Site icon The Bangladesh Chronicle

UNO peacekeeping missions considering barring Bangladesh Police from participation

কিছু পুলিশ সদস্যের বেআইনী ও অমানবিক আচরণ পুরো পুলিশ বিভাগকেই প্রশ্নের মুখোমুখি করে দিয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এতে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের পুলিশ এখন দারুণ ‘ইমেজ সঙ্কটে’ পড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের বিদায় করে দেয়া হতে পারে বলেও কথা উঠেছে। জানা গেছে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে মনিটর শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কয়েক মাস ধরে পুলিশ যেভাবে বিনা কারণে গুলি বর্ষণ এবং বিচারবহির্ভূত মানুষকে মেরে ফেলছে তা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মানুষকে আটকের পর এবং থানায় নিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে কিভাবে গুলি করছে তা মিডিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ পুলিশ এখন দারুণ সমালোচনার মুখে। সূত্র জানায়, এক মাসে পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে দেড় শতাধিক মানুষ। প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অনেক ঘটনায় পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবসহ নানা সামাজিক মাধ্যমেও তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। মিছিল-সমাবেশে পুলিশকে প্রকাশ্যেই গুলি করতে দেখা গেছে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি মহিলা এবং শিশুরাও। অনেক এলাকায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের পরে হাজার হাজার আসামি করে মানুষকে চরম হয়রানির মধ্যে রেখেছে। আসামি ধরার নামে পুলিশ সাধারণ মানুষকেও চরমভাবে নাজেহাল করছে বলে অভিযোগ আছে। আটকের পর মানুষকে দিনের পর দিন নিখোঁজ করে রাখার ব্যাপারেও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সঠিক সময়ে তাদের আদালতে হাজির না করারও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

পুলিশ হেফাজতে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে কয়েকজনকে আটকের পর পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। থানায় তাদের মধ্যে কয়েকজনের পায়ে গুলি করা হয়। তাদের মধ্যে পঙ্গু হয়ে গেছে আলমগীর হোসেন ভূইয়া নামে এক ব্যবসায়ী এবং ফাহাদ নামে এক ছাত্রের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলমগীর এবং ফাহাদ বলেছেন, পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে পায়ে গুলি করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থানার ওসি আব্দুল মোমেন নিজেই আলমগীর এবং ফাহাদের পায়ে গুলি করেন।

গত ১৮ মার্চ প্রকাশ্যেই পায়ে গুলি করা হয় মাহবুব কবির নামে এক পথচারীর। মিরপুর থানার কাছেই এই ঘটনা ঘটে। হরতালে পুলিশ ও হরতালকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় কবির রিকশাযোগে ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাকে ধরে তার পায়ে পরপর কয়েকটি গুলি করে। এতে তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের হাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

গত ১১ মার্চ নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশ যা করেছে তা কয়েকটি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের মানুষ লাইভ দেখেছেন। একটি দলের কার্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশ এভাবে তাণ্ডব চালাতে পারে তা অনেকেরই বোধগম্য নয়। যারা এই দৃশ্য দেখেছেন তারা হতবাক হয়েছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে ব্যাপক হারে ভাঙচুর চালায় এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ১৫৬ জনকে ধরে নিয়ে যায়। পর দিন অবশ্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ চৌধুরীকে ছেড়ে দেয়। বাকি ১৫৩ জনকে মামলার আসামি করে আদালতে সোপর্দ করে।

দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এসব ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘সরকারকে অবিলম্বে নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই হত্যার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।’ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশের নির্বিচার গুলি বর্ষণ এবং হত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়। কিন্তু এরপরেও বন্ধ হচ্ছে না পুলিশের নির্বিচারে মানুষ হত্যার ঘটনা।

সূত্র জানায়, পুলিশের এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যার প্রভাব জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের অংশগ্রহণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের বেশ সুনাম রয়েছে । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কিছু পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি পুরো পুলিশ বাহিনীকেই ইমেজ সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। সূত্র জানায়, শান্তি রক্ষা মিশনে গত ১২ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১১ হাজার ৬২৯ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন আরো এক হাজার ৮২০ জন পুলিশ সদস্য। সম্প্রতি পূর্ব তিমুরের মিশন বন্ধ হয়ে গেছে। আর হাইতিতে লোকবল কমানো হয়েছে। ১৩টি মিশনে এখন বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা কর্মরত আছেন। সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যই রয়েছেন যাদের স্বপ্ন থাকে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হবে। এ বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে কেউই কথা বলতে রাজি হননি।

 Source: Naya Diganta

Exit mobile version