Site icon The Bangladesh Chronicle

Playing with the Civil Society – A survival technique

Minar Rashid

বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট নাকি সারভাইভেল টেকনিক ?

সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ লাগাবো কোথায় ? এই হয়েছে আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি । এই কিছিমের হতাশায় আক্রান্ত হয়েছিলেন আমার এক দাদী। সেই দাদীর ছিল সারা শরীরে চুলকানি। ডাক্তার,বৈদ্য, ওঝা, কবিরাজ কেউ তার শরীরের চুলকানি বন্ধ করতে পারে নি। পরিশেষে কোন এক সুহৃদ (সুশীল) তাকে পরামর্শ দিল মরিচ চিকিৎসার। দাদীকে যুক্তি দিয়ে বোঝানো হলো, যে ওষুধ যত তিতা লাগবে বা ধরবে , সেই রোগ তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে । এই সুহৃদ বা সুশীলের যুক্তিটি দাদীর খুব মনে ধরেছিল। সুহৃদের সুপরামর্শে
কোন এক শুভ ১/১১তে তিনি সত্যি সত্যি সেই চিকিৎসা নিজের উপর প্রয়োগ করে বসলেন। অর্থাৎ শরীরের চুলকানির জায়গাগুলিতে সোজা মরিচ বাটা লাগিয়ে দিলেন। এর পরের দৃশ্যটি সহজেই অনুমেয়। মাইকেল জ্যাকসনও মনে হয় শরীরকে এমনভাবে বাঁকাতে পারতেন না। তার ভয়ংকর চিৎকার ও নাচানাচিতে পুরো পাড়ার মানুষ জড়ো হয়ে পড়েছিল। আমরা ছোটরা ভেতরের ট্রাজেডিটি বাদ দিয়ে বাইরের মজাটি খুব করে উপভোগ করেছিলাম।

এদেশের শেকড় ছেড়া কিছু সুশীল এক এগারো নাম দিয়ে আসমান থেকে এক ঝাঁক ফেরেশতা নিয়ে এসে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে। বিশেষ করে দুজন বিশিষ্ট সম্পাদক এর শতভাগ কৃতিত্ব দাবি করে বসেন। নিজের কৃতিত্ব হাইজ্যাক হয়ে যাচ্ছে দেখে আওয়ামী লীগ নেত্রীও তদ্রুপ আওয়াজ তুলেন, এটাকে তাদের আন্দোলনের ফসল বলে জোর দাবি করেন । এমতাবস্থায় দৈনিক যায় যায় দিনে আমার দাদীর এই গল্পটি তুলে ধরেছিলাম। কারন এক এগারোকে (জাতির জটিল রোগ সারাতে ) আমার কাছে দাদীর মরিচ চিকিৎসার মতই মনে হয়েছিল।
আমার দাদীর সেই মরিচ চিকিৎসার মত কোন চিকিৎসা দিয়ে এই সুশীলচক্র রাতারাতি জাতির সকল রোগ সারাতে চাইলেন। পরের ইতিহাস সকলের জানা। আজ জাতির এই ভয়ংকর কাতরানো এক এগারোর সুশীলদের সেই মরিচ চিকিৎসার সরাসরি প্রভাব।

দৈনিক প্রথম আলোতে আসিফ নজরুলের ‘হারবে বাংলাদেশ’ লেখাটি পড়ে দাদীর সেই গল্পটি আবারো মনে পড়ে গেল। আসিফ নজরুলের আজকের লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছে জাতিকে আবারও বোধ হয় কোন মরিচ চিকিৎসার জন্যে প্ররোচিত করা হচ্ছে।

দেশের মধ্যে যে কয় জন চিকিৎসক অসুস্থ্য দেশটিকে তাদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তন্মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল অন্যতম। তিনি এই মহা আকালের সময়ে অনেক অপ্রিয় সত্য কথা উচ্চারন করে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে নিজের আসনটি আরো পোক্ত করে ফেলেছেন। নির্মোহ সত্য বলার চেয়ে সকল দিক সামলিয়ে গড় করে কথা বলার দিকেই তার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে । হতে পারে বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে এটা তাঁর কোন সারভাইভেল টেকনিক। কারন তাঁর চেয়েও অধিক ক্ষুরধার যুক্তি, চমৎকার বাচনভঙ্গি ও প্লিজেন্ট চেহারা নিয়ে ডঃ তুহিন মালিক টিকতে পারেন নি। কিন্তু আসিফ নজরুল টিকে রয়েছেন। এখনও মাঝে মাঝে জনতার পক্ষে মাঝে মাঝেই ছক্কা পিটান। তাঁর অনেক বক্তব্য বিএনপি জামায়াতের কাছে চৈত্রের দারুন খরায় এক পশলা বৃষ্টির মত লাগে ।

‘হারবে বাংলাদেশ’ নামক লেখাটিকে এই প্রেক্ষাপটেই বিচার করতে হবে। কারন নির্মোহ সত্য কথাটি লিখে ফেললে তিনিও ‘দলকানা’ বিএনপি জামায়াত হিসাবে গণ্য হয়ে পড়তে পারেন । আওয়ামী লীগের পক্ষে অনর্গল মিথ্যা বলে যারা দলকানা হিসাবে প্রতিপন্ন হয়েছেন (তাদের সাথে বিপরীত তুলনা টানার জন্যে) বিএনপি জামায়াতের পক্ষে সত্য বললেও দলকানা খেতাবটি ন্যায্য মূল্যে বিতরন করা হয়। আমাদের সকল বিবেক বুদ্ধি আজ এই গ্যাড়াকলে আটকে গেছে।

আর এই সুযোগটি পুরাপুরি গ্রহন করছে বর্তমান ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীটি।
কাজেই গণতন্ত্রের পক্ষের আন্দোলনটিকে শুধুমাত্র বিএনপি জামায়াতের আন্দোলন হিসাবে অভিহিত করে প্রকারান্তরে এই ফ্যাসিবাদকেই সহায়তা করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্যে এই সংগ্রামটিকে এরা ইনিয়ে বিনিয়ে বিএনপি জামায়াতের ক্ষমতা দখলের আন্দোলন হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে। আসিফ নজরুল সঠিক কথাটি বলার হিম্মত পাচ্ছেন না । তার এই নির্মম গড়ের খেলাটি গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে হতাশ করার কাজেই বেশি ব্যবহৃত হবে বলে মনে হচ্ছে।

তিনি লিখেছেন, ” আর যদি বিএনপি জিতে যায় এই আন্দোলনে? যদি নতি স্বীকার করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায় সরকার? এই সম্ভাবনা আসলেই কম। বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল হচ্ছে জনজীবন ও অর্থনীতিকে জিম্মি করে সরকারকে হটে যেতে বাধ্য করা। “

আসিফ নজরুলের কাছে প্রশ্ন, এই সরকারকে হঠানোর অন্য কোন বিকল্প রাস্তা দয়া করে বাতলে দিবেন কি ? এই মুহুর্তে বিএনপিকে কি কোন সুপরামর্শ দিতে পারেন যাতে কয়েকদিনের মধ্যেই সরকারের পতন হয়ে যায় ?

নব্য বাকশাল ইতোমধ্যেই বিরোধী দলকে এক পা উপরে তুলে খাড়া করে রেখেছে। নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীরা তাদের অপর পাটিও উপরে তুলে হাটার পরামর্শ দিচ্ছেন।

ইন্টেলেকচুয়ালদের এই ধরনের ত্যানা পেচানোর জন্যে বা হীনম্মন্যতার কারনেই ফ্যাসিবাদ দীর্ঘায়ূ হচ্ছে এবং জনগণের দুর্ভোগটি উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জগত যদি (ফলাফল কার পক্ষে যাবে তা না ভেবে) নির্মোহ সত্য কথাটি বলতে পারতেন তবে জাতি আজ এই দুর্ভোগে কখনই পড়তো না।

Exit mobile version