খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ঢাকা বিভাগেরও কিছু আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই চার বিভাগের বেশ কিছু আসনে নতুন মুখ আসছে। এর মধ্যে অনেকেই এবার প্রথমবার ভোট করতে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হয়। এর আগের দিন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পর দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য মনোনয়ন বোর্ড গতকাল কোথায় বৈঠক করেছে এবং কোন কোন বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে, বিষয়টি গোপন রেখেছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকেলে ধানমন্ডিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিভাগ বললে নাম জানার জন্য নেতারা পীড়াপীড়ি করেন। এ জন্যই কিছুটা গোপনীয়তা।
তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের ঘনিষ্ঠরা বেশ কিছু আসনে পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলছেন। দলের নেতারাও নতুন যেসব মুখ আসতে পারে, সেগুলো নিয়ে দিনভর আলোচনা করেছেন। এসব সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গতকাল বরিশাল জেলায় দুটি আসনে পরিবর্তনের আভাস এসেছে। এর মধ্যে একটি আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নারী নেত্রী মনোনয়ন পাচ্ছেন। বরিশালের আরেকটি আসনে ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতার জায়গায় জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
যশোরে একটি আসনে সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন বলে জানা গেছে। ওই আসনে মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্যের মেয়ের জামাইকে বেছে নেওয়ার কথা এসেছে। ময়মনসিংহে একজন তরুণ সংসদ সদস্যের বাদ পড়ার কথা আলোচনা আছে। তবে তাঁর জায়গায় কে পাচ্ছেন, সেটা জানা যায়নি। জামালপুরে সাবেক এক শীর্ষ আমলা পাচ্ছেন—এটাও নিশ্চিত হয়েছে। ওই জেলার আরেকটি আসনে টানা বহুবারের একজন সংসদ সদস্যের বাদ পড়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
ঢাকা ও ফরিদপুরের কয়েকটি আসনে পরিবর্তন
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, ঢাকার একটি আসনে একজন ব্যবসায়ীকে বাদ দিয়ে জনপ্রিয় একজন চিত্রনায়ককে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। পুরান ঢাকার একটি আসনে ঢাকার সাবেক একজন মেয়রকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির একজন প্রভাবশালী নেতা। পুরান ঢাকার আরেকটি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন না দিয়ে তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করা হতে পারে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তিনি আগে ঢাকার একটি আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁকে এবার মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। ফরিদপুরের সদর আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবার পাচ্ছেন না বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে।
‘নতুনও এসেছে, বাদও পড়েছে’
গতকাল বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রার্থী তালিকা নিয়ে গোপনীয়তার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যখন বিভাগের নাম ঘোষণা করি, তখন ভিড় বেড়ে যায়, নির্দিষ্ট বিভাগ শুনলে পীড়াপীড়ি শুরু হয়ে যায়। কীভাবে নাম বের করা যায়। সে কারণে বিভাগের নাম ঘোষণা করছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুনও এসেছে, বাদও পড়েছে। নির্বাচনে জিতবে, যারা ইলেকটেবল, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা মনোনয়নের ব্যাপারটাকে সুনির্দিষ্ট করে এখন বলছি না। কারণ, এর মধ্যে আমরা যেসব প্রার্থী দিয়েছি, সেসব মনোনয়নে ভুলত্রুটিও থাকতে পারে। সেটাও আমাদের সংশোধনের একটা সুযোগ রেখেছি। এ কারণে আমরা ঠিক করেছি ভিন্নভাবে, জেলা বা বিভাগওয়ারি প্রার্থিতা ঘোষণা করব না। আমরা একসঙ্গে ৩০০ আসনের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে চাই।’
যাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা জয়ী হওয়ার মতো নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাঁরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। জনগণের কাছে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না।
উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হয়ে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাঁদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাঁরা আবার দাঁড়াচ্ছেন। তাঁরা এখানে মনোনয়ন চাইবেন, আমরা তাঁদের এখানে মনোনয়ন দিতেও পারি। কারণ, তাঁরা তো কাজ করার কোনো সুযোগ পাননি। সেই সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি যদি আমরা মনে করি, এই প্রার্থী এলাকাকে, পার্টিকে কিছু দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি আসবে না, সে কথা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বিএনপির এখনো আসার সুযোগ আছে। হয়তো বিএনপি দলীয়ভাবে, জোটগতভাবে না-ও আসতে পারে। বিএনপির ভেতর থেকে অনেকেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আছে। তাঁরা প্রার্থী হিসেবে অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। শেষ মুহূর্তে ছবিটা কোন পর্যায়ে যায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।’
জনপ্রিয় নন, এমন প্রার্থীকে অন্য দল থেকে এনে নির্বাচনে প্রার্থী করার ইচ্ছা নেই বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘শরিক দল হোক আর যে হোক, আমাদের বিবেচনায় যেটা আসবে, আমি আমার দলে প্রার্থী নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীকে বাছাই করছি। অন্য দল থেকে এলেও তাঁর জনপ্রিয়তা থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে, তারা তাদের মন্তব্য ব্যক্ত করেছে। ইসলামি দলগুলো নির্বাচনে আসবে।
আওয়ামী লীগ এখন ৩০০ আসনেই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, পরে জোটের শরিক ও মিত্রদের যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সেগুলোতে দলের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে।
প্রথম আলো