Site icon The Bangladesh Chronicle

আরও ‘বেনজীর-আজিজে’র খোঁজে বিএনপি

আরও ‘বেনজীর-আজিজে’র খোঁজে বিএনপি

ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, মানবাধিকার হরণসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুরুতর অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘অনুসন্ধানী টিম’ গঠন করেছে দলটি। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজও শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, নিম্ন আদালতের বিচারক, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সেক্টরের ক্ষমতা অপব্যবহারকারী ব্যক্তি এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অত্যন্ত নিবিড়ভাবে অনুসন্ধানে ‘সত্য প্রমাণিত’ তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হবে। সময়মতো দেশবাসী ও বিদেশিদের সামনে তা প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আরও কতজন আজিজ, বেনজীর ও আজীমের জন্ম হয়েছে, তা তারা খুঁজে বের করবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিরোধী দলের সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তি প্রয়োগ করে দমনকারী কর্মকর্তারা জবাবদিহির ঊর্ধ্বে রয়েছেন। তারা মনে করেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে এবং বিরোধী দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে তারাই সরকারকে টানা ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছেন। ফলে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ‘ধরাকে সরা’ মনে করেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস ও মৌলিক মানবাধিকার হরণের পাশাপাশি নিজেরা লুটপাটে নিমগ্ন হয়ে পড়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে ডলার পাচারসহ ব্যাংক লুটপাটে আজ দেশের অর্থনীতি নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, এই আজিজ-বেনজীরকে কারা সৃষ্টি করেছে? দেশে আরও অসংখ্য আজিজ-বেনজীরের মতো কর্মকর্তা সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

চারদিকে তাকিয়ে দেখবেন, তাদের দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নেই। অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। বেনজীর আহমেদের তদন্ত হচ্ছে, আজিজেরও তদন্ত করতে পারবে দুদক। বিচার করার সৎসাহস সরকারের আছে। এ ইস্যুতে সরকার মোটেও বিব্রত নয়।

বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক নেতা সমকালকে জানান, ইতোমধ্যে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং সংসদ সদস্য নিহত আনোয়ারুল আজীমের বিরুদ্ধে নানা ভয়াবহ অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন হয়েছে। তাঁর মতে, বিএনপির অনুসন্ধানে আরও অসংখ্য ‘আজিজ, বেনজীর ও আজীমে’র তথ্য-উপাত্ত উদ্ঘাটনের পর তা নতুন মাত্রা পাবে। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে অপরাধের মাত্রা দেশের মানুষ বুঝতে পারবে বলে তাদের বিশ্বাস।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সমকালকে বলেন, এসব সুবিধাভোগীই তো অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। তারাও তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা কী করবে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে আছি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সভা-সেমিনারে দুর্নীতিবাজদের বিচারের কথা বলছি। সামনে হয়তো আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

বিএনপি নেতাদের মতে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলন পুরোপুরি ব্যর্থ বলা যাবে না। গণতন্ত্র, মানবাধিকার হরণসহ সরকারের নানা অপকর্ম তুলে ধরে বিএনপি ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছিল। সরকারের নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের পরও বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোট বর্জন করেছে জনগণ। তারা ভোটকেন্দ্রে যায়নি, ভোটের হার বাড়িয়ে প্রচার করা হয়েছে। ভোট বর্জনে জনগণের সেই অকুণ্ঠ সমর্থনে আশান্বিত হয়েছেন তারা। এখন সরকারের আশীর্বাদে নানা অপরাধ ও দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত ব্যাপক প্রচার করে সুফল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।

দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, অনুসন্ধান টিমটি প্রশাসনিক বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে। তারা নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করে প্রমাণিত আরও অনেক মন্ত্রী-এমপি, সামরিক-বেসরকারি সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, বিচারক, ব্যাংকারসহ বিভিন্ন সেক্টরের তথ্যাদি সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। অত্যন্ত গোপনে কাজটি সম্পাদন করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে বিএনপি সমর্থক পেশাজীবীরাও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা সমকালকে জানান, বর্তমানে প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে সবাই আতঙ্কিত। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রয়োজনে বেনজীর ও আজিজদের মতো কর্মকর্তাকে ব্যবহার করছে। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে নিজেরা ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। সরাসরি ওই সব কর্মকর্তাকে দিয়ে সুবিধা নিয়েছে। এখন নিজেরা বাঁচতে দেশি-বিদেশির কাছে বড় গলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে। ঘটনাচক্রে স্বীয় অবস্থান পরিবর্তন করে তাদের (কর্মকর্তা) সঙ্গে প্রতারণা করছে। এতে প্রশাসনের ভেতরে উচ্চ পর্যায়ের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে।

এ পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপি গত ১৫ বছর ক্ষমতার অপব্যবহারকারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিএনপির এ পরিকল্পনার খবর জানাজানির পর প্রশাসন ও বিচার বিভাগে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা সামনে দেখার বিষয়।

samakal

Exit mobile version