Site icon The Bangladesh Chronicle

আর্থিক সংকোচনে সরকার স্থানীয় ঋণও নিচ্ছে কম

আর্থিক সংকোচনে সরকার স্থানীয় ঋণও নিচ্ছে কম

বাজারে টাকার সরবরাহ কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়াও বন্ধ করেছে। ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে। সুদহার বাড়িয়ে সঞ্চয় উৎসাহিত এবং ঋণ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এদিকে, সরকারের ব্যয় বাড়লেও আশানুরূপ রাজস্ব আদায় বাড়েনি। এর মধ্যে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে আর্থিক সংকোচন করছে। স্থানীয় উৎস থেকে ঋণও নিচ্ছে কম। টাকার সংকট থাকায় সরকারের কাছে সার ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ৪২ হাজার কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে ২৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ঋণ কমানো হয়েছে ২৯ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার নিয়েছে ২৯ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ ১২০ কোটি টাকা কমেছে। যদিও চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে। গত অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আট বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ৮৮ হাজার কোটি টাকার মতো। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে তোলা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এভাবে মুদ্রা সংকোচনের ফলে বাজারে টাকা কমে সুদহার দ্রুত বাড়ছে। জানুয়ারিতে ট্রেজারি বন্ডে সর্বোচ্চ সুদ উঠেছে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত জুলাই থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদের সঙ্গে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় ফেব্রুয়ারি মাসে সুদহার উঠেছে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানান, মূল্যস্ফীতি বাড়লে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমে। চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে নতুন ঋণ তো দূরে থাক, ডিসেম্বর পর্যন্ত কমেছে ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্রে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নিট ঋণ কমেছিল ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এ সময়ে ট্রেজারি বিল, বন্ডের সুদহার অনেক বেড়ে যাওয়ায় মেয়াদি আমানতে ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশের মতো সুদ দিতে হচ্ছে। সংকটে থাকা কোনো কোনো ব্যাংক দিচ্ছে আরও বেশি। এর পরও আশানুরূপ আমানত না পেয়ে ব্যাংকগুলো ধরনা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। জানুয়ারি শেষে ব্যাংকগুলোর ধারের স্থিতি প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বের অন্য সব দেশ বেশ আগে থেকেই সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ছিল উল্টো পথে।

বৈশ্বিক সুদহার কয়েক গুণ বাড়লেও গত জুন পর্যন্ত দেশে ৯ শতাংশে অপরিবর্তিত ছিল।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী সমকালকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রথাসিদ্ধ নিয়ম হলো সুদহার বাড়িয়ে মুদ্রা সংকোচন করা। আমাদের এখানে যা শুরু হয়েছে। এর প্রভাব হয়তো আগামী জুন-জুলাইয়ে পড়বে। তিনি বলেন, সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বিভিন্ন বিষয়ে জোর দিতে পারে। বিশেষ করে সব ধরনের নিয়ম মেনে ঋণ বিতরণ ও আদায় জোরদার করতে পারে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকার জন্য বেনামি ও ভুয়া ঋণ চিহ্নিত করে তা আদায়ে কঠোর হতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক কিংবা স্মার্টের সঙ্গে মার্জিন বাড়াতে হবে। সরকার এখন ট্রেজারি বন্ডে ১২ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ বা অনেক ক্ষেত্রে তার বেশি দিচ্ছে। অথচ ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক ঋণে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এখন একটি ব্যাংক যদি ঋণ ও আমানতের মধ্যে সুদহারের ব্যবধান অন্তত ৩ শতাংশ রাখতে না পারে, তাহলে লোকসানে পড়বে।

samakal

Exit mobile version