প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব সেনা সদস্যকে ইসরাইলে মোতায়েন করা হবে তারা বর্তমানে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করছেন। তাদেরকে সমবেত করে ইসরাইলে আনা হবে। ইসরাইলি সেনারা গাজায় স্থল অভিযান শুরু করলে তাদের সহায়তায় মোতায়েন করা মার্কিন সেনারা প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে বলে পেন্টাগনের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয়।
স্থল অভিযানে ভীত নয় হামাস
হামাস সোমবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় বলেছে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের স্থল অভিযান চালানোর হুমকিতে তারা মোটেও ভীত নন। এই অভিযান মোকাবেলা করার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন। হামাসের সামরিক মুখপাত্র আবু ওবায়দা ভিডিওটিতে সংগঠনের পক্ষে এই বক্তব্য দেন।
তিনি আরো বলেন, গাজা উপত্যকায় বর্তমানে ২০০ থেকে ২৫০ জন বন্দী আছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বন্দির সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব তাদের কাছে নেই। কেবল হামাসের হাতেই ২০০ বন্দী আছে জানিয়ে আবু ওবায়দা বলেন, ফিলিস্তিনি অন্যান্য প্রতিরোধ আন্দোলনের কাছে এবং আরো কয়েকটি স্থানে আরো ৫০ জন বন্দী রয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অভিযান চালানোর সময় তাদের বন্দী করা হয় বলে জানান আবু ওবায়দা।।
হামাস মুখপাত্র বলেন, বিদেশী বন্দীরা ‘আমাদের অতিথি। তারা নিরাপদে আছেন। বাস্তব অবস্থা অনুকূল হলেই তাদের মুক্তি দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের ধর্ম আমাদের যে ধরনের শিক্ষা দিয়েছে, আমরা সে অনুযায়ীই বন্দীদের সাথে আচরণ করছি। আমরা যা খাই, তাই তারা খাচ্ছেন। তাদের সাথে মানবিক আচরণ করা হচ্ছে। ইসরাইলি বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ২২ জন বন্দী নিহত হয়েছেন জানিয়ে তাদের কয়েকজনের নামও প্রকাশ করেন হামাসের এই নেতা। তিনি বলেন, তাদের একজন হলেন ২৬ বছর বয়সী গাই ওলিভার। তিনি তেল আবিবের বাসিন্দা ছিলেন।
সোমবার রাতে হামাসের প্রচারিত আরেক ভিডিওতে তাদের হাতে বন্দি ২১ বছর বয়সী ইসরাইলি যুবতী মিয়া শেমের সাক্ষাৎকার প্রচার করা করা হয়। সেখানে বলা হয় যে, হামাসের হামলার সময় আহত এই যুবতীকে গাজায় এনে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ক্যামেরার সামনে মিয়া শেম বলেন, হামাস সদস্যরা তার যতœ নিচ্ছেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেণ এবং যত দ্রুত সম্ভব তিনি তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চান।
হামাসের সাবেক রাজনৈতিক নেতা খালেদ মেশাল এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা উপত্যকা ত্যাগ করবে না। তিনি বলেন, তাদের স্থানচ্যুতি মিসরের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করবে এবং জর্ডানের জন্য বিপদের কারণ হবে। ইসরাইলি কারাগারগুলোতে প্রায় ৬ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী আছে জানিয়ে খালেদ মেশাল বলেন, ইসরাইলি বন্দীদের বিনিময়ে তাদের সকলের মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে। বন্দিদের মধ্যে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গাজা ডিভিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও রয়েছেন বলে জানান তিনি। লেবাননের হিজবুল্লাহর প্রশংসা করে তিনি বলেন, তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে হামাসের আরো সমর্থন প্রয়োজন।
হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলের ২০০ নাগরিককে জিম্মি করেছেন বলে দাবি করেছে ইসরাইল। এ ছাড়া হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত ২৯১ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছেন। সোমবার ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগেরি এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাইডেন যাচ্ছেন ইসরাইলে
হামাসের সাথে ইসরাইল চলমান সংঘাতকে কেন্দ্র করে ইহুদিবাদী দেশটির প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামীকাল বুধবার ইসরাইলে সফরে যাবেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আমন্ত্রনে বাইডেন এই সফরে যাবেন। সফরকালে বাইডেন ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নি:শর্ত সমর্থন ও সহমর্মিতা জানাবেন। এছাড়াও গাজায় ইসরাইলের স্থল অভিযানের সময় সম্ভাব্য ঝুকি ও ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের মানবিক সংকট নিয়েও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
ইসরাইল সফর শেষে বাইডেন জর্ডানে যাবেন। সেখানে তিনি দেশটির বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ ছাড়াও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল সিসি ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে বার্তা সংস্থা এপি ও ইসরাইলি মিডিয়ার খবরে বলা হয়। এদিকে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ আজ মঙ্গলবার ইসরাইল সফর করবেন।
রাফাহ ক্রসিং চালু হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ত্রানসামগ্রী পাঠাতে রাজি হয়েছে ইসরাইল। কিন্তু মিসরের পক্ষ থেকে এখনও তা নিশ্চত করা হয়নি। এর আগে মিসর জানায় ইসরাইলের বিমান হামলার কারনে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শৌকরি বলেন, হামাস-ইসরাইল সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই মিসর রাফাহ ক্রসিং চালু রাখাতে চেয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল খোলা রাখার অনুমতি দেয়নি। গাজার জনগণের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের জন্য জর্ডান এবং তুরস্কের পাঠানো মানবিক সহায়তা নিয়ে রাফা ক্রসিংয়ে অপেক্ষা করছে কয়েকশ ট্রাক। কিন্তু সীমান্ত পেরিয়ে গাজায় ঢোকার জন্য ট্রাকগুলোকে এখনও কোনো ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গাজার ত্রাণ কার্যক্রম।
লেবাননকে ধ্বংসের হুমকি
হিজবুল্লাহ হামাসের সাথে যুদ্ধে যোগ দিলে লেবাননকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। গত কয়েক দিন ধরে হিজবুল্লাহর রকেট হামলার জবাবে ইসরাইল লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে। একইসাথে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সেস বা আইডিএফ সতর্ক দিয়ে বলেছে, যুদ্ধে জড়ালে দেশটিকে ধ্বংস করে দেবে ইসরাইল।
বৃটিশ সংবাদপত্র টেলিগ্রাফ্রের খবরে বলা হয়েছে, হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের আশঙ্কা। তারা মনে করছে, এই যুদ্ধে যুক্ত হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ। এমন আশঙ্কার মধ্যেই লেবাননে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হিজবুল্লাহর ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট হামলায় ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে একজন নিহত হওয়ার পর ওই বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। লেবাননের বিরুদ্ধে সতক র্বাতা দিয়েছেন ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাচি হানেগবি।
অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহ ও ইরানকে হামাসের মতো ভুল না করতে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, হামাসের মতো একই ভুল করলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।
ইসরাইলের কেন্দ্রীয় শহর তেল আবিব ও জেরুসালেমে গতকাল সোমবার রকেট হামলা করেছে হামাস। স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে এই হামলা চালানো হয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, এসময় সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে উঠলে পার্লামেন্টে ভাষণরত প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও অন্য পার্লমেন্ট সদস্যরা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।
টাইমস অব ইসরাইলের খবরে বলা হয়, ইসরাইল সফররত মার্কিন সিনেটরদের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্যরাও দুইবার সাইরেনের শব্দ শুনতে পেয়ে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান বলে । মার্কিন সিনেটের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দুই দলের সিনেট সদস্যদের প্রতিনিধিদলটি ইসরাইলে এসছেন দেশটির প্রতি সমর্থন জানাতে।
হাসাপাতালে লাশ রাখার জায়গা নেই
গাজা উপত্যকায় টানা ১০ দিন ধরে চলছে ইসরাইলের নির্বিচার বিমান হামলা। এতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে উপত্যকাটি। হতাহত হয়েছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। প্রতি দিন শত শত লাশ আসছে হাসপাতাল মর্গে। হাসপাতালগুলোর মর্গে লাশ রাখার আর কোন জায়গা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে আইসক্রিমের ফ্রিজারে লাশ রাখতে হচ্ছে। আর জাজিরার এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজার বিধ্বস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তুপের নিচে এক হাজারেরও বেশি মানুষ আটকা পড়েছে। বলে জানিয়েছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি নাগরিক গ্রতিরক্ষা দল এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, আটকাপড়াদের অনেকে মারা গেছেন, আবার আহত অবস্থায়ও আছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে কিছু লোককে উদ্ধারও করা হয়েছে। গাজায় গত ১০ দিনের ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত: ২ হাজার ৭৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
জাতিসঙ্ঘ জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলার কারণে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৫০ হাজারের মতো অন্তসত্ত্বা নারী ন্যনতম স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। এদের মধ্যে ৫ হাজার ৫২২ জন নারীর আগামী মাসে সন্তান জন্ম দেয়ার কথা রয়েছে। ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসঙ্ঘের জনসংখ্যা তহবিলের প্রতিনিধি ডমিনিক অ্যালেন সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম শিশু হত্যা
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে মুসলিমবিদ্বেষী ভয়াবহ এক ঘটনা। শিকাগো শহরের এক বাড়িওয়ালা তার বাড়িতে ভাড়া থাকা ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিনী একটি মুসলিম পরিবারের ছয় বছরের এক শিশুকে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। এছাড়া ওই শিশুটির মা ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে শিকাগো থেকে প্রায় ৪০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি বাড়িতে আহত অবস্থায় ওই মা ও তার ছেলে শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় বছরের ওই শিশুটিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা ও তার ৩২ বছর বয়সী মাকে গুরুতর আহত করার অপরাধে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে মার্কিন পুলিশ। হামলাকারীর বিরুদ্ধে হত্যা ও ঘৃণামূলক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের অভিযোগ, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে ওই ব্যক্তি ছোট্ট শিশু ও তার মায়ের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালান।
পুতিনের ফোন
হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর প্রথমবারের মতো ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল সিসির সঙ্গে কথা বলবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিন এ তথ্য দিয়েছে গতকাল। এর আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গেও কথা বলেছেন পুতিন।
এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, পশ্চিমাদের চাপে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নিন্দা জানাবে না মালয়েশিয়া। হামাসের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক আছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। গতকাল সোমবার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে এই ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হলেই শান্তিরক্ষা অথবা মানবিক মিশনে ফিলিস্তিনে মালয়েশীয় সৈন্য মোতায়েন করা সম্ভব হবে। কোন ঐকমত্য ছাড়া মালেশিয়ার শান্তিরক্ষী অথবা মানবিক সহায়তা বহনকারী উড়োজাহাজ পাঠানো হবে না।
আনোয়ার ইব্রাহিম আরো বলেন, মালয়েশিয়ার কয়েকটি দল দাবি করছে যে, আমরা আমাদের সামরিক বাহিনী পাঠাতে অস্বীকার করেছি। আমাদের সামরিক বাহিনীর নেতারাও বিষয়টি ব্যাখ্যা করার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলো ও তাদের প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য চাড়া সেখানো আমাদের মৈস্য ও ত্রানবাহি বিমান পাঠানো এটি সহজ কোন সিদ্ধান্ত নয়। বিরোধী দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। পার্লামেন্টে বক্তব্যে ইসরাইলিদের হাতে নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের জন্য মালয়েশিয়ার জনগণকে দোয়া করার এবং মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম।
হামাসের হাতে মার্কিন অস্ত্র
ইসরাইলে হামাসের হামলার সময় অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে এই সংগঠনটিকে। হামাস এতো অত্যাধুনিক অস্ত্র কোথায় পেলো তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন বিতর্ক। ইসরাইলে চালানো অভিযানে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে দাবি করছেন অনেকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র হামাসের হাতে কীভাবে এলো? খবর ইনসাইডারের।
অনেকের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দান থেকে কালোবাজারির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র চলে গেছে। আর সেই অস্ত্রই ইসরায়েলে হামলার জন্য ব্যবহার করেছে স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিরা। রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ, যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তা হিসেবে ইউক্রেন যেসব অস্ত্র পাচ্ছে, কালোবাজারের মাধ্যমে সেগুলোই হামাসের কাছে যাচ্ছে।
দুর্নীতিবাজ ইউক্রেনীয়রা এসব বিক্রি করেছে অভিযোগ করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনে দুর্নীতির মাত্রা অনেক বেশি। কালোবাজারে দেশটি থেকে অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। ইউক্রেনীয়দের অনেকেই পশ্চিমা অস্ত্র বিক্রি করছে। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, কালোবাজারের মাধ্যমে ইউক্রেনের অস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি হচ্ছে।
তবে, পাল্টা অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেনও। দেশটির দাবি, রাশিয়াই হামাসকে অস্ত্র দিচ্ছে। কিয়েভ বলছে, তাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের ময়দান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র জব্দ করে সেগুলো হামাসের কাছে সরবরাহ করছে মস্কো। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও এই অস্ত্র ইস্যুতে বিতর্ক শুরু হয়েছে। রিপাবকলিকান নেতা মারজোরি টেইলর গ্রিনি হামাসের ব্যবহৃত মার্কিন অস্ত্রের উৎস তদন্ত করার দাবি তুলেছেন।
ভারতে ফিলিস্তিন বিরোধী প্রচারনা
ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে গত ৭ অক্টোবর হামাস হামলা চালানোর পর থেকে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। এতে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। এই সংঘাত শুরুর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনবিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষী নানা ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে ইলন মাস্কের খুদে বার্তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ ধরনের ভুয়া তথ্য বেশি ছড়ানো হচ্ছে। ফিলিস্তিনবিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষী এসব ভূয়া তথ্য সবচেয়ে বেশি ছড়ানো হচ্ছে ভারতভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। আর এসব অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারিদের বেশির ভাগই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং তারা ইসরাইরকে সমর্থন করে বিভিন্ন ধরণের পোষ্ট দিচ্ছে। আল জাজিরা বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এসব ভুয়া তথ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে- হামাস এক শিশুকে অপহরণ করেছে। আরেকটি হচ্ছে- ট্রাকের পেছনে এক ইসরাইলি তরুণকে শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। নীলরঙা ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে এসব ভুয়া খবর ভাইরাল করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এক্স-এ আরেকটি বার্তা বহু মানুষ শেয়ার করেছেন যাতে দাবি করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই চালাচ্ছে হামাস।
ভারতের অন্যতম ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ‘বুম’ অসংখ্য ভারতীয় ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছে যেগুলোর ব্যবহারকারীরা ভুয়া তথ্য প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমাদের সমর্থন, বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া তথ্য নিয়ন্ত্রণে অনীহা এবং ভারত থেকে উগ্রপন্থীদের ইসলামবিদ্বেষী ভুয়া তথ্য প্রচার গাজা সংকটকে ফিলিস্তিন ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত করেছে বলে আল জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে।