Site icon The Bangladesh Chronicle

ফের সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারত। প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলা নেপালকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে অষ্টম বারের মতো ট্রফি নিলো


ফের সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারত। প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলা নেপালকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে অষ্টম বারের মতো ট্রফি নিলো সুনীল ছেত্রীরা। যদিও আগের বার মলদ্বীপের কাছে হেরে রানার্স হয়েছিল ভারত। এবার ট্রফি না পেলেও প্রথমবারের মতো রানার্স আপের গৌরব অর্জন করল নেপাল।

শনিবার রাতে মালের মাঠে ১৩তম সাফের চূড়ান্ত ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় বৃষ্টির মাঝে। প্রথমার্ধে কোনো দলই গোল করার সুযোগ না পেলেও দ্বিতীয়ার্ধে অভিজ্ঞ দল ভারত নেপালকে বৃষ্টির সাথে গোলের বন্যায় ডুবিয়েছে। ভারতের হয়ে ১টি করে গোল করেন ছেত্রী, সুরেশ ও সামাদ।

সাতবারের সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারতের মুখোমুখি প্রথমবার ফাইনালে ওঠা নেপাল। অবশ্য টুর্নামেন্টের সবথেকে সফল দলের বিরুদ্ধে নিঃসন্দেহে কঠিন লড়াই প্রথম সাফ খেতাবের খোঁজে থাকা নেপালের। এর মধ্যদিয়ে পর্দা নামলো ১৩তম সাফের।

এই আসরে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সর্বাধিক মোট আটবার সাফ কাপ জিতল ভারতীয় ফুটবল দল। শনিবার ফাইনাল ম্যাচের ৮৬ মিনিটে পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে মাঠে নামেন সাহাল আব্দুল সামাদ। ৯০ মিনিটে তিনি গোল করে ভারতকে ৩-০ এগিয়ে ট্রফি নিশ্চিত করেন।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ের ম্যাচে ৫০ মিনিটে সুরেশ সিংয়ের গোলে ব্যবধান বাড়িয়ে ২-০ করে ভারত। ইয়াসিরের ক্রসে পা ছুঁয়ে নেপালের জালে বল জড়িয়ে দেন সুরেশ। এর ঠিক দু’মিনিট পর খেলার ৫২ মিনিটে আরো একটি গোল করার সুযোগ পেয়েছিল ভারত। যদিও নেপাল ভারতের আক্রমণ প্রতিহত করে। এর আগে খেলার ৪৯ মিনিটে ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী ফাইনাল ম্যাচে প্রথম গোল ১-০ এগিয়ে নেন দলকে। প্রীতম কোটালের ক্রস থেকে হেডে গোলটি করেন তিনি। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের ৮০তম গোল করে লিওনেল মেসিকে ছুঁলেন ভারতের ছেত্রী।

এ দিকে ৮৬ মিনিটে মনবীর, ছেত্রী ও অনিরুদ্ধকে তুলে নেয় ভারত। পরিবর্তে মাঠে নামায় রহিম আলি, আব্দুল সামাদ ও জ্যাকসন সিংকে। এর আগে ৮২ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন ভারতের মান্দার রাও দেশাই। নেপাল পুজনকে তুলে নিয়ে সন্তোষ তামাংকে মাঠে নামায়।

খেলার ৭৭ মিনিটের মাথায় রোহিতের হেডার ক্রসবারে প্রতিহত হয়। গোলের সুযোগ নষ্ট হয় নেপালের।

৭৫ মিনিটে জোড়া পরিবর্ত ফুটবলার মাঠে নামায় ভারত। তারা ইয়াসিরকে তুলে নিয়ে উদান্তাকে আক্রমণে নিয়ে আসে। রালতের বদলে ভারত মাঠে নামায় গ্লেন মার্টিনসকে। ৭২ মিনিটে রালতের শট প্রতিহত হয়। ৭৩ মিনিটে থাপার ফ্রি-কিক চিংগ্লেনসানার কাছে পৌঁছনোর আগেই নেপালের কিপার তা পাঞ্চ করে দূরে সরিয়ে দেন। নেপাল-ভারত ফাইনাল ম্যাচের ৬৭ মিনিটের মাথায় ছেত্রী ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ফেলেছিলেন প্রায়। মনবীরের কাছ থেকে বল পেয়ে ছেত্রীর দিকে এগিয়ে দেন সুরেশ। যদিও ছেত্রীর শট প্রতিহত করেন লিম্বু। এর ঠিক দু’মিনিট আগে ৬৫ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয়বার ফুটবলার বদল করে নেপাল। তারা সুমন লামাকে তুলে নিয়ে সুনীল বলকে মাঠে নামায়।

ম্যাচের ৫৬ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন নেপালের তেজ তামাং। ৫৮ মিনিটে সুজলের পরিবর্তে নেপাল মাঠে নামায় আয়ূষ ঘালানকে।

গোলশূন্য প্রথমার্ধ
প্রথমার্ধেও মাঠে ভারতের দাপট ছিল বেশি। যদিও গোল করতে পারেননি ছেত্রীরা। কিন্তু বিরতিতে ম্যাচ গোলশূন্য। ছেত্রীর সুযোগ নষ্টে লিড নিতে পারেনি ভারত। বেশ কয়েক দফায় ভারতের ছন্দবদ্ধ আক্রমণ প্রতিহত করে নেপাল।

খেলার ৪৪ মিনিটের মাথায় ছেত্রীর শট নেপালের রক্ষণে প্রতিহত হয়। এর আগে ৪৩ মিনিটে অনিরুদ্ধর কর্ণার থেকে গোল করার চেষ্টা করেন রালতে। তবে তার শট ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। ৪১ মিনিটে কোটালের ফ্রি-কিক থেকে বল ধরে রাহুল শট নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে ঠিক মতো শট নিতে পারেননি তিনি। লিম্বু অনায়াসে বল দস্তানাবন্দি করেন।

ফাইনাল ম্যাচ শুরুর মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় নবযুগকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রালতে। নিজেদের অর্ধেই বল দখলের লড়াইয়ে পেছন থেকে প্রতিপক্ষ ফুটবলারকে ট্যাকল করে বসেন তিনি। এর আগে ৬ মিনিটের মাথায় নবযুগের সামনে সুযোগ ছিল গোল করার। তবে গুরপ্রীত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সামান্য চোট লাগে ভারতীয় কিপারের। মেডিক্যাল টিমের একটু সাহায্য নিয়েই তিনি উঠে দাঁড়ান। আর খেলা শুরুর মাত্র ৪ মিনিটের মাথায় নেপালের বক্সে থাপার দিকে বল বাড়িয়ে দেন ইয়াসির। তবে লিম্বু পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে দেননি।

বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে প্রথমে ভারত ও পরে নেপাল, দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীতের পর রেফারির বাঁশিতে ম্যাচ শুরু হয় মালে। অষ্টম সাফ খেতাবের লক্ষ্যে সুনীল ছেত্রীদের শেষ হার্ডল টপকানোর অভিযান শুরু হয়। বিপরীতে প্রথম বারের মতো সাফ ফাইনালে ভারতকে হারানোর স্বপ্নে মাঠে নামে নেপাল।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাস
ভারত সবথেকে বেশি আট বার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এর আগে ভারত সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় ১৯৯৩, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০৫, ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৫ সালে। আর রানার্স হয় ১৯৯৫, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮ সালেসহ চার বার। তারা শেষবার খেতাব জেতেছিল ২০১৫ সালে। ২০১৮ সালের আসরে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে দেয় মলদ্বীপ। নেপাল অবশ্য এবার প্রথম ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছে।

নেপালের প্রথম একাদশ
কিরণ কুমার লিম্বু (গোলকিপার), দীনেশ রাজবংশী, অনন্ত তামাং, গৌতম শ্রেষ্ঠ, সুমন আরিয়াল, তেজ তামাং, সুজল শ্রেষ্ঠ, সুমন লামা, পুজন আপারকোটি, নবযুগ শ্রেষ্ঠ ও রোহিত চাঁদ।

ভারতের প্রথম একাদশ
গুরপ্রীত (গোলকিপার), চিংগ্লেনসানা, রাহুল ভেকে, প্রীতম কোটাল, মান্দার রাও দেশাই, সুরেশ সিং, অনিরুদ্ধ থাপা, রালতে, মহম্মদ ইয়াসির, সুনীল ছেত্রী ও মনবীর সিং।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

Exit mobile version