Site icon The Bangladesh Chronicle

আফগানদের কাছে ১৪২ রানে হেরে সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ


সিরিজ হার এড়াতে পারলো না বাংলাদেশ, আজও অসহায় আত্মসমর্পণ টাইগারদের। জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হতো বাংলাদেশকে, টপকাতে হতো ৩৩২ রানের পাহাড়। আগে কখনোই এত রান টপকে জেতেনি বাংলাদেশ, আজও পারলো না। সঙ্গী হয়েছে ১৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে হার। আর তাতেই এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করলো আফগানিস্তান।

আগের ম্যাচে যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকেই যেন শুরু আজ। উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আসলেও বদলায়নি ভাগ্য। ফারুকী জুজু কাটাতে পারছে না টপ অর্ডার; তার বিপরীতে দাঁড়াতেই পারেনি কেউ। প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে দুই ওপেনারকেই সাজঘরের পথ দেখান।

৩৩২ রানের রেকর্ড রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটি থেকেই গড়ে দিতে হতো ভালো একটা ভিত্তি। তবে তা আর হলো না, বাধা সেই ফারুকি। তার বলে নাবিকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ফেরেন লিটন, পরে নাইম শেখের স্ট্যাম্পও ভাঙেন তিনি। দুই বছর পর একাদশে ফিরেও প্রত্যাবর্তনটা মন মতো হলো না নাইমের। ফেরেন ২১ বলে মোটে ৯ রান করে। লিটনের ব্যাটে আসে ১৫ বলে ১৩ রান।

পঞ্চম ওভারে ১৫ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর পরের ওভারেই ফেরেন শান্ত। সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার দাঁড়াতেই পারেননি। তাকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের বড় ধাক্কা দেন মুজিবুর রহমান। স্ট্যাম্প ভাঙার আগে ৫ বলে মোটে ১ রান করেন তিনি। ২৫ রানেই ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে আসে মোটে ২৮ রান।

এরপর সাকিবের ব্যাটে আশা দেখতে থাকে সমর্থকরা। দেখেশুনে ভালোই শুরু করেছিলেন সাকিব। গত ম্যাচের মতে নড়েবড়ে নয়, স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলছিলেন আজ। দলের অন্যরা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেললেও রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তিনি। তবে ইনিংসটা বড় হয়নি, নাবির বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন সাকিব। আউট হন ২৯ বলে ২৫ রান করে।

আউট হবার আগে তাওহীদ হৃদয়ের সাথে গড়ে তোলেন ৪০ রানের একটা ছোট জুটি। আগের ম্যাচে দলের সেরা পারফর্মার এইদিন ছিলেন নড়বড়ে। খুব ধীরে শুরু করলেও হৃদয়কে ফিরতে হয় ৩৪ বলে ১৬ রান করে। ১৭তম ওভারে তাকে ফিরিয়েই জুটিটা ভাঙেন রশিদ খান।

পরের ওভারে এসে রশিদ ফেরান আফিফ হোসেনকে। ব্যর্থতার বেড়াজাল ছিড়ে বের হতে পারছেন না এই ব্যাটার। দুই সিরিজ পর দলে ফিরেও পরপর দুই ম্যাচেই ব্যর্থ আফিফ। আজ মেরেছেন গোল্ডেন ডাক। মাঝের ওভারে সাকিব ফেরায় টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলের সংগ্রহ তখন ১৮.৩ ওভারে ৭২/৬।

তিন অংকে পৌঁছার আগেই যখন অলআউট হবার শঙ্কা, সেখান থেকেই দলের হাল ধরেন মুশফিক। দলের বিপর্যয়ে একাই লড়ছেন তিনি। যদিও বলের সাথে রানে ব্যবধান বাড়তে থাকে, তবুও তার ব্যাটেই লজ্জা এড়ায় বাংলাদেশ। ৮৫ বলে ৬৯ রান করেন মুশফিক। দলের শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি।

মুশফিককে সঙ্গ দিয়েছেন মেহেদী মিরাজ। দুজনের ব্যাটে দেড় শ’ পার হয় দলের রান। ৩৬.৩ ওভারে ভাঙে মুশফিকের সাথে তার ১১১ বলে ৮৭ রানের জুটি। ৪৮ বলে ২৫ যেখানে মিরাজের অবদান। এরপর হাসান মাহমুদ ৪ ও মোস্তাফিজ করেন ৭* রান। ৪৩.২ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান করে বাংলাদেশ। চোটের কারণে নামা হয়নি এবাদতের।

এর আগে আফগানিস্তানকে বড় সংগ্রহ এনে দেয় তাদের উদ্বোধনী জুটি। প্রথমে রাহমানুল্লাহ গুরবাজ, এরপর ইবরাহীম জাদরান; উভয়ের জোড়া শতকে ভর দিয়ে বাংলাদেশের সম্মুখে বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেয় তারা। ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তুলে ৩৩১ রান।

স্বাগতিকদের হতাশায় ডুবিয়ে দুর্দান্ত এক শতক তুলে নেন গুরবাজ। সর্বশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষেই শতকের দেখা পেয়েছিলেন তিনি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই মাঠেই করেন অপরাজিত ১০৬ রান। আজ খেলেন ১২৫ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৪৫ রানের ইনিংস। শতক তুলেন ইবরাহীম জাদরানও। যদিও এরপর ইনিংসটা টানতে পারেননি তিনি। ফেরেন ১১৯ বলে ১০০ করে।

টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ৩৬ ওভার পর্যন্ত। অবশেষে ৩৬.১ ওভারে এসে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। বিধ্বংসী হয়ে উঠা গুরবাজকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাকিব।

এর আগে ইবরাহীমকে নিয়ে তো ইতিহাস রচনা করে ফেলেন গুরবাজ। দুজনে মিলে ২৫৬ রান যোগ করে গড়েন আফগানিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটি। যা আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো প্রতিপক্ষের করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।

পরের বলেই পড়তে পারতো দ্বিতীয় উইকেট। তবে মুশফিকের ভুলে অপেক্ষা বাড়ে। যদিও সেই অপেক্ষা বড় হয়নি, পরের ওভারেই রহমত শাহকে ফেরান এবাদত হোসেন। সদ্য নামা রহমতের ব্যাটে আসে ৫ বলে ২ রান। থিতু হতে পারেননি অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শাহিদিও, তার স্ট্যাম্প ভাঙেন মেহেদী মিরাজ। ৭ বলে ২ করেন তিনি।

পরের উইকেটও যায় মিরাজের ঝুলিতে। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (১০) ফেরান তিনি। আর ২৯৯ রানে ইবরাহীমের উইকেট নেন মোস্তাফিজ। ততক্ষণে শতক ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। দলীয় রান তখন ২৯৯। এরপর ইনিংস টানেন মোহাম্মদ নাবি। ১৫ বল খেলে ২৫* রান যোগ করেন তিনি। রাশিদ খান করেন ৬ রান।

দলের সেরা বোলার সাকিব আল হাসান, ৫০ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। দুটো করে উইকেট পান মিরাজ, হাসান মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। অপরটি এবাদতের।

Exit mobile version