১৫ ডিসেম্বর ২০২২
মিনার রশিদ
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কেন গুম হওয়া বিএনপি নেতা সুমনের বাসায় গেলেন, কেন মিরপুরের বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি সৌধে গেলেন না – এটা নিয়ে ওবায়দুল কাদের তার সেই বিশেষ টোন ও ঢং এ বিলাপ করলেন! অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে পুরো আওয়ামীলীগ রং-হেডেড লীগ হয়ে পড়েছে। ওবায়দুল কাদের, হাসান মাহমুদ বা আব্দুর রাজ্জাক এরা সবাই রোগের উপসর্গ। মূল রোগ শেখ হাসিনা।
মানুষের মনে যেই প্রতিক্রিয়া হোক তিনি তার স্বরে বলে যাচ্ছেন, ‘গণতন্ত্র আছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে’। ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ’! “জনগণ ভোটচোরদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেখুন! একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখের ভাষা!” “অনেকে আছে বিএনপিকে তেল মারছে। এত তেল মারা কীসের জন্যে। কত তেল আছে, আমি তাদের দেখব!”
তিনি যে গণতন্ত্রের স্বর্গ প্রতিষ্ঠা করেছেন সেখানে বসে তিনি গণমাধ্যম মালিকদের এবং ব্যবসায়ীদের গতরে কত তেল জমা হয়েছে তা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন! তিনি বিরোধী পক্ষের হাত পা ভাঙার ও পুড়িয়ে দেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দেন। যারা এতদিন তাকে তেল দিয়েছে এদের কেউ কেউ সামান্য উসখুস প্রকাশ করাতে তিনি এই হুমকিটি দিলেন।
বাস্তবে ব্যান্ডিট কুইনের ঢেঁড়া হয়ে পড়লেও কাগজে কলমে এটা এখনো একটি রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রের এখনও একটি সংবিধান আছে। সেই সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ তফসিল ৩ এ বর্ণিত যে কথাগুলি পড়ে শপথ নিয়েছেন তাহলো “এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব।”
স্পষ্টতই তিনি তার সেই শপথ ভঙ্গ করেছেন। আমাদের আদালত বা অন্য কারও হিম্মত নাই তাকে এই ব্যাপারে পাকড়াও করার জন্যে! আজ পুরো রাষ্ট্রটিই যেন এক পাগলীর হাতের দা হয়ে পড়েছে! এই দা নিয়ে কখন কার উপর চড়াও হয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
১৯৯৫ সালেই আমাদের উচ্চ আদালত তাকে Wrong headed person হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। এই সরকারি ঘোষণার পরে ডাক্তারি পরীক্ষা করে উনি যে Wrong headed বা অপ্রকৃতস্থ নন তা প্রমাণের প্রয়োজন ছিল। সেই ডাক্তারি পরীক্ষার পর তা আদালতকে দেখিয়ে আগের রায় সংশোধন করার প্রয়োজন ছিল। ফলে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার এই নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ। জানি না এদেশের আইনজ্ঞ বা সংবিধান বিশেষজ্ঞরা কেন এই ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছেন না?
গত ৪০ বছর যাবত তিনি তার বিকৃত মস্তিষ্কের অনেক নমুনা রেখেছেন। বিশেষ করে তার এক প্রাক্তন বিশেষ সহকারী “আমার ফাঁসি চাই” শিরোনামে যে বই লিখেছেন তার পরতে পরতে এই রং-হেডেড এর বর্ণনা দিয়েছেন। এই বইটিতে ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে কিছু ঘটনার উল্লেখ না থাকলে এই বইটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও অনেক বেড়ে যেত। তারপরেও এই বইটি এবং তার গত চৌদ্দ বছরের আমলনামা তাকে অপ্রকৃতস্থ প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট।
এখন চলুন দেখি, এই ধরণের Wrong headed person দের ফিল্টারিং করার জন্যে কি কি রক্ষাকবজ আমাদের সংবিধানে রয়েছে।
সংবিধানের আর্টিকেল নম্বর ৬৬ এর সাব সেকশন ২(ক) তে লেখা আছে, “কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি কোন উপযুক্ত আদালত তাঁহাকে অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা করেন”
সংবিধানের আর্টিকেল ৫৬(৩) এ লেখা রয়েছে যে সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।
কাজেই একজন রং-হেডেড বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির এমপি হওয়া এবং তারপরে প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সংবিধানে স্পষ্ট নিষেধ রয়েছে। আর অতি দরকারি এই ফিল্টারিংটি না হওয়াতে জাতির ভয়াবহ ক্ষতিটি হয়ে গেছে। এই রং- হেডেড ব্যক্তিটি রাষ্ট্রের মূল তিনটি স্তম্ভ পুরাপুরি ধ্বংস করেছেন। এদেশের বিচার বিভাগ ধ্বংস করা হয়েছে খায়রুল হক, এসকে সিনহা,সামসুদ্দিন মানিকদের মত জঘন্য ব্যক্তিদের হাত ধরে।
লেখক: মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, কলামিস্ট-বুদ্ধিজীবী