৭ই জানুয়ারির নির্বাচনের চার মাসের বেশি সময়ের পর আবারো নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে ফিরতে চাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা দল এবং জোটগুলো। এরই অংশ হিসেবে সমমনাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। এতে আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ, ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনা, কর্মসূচির নতুনত্ব ও ভিন্নতার বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই আন্দোলন মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য করা হবে নাকি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে করা হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করছে দল ও জোটগুলো। এর সঙ্গে আন্দোলনের কৌশল, ধরন, আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং আন্দোলনের ভবিষ্যতের বিষয়েও খোলামেলা আলোচনা করেছেন তারা। তবে এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। বিএনপি’র পাশাপাশি দল এবং জোটগুলো ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে নিজেরা বসে আলোচনা করবে। এরপরে লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।
গত ১২ই মে থেকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। এরমধ্যে গত বুধবার গণতন্ত্র মঞ্চ এবং গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এক শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকগুলোতে জামায়াতের প্রসঙ্গও এসেছে। এরমধ্যে কোন কোন দল এবং জোট জামায়াতকে যুগপৎ আন্দোলনে নেয়ার জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। আবার কোন কোন দল এবং জোট ৭ই জানুয়ারির আগে যেভাবে আন্দোলন চলেছে, সেভাবেই কর্মসূচি পালনের জন্য মতামত দিয়েছে। পাশাপাশি ২৮শে অক্টোবরের সমাবেশ এবং আন্দোলন মূল্যায়ন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের জন্য কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় এবং কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার বিশ্লেষণ, সেই সঙ্গে কর্মসূচি নির্ধারণে প্রাথমিক কিছু আলোচনা করছি। মূল কথা নিরপেক্ষ এবং অবাধ একটি নির্বাচন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন করা। সেই লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছর ধরেই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় আলোচনা করেছি এবং আন্দোলন করছি।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, দেশের ৬৩ রাজনৈতিক দল আমরা যে জায়গায় ছিলাম, সেখান থেকে আবার নতুন যাত্রা শুরু করছি। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আমাদের আন্দোলন ও সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। সেই লক্ষ্যে আবার কীভাবে কর্মসূচি নেয়া যায়, সেটা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে আমরা কোথায় কী কী কর্মসূচি নিতে পারি- সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফেব্রুয়ারি মাসে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেদিন বৈঠক মুলতবি ঘোষণা হয়। এরই অংশ হিসেবে গত বুধবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপি বসেছিলো বলে ধারণা করেছিলেন মঞ্চের নেতারা। কিন্তু এতে তারেক রহমানসহ ফেব্রুয়ারিতে হওয়া বৈঠকে উপস্থিত বিএনপি’র কোনো নেতাই ছিলেন না। বৈঠক সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের গতিপথ কোন দিকে এবং বিএনপি কী ভাবছে, সে সম্পর্কে জোট সঙ্গীরা স্পষ্ট কিছু জানে না। এ বিষয়ে বৈঠকে জোট সঙ্গীরা বিএনপি’র কাছে জানতে চায়। পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন যুগপৎভাবেই করার জন্য সবাই একমত পোষণ করেছেন বলেও জানা গেছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মানবজমিনকে বলেন, আন্দোলনের মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা এবং বিএনপি কী ভাবছে, সে বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
এদিকে জোট ও দলগুলোর কাছে সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে তাদের মতামত চেয়েছে বিএনপি। তারা খুব শিগগিরই লিখিত আকারে তাদের সিদ্ধান্ত বিএনপি’র কাছে দিবে। সেই কর্মসূচিগুলো নিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। এরপরে আবারো বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি এই আন্দোলন এক প্ল্যাটফরম থেকেই করার জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে তারা।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, ৭ই জানুয়ারি পূর্বে এবং পরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কর্মসূচি এবং পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি মানবজমিনকে বলেন, ভবিষ্যৎ কর্ম- কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি তাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন।
manabzamin