Site icon The Bangladesh Chronicle

আওয়ামী লুটপাটে রিজার্ভ ফতুরের পক্ষে শেখ হাসিনার সাফাই

AMARDESH.CO.UK
আওয়ামী লুটপাটে রিজার্ভ ফতুরের পক্ষে শেখ হাসিনার সাফাই
নিজস্ব প্রতিনিধি
আওয়ামী লুটপাটে ফতুর রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ নিয়ে সাফাই গাইছেন শেখ হাসিনা। অথচ, প্রবাসী শ্রমিক ও দেশী শ্রমিকদের কষ্টে অর্জিত বৈদেশিক মূদ্রায় গড়ে উঠেছিল রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ। সেই রিজার্ভ লুটপাট করেছে আওয়ামী লুটেরা দুর্নীতিবাজরা। রিজার্ভ ফতুরের পক্ষে সাফাই গেয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, রিজার্ভ জমিয়ে রাখলে হবে না। সে টাকা কাজে লাগাতে হবে।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনার ভাষায়, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি আজকে রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। ৯৬ সালের নির্বাচনের ঠিক তার আগে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত নিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আজ রিজার্ভ আমাদের কাজে লাগছে, কারণ আমরা করোনার টিকা দিয়েছি। আমাদের খাবার তেল সবকিছু বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। করোনায় বন্ধ ছিল অনেক কিছু। দুই বছর পর যখন বিশ্ব উন্মুক্ত হয়েছে, তখন ক্যাপিটাল ম্যাশিনারিজ এসেছে। আমাদের রিজার্ভ তো ব্যবহার করতেই হবে। আট বিলিয়ন আমরা আলাদাভাবে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছি। রিজার্ভ জমিয়ে রাখলে তো হবে না। সে টাকা কাজে লাগাতে হবে।
অথচ, কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুতে ইনডেমনিটি দিয়ে লুটপাট করেছে শেখ পরিবার ও তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। হাজারো কোটি টাকা লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থভাণ্ডারকে ফতুর করেছে আওয়ামী লুটেরারা। আর শেখ হাসিনা কাসুন্দি টানছেন বিভিন্ন কথিত উন্নয়নের।
উন্নয়নেসর কাসুন্দি টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় বিমান কিনেছি। আমরা পায়রা নদীর ড্রেজিং নিজেদের অর্থায়নে করছি। নইলে এই টাকা বিদেশি ব্যাংক থেকে নিতে হবে। সেই টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে। আজকে আমরা নিজের ব্যাংক থেকে এই টাকা নিয়েছি। নিজেদের রিজার্ভ ব্যবহার করছি। এতে ঘরের টাকা ঘরে থাকছে।
‘অর্থনীতিকে গতিশীল করাই আমাদের লক্ষ্য’ উল্লেখ করে ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ক্ষমতায় ছিল, দুর্নীতি-লুটপাট করে তারা এখন ষড়যন্ত্র করছে। আমার কথা বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, যে বাংলাদেশ জাতির পিতা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তারই আদর্শ সামনে নিয়ে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ২০২১-৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি। ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।
অথচ, সমুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা না দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপেক্ষায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে ছিলেন। তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন তখন তাঁকে স্বাধীনতার ঘোষনা দিতে অনুরোধ করলে তিনি প্রত্যাখান করেছিলেন। তাজউদ্দিনের কণ্যার লেখ-নেতা ও পিতা বইয়ে এ প্রসঙ্গে স্ববিস্তার উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, সেই দেশ গড়ার জন্য আমাদের যুবসমাজকে কাজ করতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। দারিদ্রসীমায় বিএনপি রেখে গিয়েছিল ৪০ ভাগ, আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে নিয়ে এসেছি।
‘আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাস্তাঘাট উন্নত করে আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ১০০টি ব্রিজ একসঙ্গে উদ্বোধন করা, আমি জানি না ইতিহাসে কেউ এর আগে করেছে কি না। একটানা ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতা আকড়ে থাকা শেখ হাসিনা দ্রুত বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে দুর্নীতি লুটপাটের সুবিধা করে দিতে ইনডেমনিটি দিয়ে আইন তৈরি করেন। কুইক রেন্টালে বৈদেশিক মূদ্রায় বিদ্যুৎ কিনে রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডার ফতুর করেছেন। লোডশেডিংয়ে এখন দিশেহারা দেশের মানুষ। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের কথা বললেও সারা দিনে প্রয়োজনের সময় বিদ্যুতের দেখা মিলে না এখন গ্রামে। শহরেও বিদ্যুতের একই অবস্থা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পারে। তাঁর ভাষায় জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। যে যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা এগিয়ে যাব।
শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে সরকারে ছিল বিএনপি। ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল বিএনপির সময়। আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত নিয়েছিলাম। কোভিড টিকা কিনেছি, বিনিয়োগ করেছি, বিমান কিনেছি, পায়রা বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। এভাবে রিজার্ভ থেকে খরচ হয়েছে। ঘরের টাকা ঘরে থাকছে। দেশের জনগণের উন্নয়নে এই টাকা ব্যবহার করছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।
তরুণ সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, তরুণ সমাজের দায়িত্ব দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। যুবলীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তিনি তার সরকারের আমলে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ উন্নয়ন প্রকল্প এবং পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘বিএনপি সরকারে থাকতে উন্নয়ন না করে লুটপাটে ব্যস্ত ছিল। আর এখন বিদেশ থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।’
এর আগে দুপুর ২টা ৩৯ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর সমাবেশ উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
Exit mobile version