আইএমএফের সামনে ব্যর্থতা তুলে ধরলো বাংলাদেশ ব্যাংক

 

গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। ঋণ দেয়ার অন্যান্য শর্তের মধ্যে একটি ছিলো চলতি বছরের জুনের মধ্যে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) ২৪.৪৬ বিলিয়ন রাখা। তবে সেই শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয় হয়েছে বাংলাদেশ। এরমধ্যেই দ্বিতীয় কিস্তির আগে শর্তের অগ্রগতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের ব্যর্থতা তুলে ধরেছে বলে জানা গেছে।বুধবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ’র সাথে বৈঠকে ঋণের শর্ত অনুযায়ী যেসব সস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে সে বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ছয়টি শর্ত দিয়েছিল সংস্থাটি। এর মধ্যে দুটি পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। কেন বাংলাদেশ এই দুটি শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তা অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠি লিখে এই ঋণদাতা সংস্থাটিকে ব্যাখ্যা করেছে।

জানা যায়, নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) ছাড়া বাংলাদেশ অন্য যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে- তা হলো ন্যূনতম রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা। গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আইএমএফ নির্ধারিতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা কম আদায় করেছে। এ জন্য চলতি অর্থবছর জিডিপির অনুপাতে ০.৫% বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।

আইএমএফ’র শর্ত অনুসারে, নতুন অর্থবছরে এনবিআরের যে স্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তার চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে।

জুনের মধ্যে যেসব শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে, তা হলো সুদের হার নির্ধারণে করিডোর ব্যবস্থা চালু করা ও আইএমএফ’র বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের প্রতিবেদন প্রকাশ।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (জিআইআর) এর তথ্য প্রকাশ করে, তবে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভের (এনআইআর) তথ্য প্রকাশ করে না। বর্তমানে জিআইআর হিসেবে রিজার্ভ রয়েছে ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব হিসেবে রয়েছে ২৭.০৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শর্ত অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে এনআইআর হিসেবে ২৫.৩২ বিলিয়ন ডলার রাখার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু এখানে এনআইআর হিসেবে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি জিআইআর হিসেবে ব্যর্থ।
এছাড়া মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা ও ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি কর্মপরিকল্পনা শেষ করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করা শর্ত ছিল সংস্থাটির। এই দুইটি শর্ত পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, ঋণ কর্মসূচির পরিমাণগত লক্ষ্যমাত্রা ও সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য কর্মসূচির প্রথম পর্যালোচনা শুরু করতে এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছে আইএমএফের প্রতিনিধি দল। মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইএমএফ’র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।
ঢাকায় অবস্থানের দ্বিতীয়দিন বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আবদুর রউফ তালুকদার ও অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করবেন আইএমএফ কর্মকর্তারা।

আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা অবস্থানকালে তারা সরকারের এক ডজনের বেশি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন। তারই অংশ হিসেবে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে উদ্বোধনী বৈঠক শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক করবে সংস্থাটি। সারাদিনই ব্যস্ত সময় পার করবেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। জানা গেছে, তারা বিভিন্ন টেকনিক্যাল বৈঠকে অংশ নিবেন। এদিন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। তার সঙ্গে থাকবেন ডেপুটি গভর্নররা।
এছাড়া হেড অব বিএফআইইউ, চিফ ইকোনমিস্ট ও বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালকগণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বৈঠকে যোগ দিবেন। বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তথ্য পর্যালোচনামূলক আলোচনায় অংশ নেবে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

সূত্র : মানবজমিন