Site icon The Bangladesh Chronicle

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাচ্ছে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(১১ ঘন্টা আগে) ২৪ জুন ২০২৪, সোমবার, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় তৃতীয় কিস্তির প্রায় ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী দুইদিনের মধ্যে এ ডলার ছাড় হয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ নির্বাহী বোর্ড বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করেছে। এ কিস্তির ১১১ কোটি ৫০ ডলার আগামী দুই দিনের মধ্যে ছাড় হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এর আগে গত ২৪শে এপ্রিল ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বরভিত্তিক শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসে আইএমএফ মিশন। সংস্থাটির ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকনোমিকস ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক ও পর্যালোচনা কার্যক্রম শেষে গত ৮ই মে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ সরকার এবং আইএমএফ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছেন।

বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের ৩০শে জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার  ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু  রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের বাস্তাবয়ন ও আগামী আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বিনিময় হারে কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় আজ ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের অনুমোদন দেয়া হয়। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।

 

এ ঋণের একটি অংশ জলবায়ু তহবিলের, যা বাংলাদেশকেই প্রথম দেওয়া হয়েছে। তাই এ কর্মসুচি অব্যহত থাকুক তা চায় আইএমএফ। এ জন্য বাংলাদেশের অনুরোধে চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুন শেষে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশশিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সরকারের অনুরোধে আইএমএফ পরে সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বা ৪৮ বিলিয়ন। এখন এখন এ রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নিচে রয়েছে। তবে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত প্রায় ২৬ কোটি ডলার বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ১২ জুন রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৫২ কোটি ডলার। গত বুধবার তা ২৬ কোটি ডলার বেড়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ বেড়েছে ৩১ কোটি ৮২ লাখ ডলার। চলতি মাসের শুরুতে বিপিএম–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৮৭২ কোটি ডলার। গত ১২ জুন  বেড়ে হয় ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। গত বুধবার ১ হাজার ৯৫২ কোটি ৭৯ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে আইএমএফের নিট হিসাবে এ রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের নিচে। ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী তা জুন শেষে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ আরও কিছুটা বাড়বে।

এদিকে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট-২ (ডিপিসি) এর আওতায় এ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ওয়াশিংটনে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বোর্ডসভায় ঋণের অনুমোদন দেয়া হয়। রিজার্ভের পরিমাণ আরও বাড়াতে অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকেও বাজেট সহায়তার চেষ্টা করছে সরকার।

Exit mobile version