আমার এই দেশটির জন্যেই দৈনিক আমার দেশকে খুবই দরকার
মিনার রশীদ
Buy fluoxetine
২০০৫ সালে সাপ্তাহিক যায় যায় দিনে “ মিডিয়ার আক্রমণে দিশাহারা বিএনপি “ শিরোনামে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম । তাতে সাধারণ পাঠকদের কাছ থেকে অনেক সাড়া পেলেও যাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলাম তাদের দৃষ্টিতে সম্ভবত সেভাবে পড়ে নাই । এখন শুধু দোষারোপ নয় – আত্মসমালোচনা , সমস্যার রুট কজ এনালাইসিস এবং যথাযথ প্রিভেন্টিভ একশন নেয়ার জন্যেই ঘটনাটি উল্লেখ করছি । সেখানে একটি প্রশ্ন রেখেছিলাম , জাতীয়তাবাদী পক্ষের শক্তি যেখানে একটি বা দুটি পত্রিকা প্রকাশে হিমশিম খায় সেখানে প্রতিপক্ষের হাতে বা নিয়ন্ত্রণে এতগুলি পত্রিকা কিভাবে থাকে ? এত পাঠক এরা কোথা থেকে পায় ?
আমরা জানি পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মানুষ পত্রিকা পড়ে। সেই পশ্চিমবঙ্গে যেখানে দুয়েকটি সাদা কালো হাল্কা পাতলা পত্রিকা বের হতো সেখানে এদেশে রঙিন ঝকঝকে মোটাসোটা এতগুলি পত্রিকা প্রকাশের অর্থনৈতিক উৎসটি কোথায় ? আমাদের সেই প্রশ্ন বা সন্দেহের জবাব দিয়েছে ২০১১ সালে লন্ডনের বিখ্যাত সাময়িকী ইকোনোমিস্ট । ২০০৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পেছনে যে ইন্ডিয়ান টাকা ও উপদেশের থলে কাজ করেছিল ম্যাগাজিনটি সেই গোমরটি ফাঁক করে দেয় । আর সেই থলে মানেই Bag of Indian cash and advice এর বিরাট একটা অংশ যে মিডিয়া বা গণমাধ্যমে খরচ করা হয়েছে তা সহজেই অনুমেয় । বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ে নিত্যদিন কাগজের প্রথম পাতায় মন্তব্য কলাম , ব্যর্থ রাষ্ট্রের জুজুর ভয়ে সারাদেশকে আৎকে তুলেছে ।
এসব গোগ্রাসে গিলে আমাদের সর্বনাশটি আমরা নিজেরা করেছি । যে বুলেটটি দিয়ে আমাদেরকে গুলি করা হবে সেই বুলেটের খরচটি জুগিয়েছি আমরা , ওদের কাগজের অগ্রসর চিন্তার পাঠকরা । ওদের চটকদার বিজ্ঞাপনে বিমোহিত হয়ে সেসব বিষতুল্য সংবাদপত্র নিজেদের ড্রয়িংরুম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রেখেছি এবং ওদেরকে ওদের মতলব চরিতার্থ করতে সহায়তা করেছি ।
একটি বিশেষ ছক বা বিন্যাশ বানিয়ে কিভাবে বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদি শক্তির উপর এই সাড়াশি মিডিয়া আক্রমণটি সাজানো হয়েছিল সেই আর্টিকেলটিতে তা দেখানো হয়েছিল ।এর পর পদ্মা মেঘনা যমুনায় অনেক জল গড়িয়ে গেলেও পরিস্থিতি সেই একই অবস্থায় রয়ে গেছে , বরং বলা যায় প্যাসেন্টের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে ।
বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদি শক্তিকে আক্রমণ করার জন্যে মিডিয়ার বিন্যাশটি ছিল সত্যি চমৎকার ! এই আক্রমণের সম্মুখভাগে রাখা হয়েছিল আওয়ামীলীগের মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত পত্রিকাগুলোকে ।এরা ফ্রি স্টাইলে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার কাজটি করে যেতো ।সাংবাদিকতার ন্যূনতম নৈতিকতা বা সাপোর্টিং ডকুমেন্টের ধার ধারতো না । এই সারিতে ছিল বাংলার বাণী , ভোরের কাগজ , জনকন্ঠ ইত্যাদি ঘরানার কয়েকটি পত্রিকা ।এরশাদের গার্লফ্রেন্ডদের কেউ কেউ গর্ব করে বলতেন , আমি কোনো ফকিরের বিছানায় যাই নি – প্রেসিডেন্টের বিছানায় গিয়েছি ! এই কাগজগুলির গর্বও ছিল অনেকটা তেমনি । তাদের গর্ব ছিল তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পত্রিকা , ফকিরদের ( রাজাকারদের ) পত্রিকা নহে । দেখা গেছে , যার ভেতরে যত চেতনা ঢুকে তার মগজ বা বিবেচনাবোধ তত অকেজো হয়ে পড়ে । এসব পত্রিকা যা লিখত তাকেই চেতনাহত এই অন্ধ শ্রেণীটি বেদবাক্য বলে গণ্য করত ।
তারপরেও সচেতন মানুষ এদেরকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখতেন । ফলে পেছনের কুশীলবরা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যে ‘দলকানা’ শব্দের সৃষ্টি করলেন ।‘দলকানা’ বা ‘দলান্ধ’ শব্দটির আমদানী এবং আওয়ামীলীগের অনুকূলে তার কুশলী প্রয়োগ বা বুদ্ধিবৃত্তিক চোরা-মাইরের সম্মুখে প্রতিপক্ষ অসহায় হয়ে পড়ে । । কারণ যারাই এই মতলববাজি বা এই প্রপাগান্ডিষ্টদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চান তাদেরকেও False equalization করে ‘দলকানা’ খেতাব পরিয়ে দেয়া হয় । ফলে এক পক্ষের প্রকৃত দলকানা দিয়ে প্রতি পক্ষের সত্যিকার বা যৌক্তিক দাবিগুলিকেও চাপা দেয়া হয় ।
এই মিথ্যাসমতাকরণ বা মতলবি কাটাকাটির এই কাজটি করত এর পরের স্তরে সাজানো নিরপেক্ষ পরিচয়ে পরিচিত পত্রিকাসমূহ । প্রথম স্তর বা সম্মুখ সারির প্রপাগান্ডা যোদ্ধারা কোনোরূপ তিল ছাড়াই যেখানে তাল বানাতো – এদের তাল বানাতে অবশ্য তিলের প্রয়োজন পড়ত । সত্যকে পেচিয়ে বা টুইস্ট করে এমনভাবে উপস্থাপন করতো তাতে সাধারণ পাঠকবর্গ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত । এরাও নিজেদেরকে নিরপেক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পত্রিকা বা গণমাধ্যম হিসাবে পরিচয় দিত । নিজেদের নিরপেক্ষ দেখাতে একটু ব্যালান্স করার চেষ্টা থাকত তবে শেষ নির্যাসটুকু আওয়ামীলীগকেই খাওয়াত।
তৃতীয় স্তরে ছিল বিএনপি নেতাদের মালিকানায় আওয়ামী ও বাম ঘরানার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের পত্রিকা । মালিক পক্ষের মনে হয়তো আশা ছিল , বিএনপির টাকা আওয়ামীলীগের ব্রেইনকে ব্যবহার করবে । কিন্তু
সময়ে দেখা গেলো আওয়ামী ব্রেইন বিএনপির টাকা ও রিসোর্সকে চমৎকারভাবে কাজে লাগিয়েছে । এমনকি সেই সময়ে জাতীয়তাবাদি শক্তির বলিষ্ঠ কন্ঠ হিসাবে বিবেচিত দৈনিক ইনকিলাব রাতারাতি ডিগবাজী মেরে বিরোধী শিবিরে অবস্থান নেয় ! সেখানে তখন কিছু জাতীয়তাবাদি ঘরানার সাংবাদিক অবস্থান করলেও পুরো মেকানিজমের কাছে এরা অসহায় হয়ে পড়েন ।
এতে শুধু জাতীয়তাবাদি শক্তিই বিপদে পড়ে নাই, পুরো দেশটিই মহা বিপদে পড়ে গেছে । আমাদের নীতি নৈতিকতা বা বোধের সেন্সর বা পরিমাপকটি নষ্ট হয়ে পড়েছে । এই পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে আমার দেশ পত্রিকার পূনর্জন্ম জনগণকে সত্য-মিথ্যার ফারাক দেখাকে সক্ষম হবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।
আমরা জানি যে কোনো ভাসমান যান বা জাহাজকে সোজা (upright ) অবস্থায় রাখতে হয় ।কাত হয়ে গেলে বা কাত অবস্থায় চললে সেই জাহাজটি যাত্রীদের সকলের জন্যেই বিপজ্জনক হয়ে পড়ে ।
একটি দেশের মিডিয়া বা গণমাধ্যমকেও এরকম একটি জাহাজের সাথে তুলনা করা যায় । যে দেশের গণমাধ্যমটি আপরাইট বা সোজা অর্থাৎ ডানে বামে ব্যালান্সড সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি তত কার্যকর থাকে । ফলে তাদের সমাজটিও তত উন্নত ও সমৃদ্ধ । আমরা যে সব রাষ্ট্রকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে জানি তাদের এই জাহাজটি সব সময় সোজা থাকে । অর্থাৎ ডানে বামে (কনজার্ভেটিভ এবং লিবারেলের ) একটা ভারসাম্য বজায় থাকে । ফলে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি কার্যকর থাকে ।
সোজা এই জাহাজটি তখন জনগণের জন্যে এক ধরণের স্বর্গীয় স্বাচ্ছন্দ ও তৃপ্তি নিয়ে আসে । একারণেই নিজ দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকত্ব বাদ দিয়ে সেসব দেশের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকত্ব গ্রহন করতে আমরা উদগ্রীব হয়ে পড়ি ।
কিন্তু আমাদের দেশে ভাব ও ভাবনার এই জাহাজটি আজব কারণে বাম দিকে কাত হয়ে রয়েছে । বলা যায় জাতি হিসাবে এটা আমাদের জন্মগত ত্রুটি ।এই কাত হওয়া জাহাজের পাটাতনের মধ্যভাগে ( নিরপেক্ষ ) যারা বসতে চান দেখা যায় তারাও গড়িয়ে বাম দিকে সরে যান মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণেই ।
কাত হওয়া জাহাজটিকে সোজা করার উত্তম উপায় হলো বিপরীত দিকে কিছু ওয়েট বা ওজন যোগ করা । এই মেকানিজমটি সম্যক উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং কাত হওয়া জাহাজটিকে সোজা বা আপরাইট করতে উপায় উপকরণ সহ দুজন ব্যক্তি এগিয়ে এসেছিলেন । এদের একজন শফিক রেহমান এবং অন্যজন মাহমুদুর রহমান । এই দুজনের মেধা, সাহস এবং সততার সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা প্রতিপক্ষ এক ডজনেরও ছিল না ।
এতে প্রমাদ গোণে সেই অপশক্তি যে এই কাত হওয়া জাহাজ থেকে ফায়দা লুটছিল । কারণ তারা চায় না যে আমাদের বোধ ও ভাবনার এই জাহাজটি সোজা হওক । এদের চোখে এটিই এই দুজনের মারাত্মক
অপরাধ । ফলে এই দুজনের কাছ থেকেই তাদের সেই অস্ত্র দুটি ( দৈনিক যায় যায় দিন এবং দৈনিক আমার দেশ ) কেড়ে নিয়ে তাদের দেশান্তরিত করা হয়েছে । এই দুজনের অস্ত্র ছিল তাদের কলম । কলমের জবাব কলম দিয়ে না দিয়ে আদালত , পুলিশ , গুন্ডা সবকিছু দিয়ে তাদেরকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে ।
এমতাবস্থায় দৈনিক আমার দেশ লন্ডন থেকে অন লাইনে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে এবং নিপীড়িত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এর সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছেন শুনে যারপরনাই খুশি হয়েছি । হোক না অনলাইন – তবুও আমার বিশ্বাস
বর্তমান কাত হওয়া জাহাজটিকে সোজা করতে এর জুরি মিলবে না । দেশের সকল জাতীয়তাবাদি শক্তি ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা এই উদ্যোগটিকে সর্বান্তকরনে সহায়তা করুন । সকল ভেদাভেদ, গ্লানি , হতাশা ভুলে এই অন লাইন ( আপাতত:) পত্রিকাটির পাশে দাঁড়ান ।
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন , দৈনিক আমার দেশ বা আপনাদের প্রচেষ্টাও কি তাহলে এই জাহাজটিকে বিপরীত দিকে হেলানো ? স্পষ্ট জবাব হলো , না । আমরা এই দেশটিকে অন্তর থেকেই ভালোবাসি । আমাদের ভালোবাসা শুধু এই দেশের নদী নালা গাছপালার প্রতি এক ধরণের আবেগ বা টান নয়। আমরা এদেশের মাটি , মানুষ এবং তাদের বোধ বিশ্বাসকে অন্তর থেকেই ভালোবাসি । কোনো দালালের কাছ থেকে দেশপ্রেমের সনদ সংগ্রহ করতে চাই না ।
এই দেশটির কোনো ক্ষতি হোক তা চাই না । আমরা চাই এদেশের মানুষ সজাগ ও জাগ্রত হোক । সাদাকে সাদা , কালোকে কালো হিসাবে দেখুক । চোর, বাটপার নিজের পক্ষের হওক কিংবা প্রতিপক্ষের হোক তাকে তুলে ধরার হিম্মত , সাহস ও সুযোগ পয়দা হোক ।
দশ ডিগ্রী তাপমাত্রা এবং সত্তর ডিগ্রী তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য অনুধাবনে ( দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি , অপশাসন, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে ) সকল নাগরিকের নিজ নিজ সেন্সরগুলি ঠিকভাবে কাজ করুক ।
এই সব না বলা অনেক জমানো কথা, বুদ্ধিবৃত্তিক চোরা-মাইর
ও বোবা কান্না গুলি ট্রান্সলেইট করার জন্যেই আমাদের কিছু মাহমুদুর রহমান দরকার – দরকার একটি দৈনিক আমার দেশ । মায়ের কাছে খোকা ফিরে আসার আনন্দের মতই ‘ দৈনিক আমার দেশ’ ফিরে এসেছে – এটিই এর লাখ লাখ পাঠকদের কাছে একটি বিরাট বড় সংবাদ । আমার দৃঢ় বিশ্বাস , এর পাঠক সংখ্যা উল্কার বেগেই আগের জায়গায় ফিরে যাবে ।লন্ডন প্রবাসী কয়েকজন মহৎ প্রাণ বাংলাদেশীর এই উদ্যোগটি প্রমাণ করে ছাড়বে ঘোলের ( অনলাইন ) স্বাদ দুধের ( প্রিন্ট কপি ) চেয়ে খুব একটা কম নয়।
লেখক: কলামিষ্ট ও সাংবাদিক
Buy zoloft