Site icon The Bangladesh Chronicle

অবশেষে খতিব রুহুল আমিনকে অপসারণ

mzamin

আমৃত্যু খতিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব রুহুল আমিন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছেয় তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর নিজেও পালিয়ে যান খতিব রুহুল আমিন। কিন্তু গত জুমায় ফের মসজিদে এসে নিজেকে বৈধ খতিব দাবি করেন রুহুল আমিন। তার আগে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। আগ্রহ প্রকাশ করেন আজীবন খতিব থাকার। কিন্তু উপদেষ্টা মুসল্লিদের অসন্তোষের কথা বলে তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। কিন্তু খতিব সেটি না করে মসজিদে আসলে তুলকালম কাণ্ড ঘটে যায়। নিজ অনুসারীদের নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলে উত্তেজনা তৈরি হয় মুসল্লিদের মধ্যে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত হন কয়েকজন। এ ঘটনার পর গতকাল তাকে অপসারণ করেছে সরকার। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে খতিবের পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এক প্রেস রিলিজে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেন বলেন, সাবেক খতিব মুফতি রুহুল আমিনের নিয়োগপত্রে কোনো শর্ত নেই, মেয়াদ নেই। এটা অসম্পূর্ণ। বায়তুল মোকাররমে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার আগে মুফতি রুহুল আমিন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি দেখা করে বলেন, আমৃত্যু আমি চাকরিতে আছি। আমি মারা গেলে এই পদ খালি হবে। অথবা আমি পদত্যাগ করলে এটা খালি হবে। এটা বলার পর আমার কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হয়নি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল এনে দেখলাম তার নিয়োগপত্রে এ কথা লেখা আছে। এখানে কোনো মেয়াদ উল্লেখ নেই। তার মানে আমৃত্যু। এরপর তাকে বলা হয়, আপনাকে নিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে মুসল্লিদের মধ্যে অসন্তোষ হচ্ছে। চিন্তা-ভাবনা করে আপনি সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি আমার কাছে একটি ছুটির দরখাস্ত ও মেডিকেল সার্টিফিকেট দেন। তিনি অসুস্থ। তার লান্সে পানি জমেছে। এ জন্য তিনি গত ১৩ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। চিকিৎসকরা বলেছেন তার বিশ্রামের প্রয়োজন। এ সময় তাকে বলা হয়, যেহেতু মসজিদের মুসল্লিদের সেন্টিমেন্ট ভালো নয়, তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্তটা আপনি নেবেন। তিনি গত জুমাতে তার চার কাতার অনুসারী নিয়ে বায়তুল মোকাররমে প্রবেশ করেন। এ সময় মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উপদেষ্টা বলেন, তিনি আসবেন এটা জেনে আমরা আইনগতভাবে তাকে না আসার কথা বলতে পারি না। যেহেতু আমরা তাকে বহিষ্কার করিনি এবং কোনো পদক্ষেপ নেইনি। তিনি তো বিদ্যমান। গণমাধ্যমে তাকে চুক্তিভিত্তিক বলা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে তো আমাদের কোনো চুক্তি নেই। মন্ত্রণালয়ের একটি চুক্তিনামা ছিল। তিনি যখন বিগত সরকারের আমলে যোগদান করেন তখন সেই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেননি। মন্ত্রণালয় একটি চুক্তিনামা তৈরি করে রাখলেও তিনি সেটাতে স্বাক্ষর করেননি। ফলে আমাদের সঙ্গে তার কোনো চুক্তি নেই। তিনি  বলেছেন, আমি আজীবন, আমৃত্যু থাকবো। বায়তুল মোকাররমের কোনো খতিব মারা যাওয়ার আগে পদ থেকে অব্যাহতি পাননি। সাবেক খতিব সালাউদ্দিনকে ৫ বছর বিছানায় সজ্জাশায়ী অবস্থায় রেখে সরকার তার বেতন দিয়েছেন। কেন এসব করতে হয়েছে সেটা আমরা জানি না বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটাকেই স্টেজ হিসেবে ধরে ছিলেন মুফতি রুহুল আমিন। পুরোনো ঐতিহ্য আছে ‘মারা গেলে অন্য কেউ খতিব হবে। অসুস্থ হলে বিছানায় বসে তার বেতন পৌঁছে যেতো’। তাই তাকে আমরা আসতে বাধা দিতে পারি না। তিনি চাকরিরত। অসুস্থ। যেহেতু ১৩ই সেপ্টেম্বর তার ছুটি শেষ। তাই তিনি মসজিদে আসবেন এটা আমরা জানতাম। সংঘাত হতে পারে এই আশঙ্কায় আমরা গত জুমায় পুলিশ, সেনাবাহিনী এনে রেখেছি মসজিদ প্রাঙ্গণে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যোগাযোগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রাখেন। এ সময় মসজিদের ভেতরে যেহেতু মারামারি হচ্ছিল সেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী প্রবেশ করাটা মসজিদের ভাবগম্ভির্য নষ্ট হবে। তাই তারা মসজিদের নিচতলায় অবস্থান করেন। সাবেক খতিব এ সময় খুৎবা দিবেন। এ সময় মূলত দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক মুসল্লি তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একটি মামলা করেছেন। একইসঙ্গে আমরাও সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। এ ছাড়া একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি আমরা। তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধেই প্রতিবেদন দিয়েছেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ইমাম নিয়োগ-অপসারণ এর ক্ষেত্রে একটি বিধি আছে। এই বিধি অনুসরণ করে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে দু’জন খতিব থাকার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন,  দু’জন নয়। কাবা শরিফে ৪ জন খতিব আছেন। এখানে তিনি যেহেতু অনুপস্থিত ছিলেন তাই আমরা ৪ জন ইমামকে নিয়োগ দিয়েছি। একেক জুমাতে একেক জন নামাজ পড়াবেন। এবং নামাজ আদায় করা। তার পদ শূণ্য হওয়াতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে একজন কিংবা একাধিক ইমাম এর একটি প্যানেল করে খতিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। অথবা একজনও হতে পারে বলে জানিয়েছেন। এর আগে গত শুক্রবার নামাজের খুতবা চলাকালীন সাবেক খতিব রুহুল আমিনের নেতৃত্বে বেশকিছু মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে একপর্যায়ে তারা বর্তমান খতিবের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়। এ সময় মুসল্লিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।

manabzamin

Exit mobile version