মহাসড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। বিষয়টি জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ইতিমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, চিঠিতে নির্মাণাধীন মহাসড়কটির বর্তমান চিত্র ও জনদুর্ভোগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন মহাসড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সড়কপথে আন্তবাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে। ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল কাজ শুরু হলেও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৭ সালের ২০ জুলাই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ২ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। কাজটি পায় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ২০২১ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু হয়নি। পরে তিন দফা সময় বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। তবে গত জুন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, এই মহাসড়ক প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন ৩৬০ ভারতীয় নাগরিক। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর এই প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও নির্মাণশ্রমিকেরা নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে নিজ দেশে চলে গেছেন। একজনও আর ফেরেননি। ফলে এক মাস ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এতে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ শঙ্কায় পড়েছে। প্রকল্পের মালপত্র অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় কিছু কিছু চুরিও হচ্ছে।
চার লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজ অর্ধসমাপ্ত থাকায় ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ চরম রূপ নিয়েছে। মহাসড়কের এক পাশে খানাখন্দ থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। তীব্র যানজটও হচ্ছে। পথচারী আলম মিয়া বলেন, এই সড়কে চলাচল করা যায় না। আশপাশের বাসাবাড়িসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধুলার জন্য বসা যায় না। আবার বৃষ্টি হলে কাদা হয়ে যায়। দ্রুত কাজ শেষ হলে মানুষের কষ্ট যাবে।
মাইক্রোবাসের চালক কামাল হোসেন জানান, খানাখন্দের কারণে মহাসড়কের ঘাটুরা, বিরাসার, পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা এলাকায় যানজট লেগে থাকে। ট্রাকচালক আবু হানিফ জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকার পাশাপাশি যানবাহনের নাট-বল্টু, চাকা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সড়কটি ব্যবহারকারী ও স্থানীয় লোকজন দ্রুত চার লেন বাস্তবায়নের দাবি জানান। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঠিকাদার ও শ্রমিকেরা চলে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজ আবার কবে নাগাদ শুরু হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আখাউড়া-আশুগঞ্জ চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, দেশে চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাঁদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে ভারতে ফিরে গেছেন। তাঁরা কবে আসবেন, কিছুই জানাননি। তাঁরা মালপত্র রেখে গেছেন। অনেক মালপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি তাঁদের দপ্তরের সবাই অবগত আছেন। তাঁদের আশা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা আসবে।
ajker patrika