Site icon The Bangladesh Chronicle

Who will be next President?

next-president

মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের মৃত্যুজনিত কারণে দেশে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয়েছে। আগামী ১৯ জুনের মধ্যে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।

এখন পর্যন্ত নানা মহলে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য যেসব নাম আলোচিত হচ্ছে, তার মধ্যে আছেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সাবেক স্পিকার আব্দুল হামিদ এডভোকেট, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় কন্যা শেখ রেহানা, মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান প্রমুখ। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া ঐতিহাসিক রায় প্রদানকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি এবি এম খায়রুল হকের নামও চলে আসছে আলোচনায়।

তবে কে রাষ্ট্রপতি হবেন সেটি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া দ্বিতীয় কারও জানা নেই। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কারও সঙ্গে পরামর্শ করবেন বা করে থাকেন বলে কেউ বিশ্বাসও করেন না। তাই আলোচনার ঝড় যতই তীব্র হোক না কেনো অপেক্ষা করতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত যখন প্রকাশ্যে ঘোষণা হবে-সে পর্যন্ত। যদিও আলোচনার টেবিলে এমন কথাও চাউড় হচ্ছে যে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাষ্ট্রপতি হয়েও যেতে পারেন। এরকম গুজবও রয়েছে যে, সংসদীয় পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে ফিরে যেতে পারে সরকার। এসব গুজব-গুঞ্জন আর আলোচনা আরও ততদিন চলবে যতদিন না শেখ হাসিনা নিজে মুখ খোলেন। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন দ্রুতই এসব গুজবের অবসান ঘটানো জরুরি।

দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী-দল এমনকি দেশের বিশিষ্টজনেরাও বলছেন সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়-এমন ব্যক্তিকেই যেনো নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বিবেচনা করা হয়। এরকম অনুভূতির সঙ্গে সরকারি দলের অনেকেই সহমত পোষণ করছেন। মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষ সকলেই কার্যত এক কাতারে শামিল হয়েছিলেন। সেই অনুভূতি থেকে জনসাধারণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে দুটি প্রধান দল।

বিএনপিসহ ১৮ দল তাদের সরকার বিরোধী কর্মসূচি স্থগিত করে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে। তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হলে তা আগামীদিনের রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

রাজনৈতিক অঙ্গন, বিদেশি দূতাবাস, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এখন আলোচনা মুখ্য বিষয় পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে। এখন যিনি রাষ্ট্রপতি হবেন তিনি আগামী পাঁচ বছরের জন্য হবেন। অর্থাত্ বর্তমান সরকারের মেয়াদের আরও অতিরিক্ত চার বছরকাল তিনি রাষ্ট্রপতি থাকবেন। সে বিবেচনায় রাষ্ট্রপতির পদটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্রধানমন্ত্রী শাসিত সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা বাস্তবে সীমিত, তবুও ব্যক্তিবিশেষের নৈতিক দৃঢ়তা রাষ্ট্রের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, যদি নৈতিকভাবে দৃঢ়চেতা কোনো একজনকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করা হয়, সে ক্ষেত্রে সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে জাতিকে সঠিক নির্দেশনার দিকে নেয়া অসম্ভব হবে না।

জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বিদ্যমান সকল দলের কিছু নেতার বক্তব্যে এমন আশা করছেন অনেকেই। তবে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী এ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকায় অনেকে বলছেন এ দু’জন যেটি বলবেন সেটিই চূড়ান্ত। অন্যরা কে কি বলছেন সেটি বিবেচনায় না নেয়াই ভাল। অনেকে অবশ্য এমনও বলছেন, সরকার যদি শুধুমাত্র দলীয় রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনার মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়-তবে তা বর্তমানের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিতে পারে।

অপরদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কোন বক্তব্য থাকলে সংসদে এসে তা উপস্থাপনের জন্য বিরোধীদলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল এক স্মরণ সভায় তিনি এ আহবান জানান। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আশা করছি, সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে নানা গুঞ্জন আছে। জাতি আশা করে একজন সত্যিকারের রাজনীতিক যিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য তিনিই হবেন রাষ্ট্রপতি।

বর্তমান সংকট উত্তরণে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার রফিকুল হক। তিনি বলেন, সরকারের সামনে এখন বিরাট সুযোগ রয়েছে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের। সরকার তা কাজে লাগালে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।

অন্যদিকে দল নিরপেক্ষ এবং সব মহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এমন একজন রাষ্ট্রপতি দেখতে চাই যিনি হবেন একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। আমরা আশা করি সরকার প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে। অন্যথায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে আন্দোলন ছাড়া বিরোধী দলের অন্য কোনো বিকল্প পথ খোলা থাকবে না। তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন-নির্যাতনের পরও আমরা প্রয়াত রাষ্ট্রপতির প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা দেখিয়েছি। আমাদের এই সদিচ্ছায় আশা করি, সরকার এগিয়ে আসবে যাতে দেশে কোনো সংঘাতের সম্ভাবনা আর না থাকে।

Source:

Exit mobile version