Site icon The Bangladesh Chronicle

ইতিহাস গড়ার ম্যাচে দিন শেষে বেকায়দায় বাংলাদেশ

ইতিহাস গড়ার ম্যাচে দিন শেষে বেকায়দায় বাংলাদেশ – ছবি : সংগৃহীত


দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবান টেস্ট জিততে ২৭৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বেকায়দায় পড়ে গেছে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন শেষে ১১ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা।

আগামীকাল পঞ্চম ও শেষ দিনে ম্যাচ জিততে বাকি ৭ উইকেটে ২৬৩ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬৭ রানের জবাবে বাংলাদেশ ২৯৮ রান করে।

প্রথম ইনিংস থেকে পাওয়া ৬৯ রানের লীডকে সাথে নিয়ে তৃতীয় দিনের শেষ দিকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে প্রোটিয়ারা। বৃষ্টি ও আলো-স্বল্পতার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হওয়া দিনে ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৬ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ওপেনার সারেল এরইউ ও অধিনায়ক ডিন এলগার ৩ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন।

চতুর্থ দিন সকালে সময় নিয়ে উইকেটে সেট হয়ে যান এরইউ ও এলগার। তারা ভালোই ব্যাটিং করছিল। তবে তাদের পথে বাধ সাধেন বাংলাদেশের পেসার এবাদত হোসেন। এরইউকে লেগ বিফোর আউটের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ। তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে এরইউর বিদায় নিশ্চিত হলে ৫১ বলে ৮ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে প্রোটিয়া ওপেনারের।

এরইউকে হারানোর পর কিগার পিটারসেনকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ১০০ পার করেন এলগার। আর এমনটি হতে পারে অনেকটাই বাংলাদেশ ফিল্ডারদের কল্যাণে।

ব্যক্তিগত ৩৪ এবং ৪৩ রানে যথাক্রমে শান্ত ও ইয়াসির আলি ক্যাচ মিস করলে জীবন পান এলগার। দু’বার জীবন পেয়ে ২১তম টেস্ট হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন এলগার।

এলগারের মতো পিটারসেনকে জীবন দেয় বাংলাদেশ। খালেদ আহমেদের করা ইনিংসের ২৬তম ওভারের তৃতীয় বলে পিটারসেনকে লেগ বিফোর আউটের আবেদন করে বাংলাদেশ। তবে সেটি নাকচ করে দেন আম্পায়ার। কিন্তু এবার আর রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। তাই এ যাত্রায় বেঁচে যান পিটারসেন। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, নিশ্চিত লেগ বিফোর ছিলেন ১৪ রানে থাকা পিটারসেন।

তাই বাংলাদেশের ভুলে ১ উইকেটে ১০৫ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বিরতি থেকে ফিরে বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন পেসার তাসকিন। এবারও রিভিউর উপর নির্ভর করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এলগারের বিপক্ষে বাংলাদেশের করা লেগ বিফোর আবেদন নাকচ করেন অন-ফিল্ড আম্পায়ার। ফলে রিভিউ নিয়েই এলগারকে বিদায় দেয় বাংলাদেশ। নিজের ২৭তম জন্মদিনের দিন এলগারের উইকেট নিলেন তাসকিন। ৭টি চারে ১০২ বলে ৬৪ রান করেন এলগার। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৪ বলে ৬৮ রান যোগ করেন এলগার ও পিটারসেন।

এলগারের বিদায়ের কিছুক্ষণ পর থামেন পিটারসেনও। ১৪ রানে জীবন পাবার পর, রান আউট থেকে বেঁচেও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ৪৩তম ওভারে মিরাজের বলে শর্ট লেগে জয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন তিনি। ৪টি চারে ৮৫ বল খেলে ৩৬ রান করেন পিটারসেন।

পিটারসেনকে তুলে নেয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার উপর চাপ বাড়ান মিরাজ ও এবাদত। তেম্বা বাভুমাকে এবার আর বড় ইনিংস খেলতে দেননি এবাদত। তবে এই উইকেটের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ইয়াসিরের। স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ইয়াসির। ৪ রানে আউট হন প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করা বাভুমা।

এরপর কাইল ভেরিনিকে আউট করেন মিরাজ। ভেরিনিকে ৬ থামাতে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন সাদমান।

মিরাজের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি ভেরিনি। ব্যাট ছুঁয়ে জুতায় লেগে, গ্লাভসে লেগে সিলি পয়েন্ট থেকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন সাদমান।

দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেট নেয় বাংলাদেশের বোলাররা। ফলে দ্বিতীয় সেশনটি নিজেদের করে রাখে তারা। এই সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮ ওভারে ৫২ রানের বেশি তুলতে পারেনি। ৫ উইকেটে ১৫৭ রান তুলে চা-বিরতিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তখন ৫ উইকেট হাতে নিয়ে ২২৬ রানে এগিয়েছিল প্রোটিয়ারা।

বিরতির পর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের সুবিধা করতে দেয়নি মিরাজ-তাসকিন ও এবাদতরা। ৩৬ রানে প্রোটিয়াদের শেষ ৫ উইকেট তুলে নেন তারা। এরমধ্যে দু’টি রান আউট ছিল। মুল্ডারকে ১১ রানে মিরাজ, কেশব মহারাজকে ৫ রানে তাসকিন ও শেষ ব্যাটার ডুয়াইন ওলিভিয়েরকে খালি হাতে বিদায় দেন এবাদত। ফলে ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সিমোন হার্মার ১১ ও লিজাড উইলিয়ামস শূন্য রানে রান আউট হন। ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন রিকেলটন।

বাংলাদেশের মিরাজ ৮৫ রানে ও এবাদত ৪০ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে যাওয়া তাসকিন ইনজুরি নিয়ে এই ইনিংসে বল হাতে ২৪ রানে ২ উইকেট নেন।

২৭৪ রান টার্গেটে খেলতে নেমে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। বাউন্ডারি দিয়ে প্রথম ওভারেই বাংলাদেশের রানের খাতা খুলেছিলেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান জয়। তবে দ্বিতীয় ওভার থেকে বাংলাদেশের বিপদ শুরু হয়।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ভোগানো হার্মার শুরুতেই শিকার করেন সাদমান ইসলামকে। স্লিপে ক্যাচ দেন রানের খাতা খুলতে না পারা সাদমান। পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশের দুই উইকেটের পতন ঘটান মহারাজ। জয় ৪ ও অধিনায়ক মোমিনুল ২ রান করে মহারাজের শিকার হন।

এরপর শান্ত ও মুশফিক জুটি বাঁধেন। ৭ বল খেলার পর আলো-স্বল্পতায় বন্ধ হয় দিনের খেলা। দিন শেষে শান্ত ৫ ও মুশফিক শূন্য রানে অপরাজিত আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মহারাজ ৭ রানে ২ ও হার্মার ৪ রানে ১ উইকেট নেন।

Exit mobile version