কিন্তু বিষয়টি নাকি এমন নয় যে ভারতীয় মুদ্রার পতন হচ্ছে, মূলত ডলার ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে, আর সে কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মত দিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তাঁর এ কথার প্রতিক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিষয়টি অনেকটা মুরগি আগে নাকি ডিম আগে—এমন কুতর্কের মতো হয়ে গেল। এদিকে রুপির দরপতন ঠেকাতে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার কাজ করছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)—এ কথাও বলেছেন নির্মলা।
সম্প্রতি আইএফএ গ্লোবাল রিসার্চ একাডেমি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে। সে কারণে পড়ছে রুপির দাম। তাদের দাবি ছিল, এত দিন আরবিআই সঞ্চয় খরচ করে কোনোমতে পরিস্থিতি ঠেকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু এখন তা আর সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি আরবিআই জানিয়েছে, তাদের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় (ফোরেক্স রিজার্ভ) ৪৮.৫৪ কোটি ডলার কমেছে, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪০ হাজার কোটি ৫ লাখ ৬৭ রুপি। আইএফএ গ্লোবাল রিসার্চ একাডেমি জানিয়েছে, এতে খরচের বিষয়ে সচেতন হয়েছে আরবিআই। এ প্রেক্ষাপটে ভারতীয় মুদ্রা নিয়ে নির্মলার মন্তব্য এ পর্বে নয়া মাত্রা যোগ করল।
প্রায় ৯ বছর আগে ২০১৩ সালেও ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রার বড় পতন হয়েছিল। এ সংকট মোকাবিলা করতে তখন রিজার্ভ ব্যাংক যে সব ব্যবস্থা নিয়েছিল, তা এখন তেমন কাজ দেবে না বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, তখন ও এখনকার আর্থিক অবস্থার মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে অনেকটা ফারাক রয়েছে। শুধু ডলারের দর বৃদ্ধিই নয়, দেশের আর্থিক হাল যথেষ্ট ভালো বলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দাবির বিপরীতে গিয়ে তাঁদের একাংশের ধারণা, দেশের আর্থিক ভিতও কিছুটা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে।
২০১৩ সালে ডলারের সাপেক্ষে রুপির দরপতন হয়েছিল ১১ শতাংশ। এবার ইতিমধ্যে পতনের হার ওই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে—ডলার ৮২ রুপি ছাড়িয়েছে। এমনকি ডলার ৮৪ রুপিও ছুঁতে পারে বলে ধারণা অনেকের। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানি খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যঘাটতি বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চলতি অর্থবছরে তা জিডিপির ৩ শতাংশের ওপরেই থাকতে পারে। এখন আট মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মতো ডলার শীর্ষ ব্যাংকের হাতে আছে, কিন্তু আমদানি খরচ বেড়ে ডলারের মজুত কমতে থাকলে তার সংস্থান নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে পারে।
জুলাইয়ে বিদেশি মুদ্রা আকর্ষণে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আরবিআই। এর অন্যতম হচ্ছে সরকারি ঋণপত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ অনুমোদন, ভারতীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার আমানত বৃদ্ধি করতে ব্যাংকগুলোকে সুদ ঠিক করার স্বাধীনতা দান ইত্যাদি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ওই সব পদক্ষেপ ২০১৩ সালে যেমন কাজ করেছিল, এবার তেমন করেনি। ফলে রুপির মান ধরে রাখতে রিজার্ভ ব্যাংকের ডলার বিক্রি ছাড়াও আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অনেকের পরামর্শ, অতীতের মতো রিসারজেন্ট ইন্ডিয়া বন্ড বা মিলেনিয়াম ডিপোজ়িট বন্ড ছাড়লে ভালো ফল মিলতে পারে।