Site icon The Bangladesh Chronicle

আফগানিস্তানকে হারিয়ে শেষ চারের আশা বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশ

logo

নয়া দিগন্ত অনলাইন
উইকেট পেয়ে উড়ছেন রিশাদ |ক্রিকইনফো

লড়াই জারি রাখলো বাংলাদেশ, বাঁচিয়ে রাখলো শেষ চারের আশা। যদিও এখনো সমীকরণ আছে অনেক, তবে টাইগাররা ঠিকঠাক শেষ করলো নিজেদের কাজটা। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে।

এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মঙ্গলবার আফগানিস্তানকে ৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও কাঙ্খিত বড় জয় পায়নি, তবে এই জয় শিরোপা স্বপ্ন এখনো টিকিয়ে রাখলো বাংলাদেশের।

শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদেশ, পাওয়ার প্লেতে ৫৯, আর ১০ ওভারে ১ উইকেটে যোগ করে ৮৭ রান। তবে এরপর কমে আসে রানের গতি, মাঝপথে বিধ্বংসী হতে পারেনি কেউ। বাড়িয়েছেন কেবল হতাশা।

শেষ ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে কেবল ৬৭ রান! বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৫৪ রান। যা অবশ্য যথেষ্ট হয় বাংলাদেশের জন্য, শ্রীলঙ্কা শেষ বলে এসে গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে টসে জিতে আগে ব্যাট করার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। তবে এরপর চ্যালেঞ্জ ছিল ভালো শুরু এনে দেয়া। সেই কাজটা ঠিকঠাক করছেন তানজিদ তামিম ও সাইফ হাসান।

আগের দুই ম্যাচে উদ্বোধনী জুটি ভালো করতে পারেনি। তাই আজ বদল এনে পারভেজ ইমনকে বসিয়ে সুযোগ দেয়া হয় সাইফ হাসানকে। শুরুটা নড়েবড়ে হলেও খাপ খাইয়ে নেন সাইফ।

তবে আসল কাজটা করেছেন তানজিদ তামিম। রানের গতি জারি রেখেছেন তিনি। ফজলে হক ফারুকী থেকে মোহাম্মদ গাজাফারকে উড়িয়ে মেরেছেন তামিম। সুবাদে পাওয়ার প্লেতে এসেছে ৫৯ রান।

সর্বশেষ ১১ ইনিংসেই উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই অপেক্ষা ঘুচে যায় আজ। তবে পাওয়ার প্লের পর আর জুটি বেশিক্ষণ টেকেনি, পরের ওভারে এসে সাইফকে ফেরান রশিদ খান।

রশিদ খানের শিকার হয়ে সাইফ থেমেছেন ২৮ বলে ৩০ করে। ৬.৪ ওভারে ৬৩ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এরপর লিটন এসে আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন, তবে ইনিংস বড় হয়নি, ১১ বলে ৯ রানে থামেন তিনি।

অন্যদিকে ২৮ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় ফিফটি তুলে নেন তানজিদ তামিম। তবে টি-টোয়েন্টিতে নিজের সপ্তম ফিফটি তুলে আর টিকতে পারেননি, ৩১ বলে ৫২ করে ফেরেন তামিম।

১৩ ওভারেই তিন অঙ্কে পৌঁছা বাংলাদেশ এরপরও বড় সংগ্রহের দিকেই চোখ রেখেছিল। তবে সুবিধা করতে পারেনি টাইগাররা, কমে এসেছে রানের গতি। তাওহীদ হৃদয় চেষ্টা করে ফেরেন ২০ বলে ২৬ করে।

শেষ দিকে অবিশ্বাস্য ধীর ব্যাট করেন জাকের-শামীমরা। শামীম পাটোয়ারী ১১ বলে ১১, জাকের আলির ১৩ বলে অপরাজিত ১২ রান আরো চাপে ফেলে বাংলাদেশকে।

শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহান ৬ বলে ১২* রান করলে দেড় শ’ পেরোয় বাংলাদেশ। বল হাতে আফগানদের হয়ে জোড়া উইকেট করে নেন রশিদ খান ও নুর আহমেদ।

ব্যাট হাতে আজ কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ১৫৪ রানের পুঁজিও কম নয়। চ্যালেঞ্জ নিতে হতো বোলারদের। দারুণ কিছু করতে হতো নাসুম-মোস্তাফিজদের।

সেই কাজটাই করলেন নাসুম। তবুও একদম প্রথম বলেই। সেদিকউল্লাহ আতালের উইকেট তুলে নেন তিনি। গোল্ডেন ডাক উপহার দিয়ে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন। ওই ওভারে আসেনি কোনো রানও।

দ্বিতীয় ওভারে ইব্রাহিম জাদরানকেও ফেরানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন ইবরাহীম, তবে তা লুফে নিতে পারেননি রিশাদ।

যদিও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি, নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসেই ফেরান ইবরাহীমকে। তিনিও এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন ১২ বলে ৫ রান করে। ৪.১ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট হারায় তারা।

সব মিলিয়ে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭ রান তুলে আফগানরা। তবে এরপর রাহমানুল্লাহ গুরবাজ ও গুলবাদিন নাইব মিলে চেষ্টা করেন হাল ধরার। তবে ৮.৩ ওভারে ৫১ রানে জুটি ভাঙেন রিশাদ।

গুলবাদিন ফেরেন ১৪ বলে ১৬ করে৷ পরের উইকেটও রিশাদের, ৩১ বলে ৩৫ করা গুরবাজকে ফেরান তিনি। আর মোহাম্মদ নাবি (১৫) থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৩ ওভারে ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারায় তারা।

এরপর জ্বলে ওঠেন ওমরজাই। সাইফ হাসানের ১ ওভারে নেন ২০ রান। ১৫.৩ ওভারে তাসকিনকেও মারেন ৯৯ মিটার বড় ছক্কা। তবে এরপরই ধরা পড়েন তিনি, ফাঁদে আটকা পড়েন ওমরজাই।

ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে ফেরান তাসকিন, সেই সাথে ফেরান স্বস্তি। ১৫.৪ ওভারে ১০৯ রানে আফগানদের ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ওমরজাই ফেরেন ১৬ বলে ৩০ করে।

এরপর গলার কাঁটা হয়ে ওঠেন রশিদ খান৷ ১০ বলে ২০ করে লড়াই চালিয়ে যাবার চেষ্টা করেন তিনি৷ সেই চেষ্টা আটকে দেন মোস্তাফিজ। এর আগে দারুণ এক রান আউট করে করিম জানাতকে (৬) ফেরান সোহান।

১৮.৩ ওভারে মোস্তাফিজ গাজাফানকে ফেরালে ১৩২ রানে ৯ উইকেট হারায় আফগানরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ২২ রান। তবে ১৩ রান তুলতে পারে আফগানরা।

শেষ বলে শেষ উইকেট তুলে নিয়ে ১৪৬ রানে আফগানদের থামান তাসকিন আহমেদ। সব মিলিয়ে তাসকিন, নাসুন ও রিশাদ নেন দুটো করে উইকেট। ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজ।

এই জয়ের ফলে বাংলাদেশেরও পয়েন্ট এখন শ্রীলঙ্কার সমান ৪। শেষ ম্যাচে লঙ্কানরা আফগানিস্তানকে হারালে সুপার ফোরে যেতে আর বাধা থাকবে না টাইগারদের। তবে আফগানিস্তান জিতে গেলে তিন দলেরই জয় হবে দু’টি করে। তখন হিসাব হবে রানরেটের। এক্ষেত্রে যে দুই দল এগিয়ে থাকবে তারাই যাবে শেষ চারে।

Exit mobile version