী হারুণার রশীদ খান মুন্নুর বড় মেয়ে আফরোজা খানম রিতা মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের মেয়ে সালিমা তালুকদার আরুনী জামালপুর-৪ থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমানের মেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক পরামর্শ কমিটির বিশেষ সহকারী ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলও মনোনয়ন চাইছেন। বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা সিলেট-২ থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। এছাড়া প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি স্বামীর আসন ঢাকা থেকে ভোট করতে চান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের জন্য মনোনয়ন চাইছেন ঢাকা-৯ আসন থেকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান তার মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী মাহরীন খানের জন্য নরসিংদীর একটি আসনে মনোনয়ন চাইছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) থেকে নির্বাচন করবেন, তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ কক্সবাজার-১ থেকে নির্বাচন করতে চান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নির্বাচনি এলাকা সিরাজগঞ্জ-২, তিনি ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মামলার কারণে অংশ নিতে পারেননি। সেই সময়ে তার সহধর্মিণী রুমানা মাহমুদ এই আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। তাই টুকুর নিজের আসন নিশ্চিত হলে নিজের সহধর্মিণীর জন্য এবার তিনি আরো একটি আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন।
নরসিংদী-১ আসনের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। তার সহধর্মিণী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা। তিনি মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি ঢাকার যে কোনো একটি আসনে মনোনয়ন চাইছেন।
আওয়ামী লীগেরও অনেক নারী রাজনীতিবিদ আছেন যারা বাবা বা স্বামীর উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে এসেছেন। কিন্তু দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় সম্ভবত তারা এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের ঢাকায় উত্তরা থেকে প্রার্থী হবেন।
ভারতের জওহরলাল নেহরুর কথা আগেই উল্লেখ করেছি। নেহরু ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অগ্রণী ব্যক্তিত্ব, যিনি পরবর্তীকালে ভারতীয় অধিরাজ্য ও পরে প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার পর দলে নেহরু পরিবারের আধিপত্য ছিল, যার মধ্যে ছিলেন তার মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী এবং ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে রাজীব গান্ধী। একইভাবে পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজীর ভুট্টো দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ঠিক একইভাবে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পিতংতার্ন সিনাওয়াত্রাও স্বাদ পান ক্ষমতার।
রাজনীতিতে নারীর সংখ্যা বাড়লে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ২০২১ সালের কোলোরাডো বোলডার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সংসদে নারীরা প্রভাবশালী হলে সাধারণত দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ বাড়ে। একইভাবে ২০২০ সালের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোর সংসদে নারীদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বৃদ্ধি এবং শিশু মৃত্যুহার হ্রাসের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার কারটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সুপারিশ করেছিলেন, যেসব সংসদে নারীর সংখ্যা বেশি, সেসব সংসদ শক্তিশালী জলবায়ু নীতিমালা তৈরি করতে পারে। তবে মার্কিন থিংক ট্যাঙ্ক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (সিএফআর) উইমেন্স পাওয়ার ইনডেক্সের নোয়েল জেমস সতর্ক করে বলেন যে, নারীদের নির্বাচিত করাই এই ফলাফলের নিশ্চয়তা দেয় না। তার যুক্তিতে, নারীরা কোনো সমজাতীয় গোষ্ঠী না– ফলে সবাই লিঙ্গ সমতা, শান্তি বা সহযোগিতার পক্ষে সমর্থন করবে না। তবে পরিবারতন্ত্র থেকে আসা এই নারী নেতৃত্ব ইতিবাচক রাজনীতির ধারা তৈরি করে রেখে যেতে সক্ষম হলে ভবিষ্যতে এই ধারার বাইরে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়তে পারে।
এদিকে, উইমেন্স পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৯৪৬ সাল থেকে বিশ্বের ৮০টি দেশের রাষ্ট্রপতি বা সরকার প্রধান নারী ছিলেন, যা মোট দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ। ১৯৬০ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের আগ পর্যন্ত রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের সবাই ছিলেন শাসকগোষ্ঠীর কেউ যারা উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা পেয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল চেঞ্জ ডেটা ল্যাবের প্রকল্প প্রধান বাস্টিয়ান হের বলেন, তারপর থেকে আরো অনেক দেশ তাদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নারীদের পেয়েছে। এটি এমন একটি প্রবণতা যা মূলত গণতন্ত্র দ্বারা চালিত। তবে, সর্বোচ্চ পদের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা এখনো অনেক কম। প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক পদগুলো পুরুষরা দখল করে আছেন।
আফরোজা খানম
বাবা বিএনপির সাবেক এমপি হারুণার রশিদ খান মুন্নু। বাবার পথ ধরে তিনিও মানিকগঞ্জের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী বাবার মেয়ে হওয়ার দরুন তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন, মানুষের উপকার করতে হলে প্রয়োজন সততা। তিনি সৎ থেকে মানুষের উপকার করে যেতে চান।
শামা ওবায়েদ
রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ রাজনীতির পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। তিনি ২০০৮ সালে ফরিদপুর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। বর্তমানে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। বাবার পরিচয়ে পরিচিত হলেও তিনি নিজের নেতৃত্বগুণে এগিয়ে যাচ্ছেন। সংসার, ব্যবসার পাশাপাশি বৈশ্বিক অঙ্গনে বিএনপির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।
ফারজানা শারমিন পুতুল
উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসেন নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও প্রয়াত ফজলুল রহমান পটল তার বাবা।
তিনি আমার দেশকে জানান, নিজের দায়বদ্ধতা থেকে রাজনীতিতে আসেন। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পেছনে পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। বাবার শূন্যস্থান পূরণ এখন তার ইচ্ছা। তবে সেটি তিনি করতে চান নিজ যোগ্যতায়।
নিপুণ রায় চৌধুরী
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তার বাবা নিতাই রায় চৌধুরী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। শ্বশুর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের এ অগ্রসৈনিক ঢাকা-৩ আসনে নানা জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছেন। নিপুণ এখান থেকেই নির্বাচন করতে চান।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা
রাজনীতিবিদ অলি আহাদের মেয়ে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ২০১৮ সালে তিনি ছিলেন সংরক্ষিত আসনের এমপি। টকশোতে আওয়ামী সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তবে তার সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের কারণে রাজনীতিতে কিছুটা বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন।
বিএনপির এই নেত্রী আমার দেশকে বলেন, পরিবারতন্ত্র থেকে আমি আজকের এই অবস্থানে আসিনি। কারণ আমার বাবার রাজনীতির আদর্শ ও দল ছিল ভিন্ন। বলা যায়, একেবারেই শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। এজন্য আমাকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন ড. সাবিহা ইসলাম রোজীর দৃষ্টিতে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। তিনি আমার দেশকে বলেন, রাজনৈতিক পরিবারের মেয়েরা রাজনীতিতে আসছেন—বিষয়টিকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। এতে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। আমার মনে হয়, বাবা বা স্বামী যদি দক্ষ রাজনীতিবিদ হন, তবে সন্তানরা তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। তারা যদি পরবর্তী সময়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসতে পারেন তবে সমাজ এবং রাষ্ট্র উপকৃত হবে।
নারীদের রাজনীতিতে আসতে উৎসাহ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবিহা ইসলাম আরো বলেন, তারা রাজনীতিতে আসতে যদি উৎসাহবোধ করেন পরিবার থেকে তাদের বাধা না দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। বর্তমানে রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে নারীর সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। জাতীয় সংসদে নারী নেত্রীরা অনেক ক্ষেত্রেই ভালো কাজ করছেন। যতটুকু সম্ভব কাজ করছেন।
জামায়াতের নারী নেত্রী
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের স্ত্রী ডা. আমেনা দলের সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি। তিনি বর্তমানে সিলেট মহানগরী জামায়াতের মহিলা শাখায় কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের স্ত্রী ডা. হাবিবা চৌধুরী সুইট মহিলা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও শূরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া মহিলা জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি নুরুন্নিসা সিদ্দিকার স্বামীও জামায়াতের একজন রোকন বলে জানা গেছে।
জামায়াত নেতাদের পরিবারের এসব সদস্য ছাড়াও মহিলা জামায়াতের নেতাকর্মীরা সারা দেশে দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে জামায়াতের নারী নেতাদের সরাসরি প্রার্থী করার কোনো নজির এ পর্যন্ত নেই। আগামীতে তাদের প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এনসিপির নারী প্রার্থীরা
নাগরিক জাতীয় পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩০ শতাংশ নারী-নেতৃত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৫ জন নারী স্থান পেয়েছেন, যার মধ্যে শীর্ষ ১৯ পদের ৬টিতেই রয়েছেন নারী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী প্রার্থী দিতে চায় এনসিপি। দলটির একজন যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ১৫ শতাংশ নারীকে দলীয় মনোনয়ন
দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে। আমাদের নারী নেত্রীদের দেখে অনেক নারী রাজনীতিতে আগ্রহী হচ্ছেন।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা ঢাকা-১৭ আসন থেকে, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১ বা ঢাকা-৯ আসন থেকে, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া-১ থেকে, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন নওগাঁ-৫ থেকে, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এ ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন—এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনুভা জাবীন, অর্পিতা শ্যামা দেব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নুর, সাগুফতা বুশরা মিশমা, সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) মনজিলা ঝুমা, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাদিয়া ফারজানা দিনা, সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) শিরিন আকতার শেলী, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক দিলশানা পারুল।