Site icon The Bangladesh Chronicle

আফগানিস্তানের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে বাংলাদেশ

আফগানিস্তানের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে বাংলাদেশ। – ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তান। দাপটের সাথেই দলটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তান ২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজ জিতেছিল, এবারে ওয়ানডে ফরম্যাটেও জয় পেয়েছে দলটি।

আর তিন মাস পর বিশ্বকাপ শুরু হতে চলেছে। এমন সময়ে এই পারফরম্যানস এখন ভাবনার বিষয় বলছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বৃষ্টি আইনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর, দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে হেরেছে ১৪২ রানে। এর মাঝে ঘটে গেছে তামিম ইকবালের অবসরে যাওয়া ও পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ফিরে আসা।

তামিম ইকবাল আপাতত দেড় মাসের ছুটিতে আছেন, তার পরিবর্তে ব্যাট করতে নামা নাইম শেখ দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে করেছেন ২১ বলে ৯ রান।

বাংলাদেশের ক্রিকেট সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম মনে করেন, ‘এটা একটা রিয়েলিটি চেক, এখনো যে কাজ করার আছে তা টের পাওয়া গেছে।’

তবে কিছু জায়গায় ভাবনা বাড়ছে বলে জানান তিনি।

লিটন দাসের ফর্ম
বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার লিটন কুমার দাস, তিনি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কও। লিটন গত ১০ ম্যাচে তিন বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন, দুই ম্যাচে ফিফটি করলেও শেষ পাঁচ ম্যাচে ভালো শুরু করেও ৩০ রানের ঘর পার করেছেন মাত্র একবার।

মাজহারুল ইসলাম মনে করেন, লিটন কম রান পাচ্ছেন এটা আসলে ভাবনার বিষয় না, ভাবনার বিষয় তার চিন্তা।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে লিটন দাস বলেছেন, ২৫-২৬ গড় খারাপ না।

মাজহারুল ইসলাম প্রশ্ন রেখেছেন, একজন অধিনায়ক যদি এ ধরনের চিন্তা করেন তাহলে দলের অবস্থা কী হতে পারে?

লিটন দাস ওই সংবাদ সম্মেলনে তার ফর্ম নেই কথা মানতে চাননি।

গত দুই বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে লিটন দাসের ব্যাটিং গড়ে রীতিমতো ধস নেমেছে, ২০২১ সালের জুলাই থেকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত লিটন দাসের গড় ৪০।

কিন্তু ২০২৩ সালে খেলা ১১টি ওয়ানডে ম্যাচে লিটন দাসের গড় ২৪।

লিটন দাসের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই, তবে তার শট সিলেকশন ছিল দুর্বল। এই ১১ ম্যাচে ৮ বারই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রামে সবশেষ ওয়ানডেতে লিটন ফজল হক ফারুকীর সাধারণ এক বলে মোহাম্মদ নবীর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন।

মাজহারুল ইসলাম বলছেন, বিশ্বকাপের বছরে এই পরিসংখ্যান ও খেলার অবস্থা ভাবনার বিষয় এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু লিটন দাস যেভাবে ভাবছেন তাতে এই চিন্তা আরো বেড়ে যায়।

আফিফ হোসেন ব্যর্থ
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর আফিফ হোসেনকে সময় দেন, তিনি যেন ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে ফিরে আসেন। আফিফ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলে দলে সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারছেন না।

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তিনি গোল্ডেন ডাকে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন রশিদ খানের বলে। মাজহারুল ইসলামের মতে, আফিফের স্পিন খেলার সমস্যা স্পষ্ট এবং তিনি এমন সময় ব্যাট করেন যখন অনেক দলই একজন বা দুজন স্পিনার ব্যবহার করে।

হাথুরুসিংহে তার ওপর কত দিন ভরসা রাখবেন ওই প্রশ্ন উঠছে এখন।

বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের সাত নম্বর জায়গা নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন ছিল। এখনো ওই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

চলতি বছর পাঁচ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে আফিফ করেছেন ৫১ রান। চলতি বছরে আফিফের চেয়ে ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদের রান বেশি।

সাত নম্বরে ব্যাট করতেন বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। গত কয়েক সিরিজের স্কোয়াড বলছে, রিয়াদ বিশ্বকাপের ভাবনায় নেই। কিন্তু তার জায়গায় যারা এখন পর্যন্ত সুযোগ পেয়েছেন, কেউই কাজে লাগাতে পারেনি।

গত দুই বছর ইয়াসির রাবি নয় ম্যাচ সুযোগ পেয়ে মাত্র ১০২ রান তুলেছেন।

মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মিডল অর্ডারে একটা শূন্যতা দেখা যাচ্ছে এখন। রিয়াদের জায়গায় আসলে কেউই তেমন ভালো খেলছে না।’

ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা ও ভাবনা হয়ত সময়ের ব্যাপার। লিটন দাস যদি ফর্মে ফিরেন, তবে দলের স্কোরকার্ড আরেকটু ভালো দেখাবে। কিন্তু বাংলাদেশ দল এখন বোলিং দুর্বলতায়ও ভুগছে। তাসকিন আহমেদ চোট পেয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে পারেননি, ইবাদত হোসেন পুরো সিরিজ থেকেই ছিটকে গেছেন।

আফগানিস্তানের দুই ওপেনার চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫৬ রানের জুটি গড়েছেন। ওই সময় বাংলাদেশ বলার মতো সুযোগও তৈরি করতে পারেনি।

বাংলাদেশের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি মনে করেন, এই এক সিরিজ বাংলাদেশ দলকে খারাপ বলতে যথেষ্ট নয়। তবে উন্নতির জায়গা অনেক, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে আশার ব্যাপার ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়ের ফর্ম। কিন্তু এই চারজনও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানোর মতো পারফর্ম করতে পারেননি।
সূত্র : বিবিসি

Exit mobile version