ই-পাসপোর্ট নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব
বাংলাদেশে জুলাই মাস থেকে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালুর করার কথা রয়েছে। এ নিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর পাঠকদের অনেকে আরও অনেক তথ্য জানতে চেয়েছেন।
সেসব প্রশ্ন নিয়ে আমরা পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।
সংশোধনের সুযোগ থাকবে কিনা?
প্রচলিত পাসপোর্টে যেভাবে ভুল সংশোধন করা হয়, এক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট ফি ও কাগজপত্র জমা দিয়ে ভুল সংশোধন করা যাবে।
যেহেতু পাসপোর্টের ভেতরে একটি চিপের ভেতর মূল তথ্যগুলো থাকে, তাই সংশোধন হওয়া মাত্র চিপের ভেতরের ও কেন্দ্রীয় তথ্যকেন্দ্রে থাকা তথ্য সংশোধন হয়ে যাবে।
তবে পাসপোর্টের লেখা কোন তথ্য সংশোধন হলে সংশোধনের পর নতুন বই ইস্যু করা হবে।
আরো পড়ুন:
ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে সাতটি তথ্য জেনে রাখুন
র্যাঙ্কিংয়ে দুর্বল বাংলাদেশী পাসপোর্ট- যে অর্থ বহন করে
নানা দেশের পাসপোর্ট নিয়ে ১৩টি অজানা তথ্য
পুলিশ ভেরিফিকেশন কি থাকবে?
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থাটি তুলে দেয়ার একটি সুপারিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। যেহেতু এনআইডি যাচাই করে পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন জরুরি নয় বলে তারা মনে করেন।
তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকবে কি থাকবে না, সেটি নির্ভর করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি বৈঠকে আলোচনা হলেও এখনো কোন সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি।
যেখানে ই-গেট থাকবে না, সেখানে কিভাবে ইমিগ্রেশন হবে?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বলছেন, বিমানবন্দর বা ইমিগ্রেশন পোর্টে ই-গেট থাকবে, যেখান দিয়ে দ্রুততম সময়ে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে সবাই যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রচলিত এমআরপি পাসপোর্টের মতো প্রথমে তথ্য সংবলিত দুইটি পাতা ই-পাসপোর্টে না থাকলেও, শুরুতেই যেখানে পালিমানের তৈরি চিপ এবং অ্যান্টেনা থাকবে, সেখানে পাসপোর্ট বাহকের নাম, নম্বর, জন্মতারিখ ইত্যাদি তথ্য থাকবে। সেই সঙ্গে মেশিন রিডেবল অপশনও থাকবে।
ফলে ই-গেট না থাকলেও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সেটি স্ক্যান করে কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত সকল কাজ করতে পারবেন।
ফলে ই-গেট না থাকলেও যাতায়াতে কোন সমস্যা হবে না। বরং বিমানবন্দরগুলোতে ই-গেটের পাশাপাশি প্রচলিত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাও চালু থাকবে।
ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা কে দেবে?
ই-পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী যেসব বিতর্ক হচ্ছে, তার প্রধান বিষয়টি হচ্ছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি।
যেহেতু এখানে অ্যান্টেনার মাধ্যমে ওয়্যারলেসে তথ্য আদানপ্রদানের ব্যবস্থা আছে, অনেকের আশংকা এর ফলে পাসপোর্ট বাহকের তথ্য তৃতীয় ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়তে পারে। ফলে তার গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
তবে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বলছেন, ”এখানে নিরাপত্তা ঝুঁকির কোন সম্ভাবনাই নেই। কারণ সব রকম নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রেখেই আমরা কাজ করছি। ”
এই পাসপোর্টে নিরাপত্তার জন্য ৩৮টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে যে কারণে চোখ রাখবেন
গ্রামীণ-রবির ব্যান্ডউইথ কমানোর নির্দেশ
অভিবাসী শিবিরে হামলায় এক বাংলাদেশি নিহত
হজ যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ঢাকাতেই যেভাবে করা হবে
যাদের পাসপোর্ট আছে, তারা কি এই সুবিধা পাবেন?
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খান বলছেন, ই-পাসপোর্ট চালু হয়ে যাবার পর যারা আবেদন করবেন, তাদের ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। তবে এমআরপি পাসপোর্টধারীরা তাদের পাসপোর্ট ব্যবহার করেই বিদেশে যাওয়া আসা করতে পারবেন।
তবে তারা যখন নবায়নের জন্য আবেদন করবেন, তখন তাদের জন্য ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কবে থেকে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে?
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে জুলাই মাস থেকে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করা হবে।
তবে জুলাই মাস শুরু হলেও, কবে নাগাদ এই কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে, তা এখনো জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তারা প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
এই প্রকল্পের উদ্বোধনের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধনের পর থেকেই এই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে।
ঘরে বসে আবেদনের ব্যবস্থা কি থাকবে?
পাসপোর্টের অনলাইন ফর্মটি ঘরে বসেই পূরণ করা যাবে। কিন্তু ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ দেয়া বা আইরিশের ছবি তোলার জন্য পাসপোর্ট অফিসে সশরীরে হাজির হয়ে আবেদনপত্রটি জমা দিতে হবে।
অর্থাৎ পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াটি হবে প্রচলিত ব্যবস্থার মতোই।