বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে হত্যা ও সহিংসতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড লেমিকে চিঠি দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশ’।
বুধবার ডেডিভ লেমিকে পাঠানো ওই চিঠিতে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে চলা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তুলতে তাঁর প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠনটি।
চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চায়। দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং দুই দেশই কমনওয়েলথ মূল্যবোধ বহন করে। আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং বিচারের জন্য সবচেয়ে কার্যকর সংস্থা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
চিঠিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ দুই দেশই আইসিসির সদস্য হওয়ায় সংস্থাটির মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগী কর্তাব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। সুতরাং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য এই উদ্যোগ নেবে বলে আশা করে জাস্টিস ফর বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনার বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির তিন সমন্বয়ক আইনজীবী ব্যারিস্টার মাইকেল পোলাক, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান আব্বাস ফয়েজ এবং ব্রডকাস্টার ও বাংলাদেশবিষয়ক রাজনীতি বিশ্লেষক আতাউল্যাহ ফারুক।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গণহত্যা হয়েছে এবং তা হয়েছে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে। বর্তমান ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশি শাসকের আদেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এর যথেষ্ট প্রমাণ আছে।
১২ আগস্ট প্রকাশিত একটি ভিডিও কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এতে একজন বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তাকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে ওই কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমরা যখন গুলি করি, তখন একজন মারা যায় এবং অন্য একজন আহত হয়। শুধু একজন পড়লেও, বাকিরা যায় না স্যার। এটা, স্যার, সবচেয়ে বড় আতঙ্কের।’
জাস্টিস ফর বাংলাদেশের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে পাওয়ার আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন, এমন প্রমাণ রয়েছে। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এই মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী হতে পারেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনা শাসনামলে ৬০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি গুমের শিকার হন।
সংগঠনটি আরও বলেছে, বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার গোপন আটক ও নির্যাতনের অস্তিত্ব নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা বলেছে। যদিও ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি এ ধরনের গোপন টর্চার সেলের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ছয় আগস্ট এসব গোপন টর্চার সেল থেকে ফিরে এসেছেন অনেকে। ভুক্তভোগীরা তাঁদের ওপর চালানো নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁরা এখন বেআইনি অপহরণ, জোরপূর্বক গুম এবং নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারেন।
prothom alo