Site icon The Bangladesh Chronicle

আ’লীগ সমর্থক সাড়ে ৩ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ পেতে যাচ্ছে

শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের শেষ সময়ে দলীয় পরিচয়ে চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত তিন হাজার ৫৭৪ জন টিআরসি চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছে। গত জুন মাসে দলীয় বিবেচনায় চূড়ান্ত হওয়া এসব টিআরসি (ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল) বর্তমানে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, রংপুর, খুলনা, পিএসটিএস রাঙ্গামাটি ও পুলিশ একাডেমি সারদায় চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রশিক্ষণরত রয়েছে। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে সারা দেশে ৬৪ জেলায় চারটি পর্বে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় ক্যাডার হিসেবে মৌখিক পরীক্ষার আগের দিন তাদের বাছাই করা হয়। এর বাইরে অন্য প্রার্থীদের নানা কৌশলে বাদ দেয়ার মাধ্যমে তাদের বাছাই করা হয়েছিল। তৎকালীন আইজিপি এবং রিক্রুটমেন্ট ও ক্যারিয়ার প্ল্যানিং শাখা থেকে অত্যন্ত চতুরতার সাথে তাদের বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকারের সময়ে বিভিন্ন পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া সাব-ইন্সপেক্টরদের নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে তদন্তকার্যক্রম সম্পন্ন করা হলেও রহস্যজনক কারণে সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া টিআরসি ব্যাচসহ গত ১৬ বছরের নিয়োগপ্রাপ্ত আনুমানিক ৮০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের বর্তমান কর্মকর্তারা কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য করছেন না।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বর্তমান পুলিশ বাহিনীতে গত ১৫ বছরের নিয়োগপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের দলীয় পরিচয়, দুর্নীতি ও বিশেষ এলাকার বাসিন্দা পরিচয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় পুলিশের একটি বড় অংশ এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার কাজ করছে। সম্প্রতি ডিএমপিসহ অনেকগুলো মহানগরী ও জেলাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈধ আদেশ অমান্য করার খবর গণমাধ্যম প্রকাশিত হয়েছে, যা সর্বশেষ ১৫ বছরে নিয়োগ প্রাপ্ত কনস্টেবল ও অন্যান্য পদবির কর্মকর্তাদের দুরভিসন্ধি বলে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা হতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবগত করা হয়েছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কনস্টেবলদের সবাই গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান অনুগত ও দলীয় পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বলে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রশিক্ষণরত তিন হাজার ৫৭৪ জন টিআরসি এই নভেম্বর মাসেই প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। বিভিন্ন জেলায় ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে কর্মরত পুলিশ সুপারদের কাছ থেকে জানা যায়, পুলিশ সদর দফতর থেকে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের পর পিআরবি অনুযায়ী ৫০ শতাংশ প্রাপ্ত প্রার্থীদেরকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।

গত ১৫ বছরে বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে জানা যায়, মৌখিক পরীক্ষার আগের দিন পুলিশ সদর দফতরের নিয়োগ শাখা হতে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করা হতো। এ সংক্রান্ত কার্যক্রম অত্যন্ত গোপনীয়তা ও সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করার জন্য জেলাগুলোতে কর্মরত দলীয় পরিচয়ে সিক্ত কর্মকর্তাদের বাছাই করা হতো।

এসব দলীয় কর্মকর্তারা রাত-দিনের মধ্যে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় লিখিত পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদের ও তাদের পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় জোগাড় করতেন। তারপর মৌখিক পরীক্ষার নামে বিএনপি জামায়াতপন্থীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হতো। এসব তদন্তের সাথে জড়িত একাধিক ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা পর্যায়ে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে নিয়োগ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দলীয় রেঞ্জ ডিআইজিগণ তৎকালীন সরকারের দলীয় ক্যাডার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন সহকারী পুলিশ সুপারদের মনোনীত করতেন। দলীয় পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ও তার সহযোগীরা গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পুলিশে লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য নিয়োগের কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একটি দলীয় বাহিনীতে পরিণত করার কাজ সম্পন্ন করেছে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে সর্বশেষ নিয়োগপ্রাপ্ত টিআরসিসহ গত ১৫ বছরের নিয়োগ প্রাপ্তদের তথ্য যাচাইপূর্বক দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। সর্বশেষ রাজশাহীতে এএসপি ও সাব-ইনস্পেক্টরদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থানীয় ছাত্র সমন্বয়কদের আপত্তির মুখে স্থগিত করা হয়।

সরকারের উচ্চপর্যায়ে দাখিল করা গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবল ও সাব-ইনস্পেক্টরদের নিয়োগপ্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিআইজি হিসেবে অবসরে গেছেন। আবার অনেকেই ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়িত আছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নামসহ প্রতিবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।

nayadiganta

Exit mobile version