পিপিই স্বল্পতা নিয়ে মুখ খোলায় চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিস

  • প্রকাশিত ১২:০৩ দুপুর এপ্রিল ১৯, ২০২০
নোয়াখালী

গত ১৬ এপ্রিল পিপিই স্বল্পতা নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট দেন ওই চিকিৎসক

চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) স্বল্পতা নিয়ে স্বাস্থ্যসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করায় কারণ দর্শানোর নোটিশ  দেওয়া হয়েছে নোয়াখালী ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক ড. আবু তাহেরকে।

শনিবার (১৮ এপ্রিল) হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনদিনের মধ্যেই ওই চিকিৎসককে কারণ দর্শাতে বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পিপিইসহ যাবতীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশনা এবং হাসপাতাল স্টোরে উল্লেখিত সামগ্রী মজুত বিষয়ে সুষ্পষ্ট ধারনা না থাকা সত্ত্বেও আপনি এ বিষয়ে এমন মন্তব্য করেছেন যা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বা কোন শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি, ভুল বোঝাবুঝি বা বিদ্বেষের সৃষ্টি করতে বা সৃষ্টির জন্য অন্যকে প্ররোচিত করতে পারে যা সরকারি কর্মচারীর আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯  এর পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি মোতাবেক অসদাচরণ হিসাবে গণ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এমন একটি সময় এ কারণ দর্শানোর বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হল, যখন এ ভাইরাসটি সংক্রমিত হওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেই চলেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। যদিও সরকারি হিসেব মতে, ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৯০,০৩২টি পিপিই’র মধ্যে ১,০৬৯,২৬৪টি পিপিই বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে, বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর ড. তাহের এক ফেসবুক পোস্টে সামনে থেকে যুদ্ধে  ছিলাম, আছি, থাকবো জানিয়ে বলেন, “সত্য কথা বলার শাস্তি, একটাও মিথ্যা বলেছি প্রমাণ করতে পারলে শাস্তি মেনে নিব।” এসময় তিনি গত ১৬ এপ্রিল দেওয়া ফেসবুক পোস্টটিও তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল দেওয়া  ফেসবুক পোস্টটিতে তিনি বলেন, “রোগীর সবচেয়ে কাছ থেকে আমি চিকিৎসা দেই। গত একমাসে প্রতিদিন হাসপাতালে গিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমিসহ আমার ডিপার্টমেন্ট এর কেউ একটিও এন৯৫, কেএন৯৫, এফএফপি২  মাস্ক পাইনি। তাহলে স্বাস্হ্যসচিব মিথ্যাচার কেন করলেন উনি এন৯৫ ইকোয়িভেলেন্ট (সমমানের)  মাস্ক দিচ্ছেন? তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কে মিথ্যা বলছে? এই মিথ্যাচারের শাস্তি কি হবে?”

পোস্টটি দেওয়ার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।‌ এসময় প্রায় ৪,৫০০টির মতো রিঅ্যাকশন ও ১,১০০টি অ্যাংগার রিঅ্যাকশন (ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া), একহাজারটি স্যাড রিঅ্যাকশন, প্রায় ৬৩৭টি মন্তব্য করা হয় ওই ফেসবুক পোস্টটিতে। ২,৭০০ বারের মতো শেয়ারও করা হয় পোস্টটি।

হাসান আরিফ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেন, সবার ড. তাহেরের মতো সবার প্রতিবাদী হওয়া উচিত।

পিপিই নিয়ে সরকারের অবস্থান 

গত ২৩ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এইমুহূর্তে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পিপিই প্রয়োজন নেই। সেসময় তিনি কয়েক লাখ পিপিই মজুদ থাকার কথাও জানান তিনি। তিনি এমন সময়ে এ মন্তব্যটি করেন যখন, চিকিৎসকরা পিপিইর জন্য তাদের চাহিদার কথা জানিয়ে আসছিলেন।

এর দুইদিন পর  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, কোন মানুষের করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের প্রথমে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে, এরপর পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পিপিই আছে এমন কোনও চিকিৎসকের কাছে তাকে পাঠাতে হবে। যদিও অতিরিক্ত সমালোচনার মুখে এ এ বক্তব্যের একদিন পরই সিদ্ধান্তটি পাল্টানো হয়।

এরপর ১৮ এপ্রিল, বাংলাদেশ চিকিৎসক ফাউন্ডেশনের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ডা. নিরুপণ দাস ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “চিকিৎসকদের এ মুহূর্তে বিশেষ গুণগতমানের পিপিই প্রয়োজন, সাধারণগুলো নয়।”

এদিকে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের একটি জরিপে উঠে এসেছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত প্রায় ২৫% চিকিৎসক, নার্স রয়েছেন এবং প্রায় ৬০% কর্মচারী রয়েছেন যারা এখনও পিপিই পাননি।

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে কমপক্ষে ১০৬ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভিড ১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।