Site icon The Bangladesh Chronicle

আলোচনায় বক্তারা দূষণের কারণে গতিপথ পাল্টাচ্ছে ইলিশ

ইলিশ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে বক্তব্য দেন বিশেষজ্ঞরাছবি: প্রথম আলো

দূষণ, প্রাকৃতিক কারণ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করে। যেসব নদীতে আগে ইলিশ পাওয়া যেত, সেখানে এখন ইলিশ কমে গেছে। তাই ইলিশ উৎপাদনের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত জেলে সম্প্রদায়ের আর্থিক নিরাপত্তা ও তাঁদের উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে।

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এসব কথা উঠে আসে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন ও ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের উদ্যোগে এ সংলাপ হয়।

সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, জেলেদের বক্তব্যে  ইতিবাচক কথা আসেনি। কেন আসেনি সেটা উপলব্ধি করতে হবে। সরকার ইলিশ উৎপাদনের যে তথ্য দিচ্ছে, তার সুফল কেন জেলেরা পাচ্ছেন না, সেটাও ভাবতে হবে। যদি ইলিশের উৎপাদন এতই বেড়ে থাকে, তাহলে ভোক্তারা কেন চাইলেই ইলিশ খেতে পারছেন না।

মৎস্য গবেষক সৈয়দ আলী আজহার বলেন, দূষণ ও প্রাকৃতিক কারণে ইলিশের গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন হাওর এলাকায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

সৈয়দ আলী আজহার আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে জেলেরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এসব দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জেলেদের জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার সূত্র দিয়ে তিনি বলেন, নদ–নদীর গভীরতা হ্রাস, পানিদূষণসহ বিভিন্ন কারণে ইলিশের উৎপাদন হুমকির মুখে। ইলিশ সংবেদনশীল মাছ। বাসস্থানে পরিবর্তন অনুভব করলে তারা খুব ঘন ঘন গতিপথ পরিবর্তন করে। বিদ্যুৎকেন্দ্র, উন্নয়ন প্রকল্প ও শিল্পায়নের ফলে নদীর পানিদূষণ ইলিশকে পথ পরিবর্তনে বাধ্য করছে।

ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির কথাও বলা হয়েছে প্রবন্ধে। পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশে একই সময়ে ইলিশের ব্যবস্থাপনা ও নিষেধাজ্ঞার দেওয়া হলে সুফল আসবে বলে উল্লেখ করা হয়।

সংলাপে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবদুল ওহাব বলেন, ইলিশ ও জেলেবান্ধব কর্মসূচি নিতে হবে। নিয়মিত চাকরির মতো মাসিক বেতন ও জেলেদের জন্য আলাদা কল্যাণ তহবিল হতে হবে।

তবে ইলিশের উৎপাদন কমে গেছে, এ কথা সঠিক নয় বলে মনে করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান (ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখা) মাসুদ আরা মমি। তিনি বলেন, দেশে প্রচুর ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে। এখন বছরে ৫ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়।

এ সময় ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ও জেলেদের সহায়তার জন্য সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন মাসুদ আরা মমি। তিনি আরও বলেন, জেলের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে।

সভায় পটুয়াখালী–৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ চাষ হচ্ছে। সেখানে কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার হয়, যা ইলিশের জন্য ক্ষতিকর।

বাপার সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান গুলশান আরা, খুলনা–৬ আসনের সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু, উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল প্রমুখ।

Exit mobile version