Site icon The Bangladesh Chronicle

আজিজের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদকের ‘ধীরে চলো নীতি’

আজিজের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদকের ‘ধীরে চলো নীতি’

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে ‘ধীরে চলো নীতি’ অনুসরণ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তাঁর বিরুদ্ধে গত ২৯ মে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কমিশনে জমা দেওয়া হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অভিযোগটি আমলে নেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত এটি কমিশনের যাচাই-বাছাই কমিটিতে আছে।

দুদক সূত্র জানায়, জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই করতে ৬ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই ভাইকে ঠিকাদারি কাজ দিয়ে অন্যকে লাভবান হওয়ার সুযোগ দেওয়া ও নিজে লাভবান হওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে আজিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁর এক ভাইয়ের ই-পাসপোর্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকায় এই চিঠি সেখানে পাঠানো হয়। জেনারেল আজিজের আরেক ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) গ্রহণের ক্ষেত্রে জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই অভিযোগ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এ-সম্পর্কিত তথ্য লিখিতভাবে দুদককে জানাতে বলা হয়েছে।

দুদকের উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, দুই মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন থেকে অভিযোগ সম্পর্কিত তথ্য পেলে সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। তাদের তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সে পরিপ্রেক্ষিতে তারা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটা মূল্যায়ন করা হবে। ওই সব ক্ষেত্রে অপরাধ হয়ে থাকলে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, দুদক নতুন করে ওই সব অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করবে।

দুই মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন কবে নাগাদ তদন্ত শেষ করবে, কবে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ প্রক্রিয়া শেষ করে দুদক নিজেই অনুসন্ধান শুরু না করে জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে।

জানা গেছে, সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য চাকরিতে থাকাকালে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়ালে বাহিনীর নিজস্ব আইন অনুযায়ী বিচার করা হয়ে থাকে। জেনারেল আজিজের ভাইদের ঠিকাদারি কাজ দিয়ে তাদের লাভবান হওয়ার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ সেনাবাহিনীর তদন্তের বিষয়। তবে দুদকের কাছে পাসপোর্ট ও এনআইডি জালিয়াতির আরও দুটি অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ দুটি দুদকের তপশিলভুক্ত। দুদক এই দুটি অভিযোগের  অনুসন্ধান পাশ কাটিয়ে গেছে।

আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট  সালাহ উদ্দিন রিগ্যান দুদকে জমা দিয়েছেন গত ২৯ মে। এতে আজিজের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফের জালিয়াতি করে এনআইডি ও ই-পাসপোর্ট নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এতে।

অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে– আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ আহমেদ মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২০১৪ সালে মোহাম্মদ হাসান নামে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি এনআইডিতে নিজের ছবি পরিবর্তন করেন। ওই ছবি পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করেছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ।

আজিজ আহমেদের আরেক ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফ দুটি এনআইডি নিয়েছেন। এর একটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে, তানভির আহমেদ তানজীল নামে। অন্যটি নিয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ জোসেফ নামে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনআইডি গ্রহণ করা ও একাধিক এনআইডি নেওয়া আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ছাড়া আজিজ আহমেদ ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

samakal

Exit mobile version