- অনলাইন প্রতিবেদক
- ০৫ অক্টোবর ২০২১
নারায়ণগঞ্জে বিল্লাল হোসেন ও মো. এমরান এলাহী নামে দুই ব্যক্তিকে আটকের প্রায় দু’মাস পরে আদালতে সোপর্দ করার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে। আটক বিল্লাল হোসেন ও মো. এমরান এলাহীর পরিবার ও আইনজীবী এ অভিযোগ তোলেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট টুটুল বলেন, মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে উপরউক্ত আসামিদের হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘২০২০ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখ রাত আনুমানিক ৩টা ২০ মিনিটে স্পিডবোট নিয়ে উক্ত আসামিসহ চার-পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ডাকাতরা কোস্টগার্ডের লোক বলে বন্দর থানাধীন উত্তর লক্ষনখোলা শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসমান ওটি নাফিম ফ্লোটিং এন্ড ফিলিং স্টেশনে উঠে যায়।
কেউ কিছু বুঝে উঠার আগে বাদীর সাথে ডিউটিতে থাকা ফজলে রাব্বী, বিল্লাল হোসেন, রেজাউল ইসলাম, মনিরুজ্জামানকে ডাকাতদল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র এর মুখে জিম্মি করে সবকিছু নিয়ে নেয়। পরে নিচে এসে একজন ডাকাত বাদীকে জিম্মি করে ক্যাশিয়ার মো: ফজলে রাব্বিকে মারধর করিয়া ক্যাশের তালা ভেঙ্গে আনুমানিক দেড় লাখ টাকা, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও আগ্রনী ব্যাংকের কিছু চেকের পাতা এবং মিটার অপারেটর রেজাউল ইসলামের হাতে থাকা ওয়ালটন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট নিয়ে যায়। পড়ে অজ্ঞাতনামা ডাকাতরা সিসি ক্যামেরা ডিভাইস ও মনিটর ভাঙচুর করে সিসি ক্যামেরা ডিভাইস ও মনিটরসহ স্পিডবোট চালু করে নারায়ণগঞ্জ ৫ নং গেটের দিকে চলে যায়। ডাকাতদের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক পড়া ছিল বলে বাদী উল্লেখ করেন। মামলাটি তদন্তকালে উপরোক্ত বর্ণিত আসামিদ্বয়সহ অন্যান্য আসামিগণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকিয়া ডাকাতি সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে মর্মে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে। আসামিরা উক্ত মামলার ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যায়।
উক্ত আসামিকে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অস্ত্র মামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহ করিয়া তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত ০৫/০৮/২০২১ ইং তারিখে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিদ্দিরগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করিয়া আসামিদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে উভয় আসামি অত্র মামলার ঘটনায় জড়িত মর্মে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। যাহা স্বল্প সময়ে আসামিদের প্রদত্ত তথ্য যাচাই বাছাই করা সম্ভব নয়। আসামিদ্বয়কে পুলিশ হেফাজতে আনিয়া নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহাদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে আসামিসহ অভিযান পরিচালনা করলে অত্র মামলার ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারসহ ঘটনায় সংগঠিত আসামিদের হেফাজতে থাকা ব্যবহৃত অস্ত্র লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হবে। তাই আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের একান্ত প্রয়োজন।’
অ্যাডভোকেট টুটুল বলেন, সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কারন জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনিত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না। গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের চবিবশ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে এবং আদালতের আদেশ ব্যতীত তাকে উক্ত সময়ের অধিককাল আটক রাখা যাবে না।’
কিন্তু রিমান্ড আবেদনে পুলিশ গত ০৫-০৮-২০২১ ইং তারিখে আটকের কথা উল্লেখ করে আজ ০৫-১০-২০২১ তরিখে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চেয়েছে। এটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী। আটকের পর এত দিন আসামিদের কোথায় কিভাবে রাখা হয়েছে তা রিমান্ড আবেদনে উল্লেক করা হয়নি। আমরা বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি। আদালত আগামী দিন আবার শুনানী করার দিন ধার্য করেছে। আশা করছি আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
আসামি এরান এলাহীর বড় ভাই দিদার হোসেন বলেন, আমার ভাই গ্রামে কৃষি কাজ করে। দীর্ঘ সময় নিখোঁজ ছিল। এখন শুনি তাকে ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। সে তো কখনো বাইরে গিয়ে থাকে না। সে ডাকাতি করবে কিভাবে? আসলে আমরা কিছু বুঝতেছি না। আমার বৃদ্ধ মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: শহিদুল আলম বলেন, রিমান্ড আবেদনে তারিখ ভুল হয়েছে। আমরা তারিখ সংশোধনের জন্য একটি আবেদন করেছি।