‘বংশতন্ত্র’ কতটুকু খারাপ কতটা অপরিহার্য?

Minar Rashid

 

আজকের কলামে তিনটি স্পর্শকাতর বিষয় আলোচনার জন্য বেছে নিয়েছি। এই তিনটিবিষয় জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি বলয়ে একধরনের মানসিকবৈকল্য কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিকঅস্বস্তি সৃষ্টি করে রেখেছে, যা প্রকারান্তরে বর্তমান স্বৈরাচারকে দীর্ঘতর করছে। জাতীয়স্বার্থেই এই তিনটি বিষয়ের খোলামেলা আলোচনা প্রয়োজন। সেই তিনটি জিজ্ঞাস্য নিম্নরূপ :

এক. পরিবারতন্ত্র এ দেশে কি একটি রাজনৈতিক দুষ্টচক্র, নাকি রাজনৈতিক বাস্তবতা?

দুই. খালেদার বিএনপি জিয়ার বিএনপি থেকে সরে এসেছে- কেন এই প্রচারণা?

তিন. বিএনপি জামায়াতের গহ্বরে ঢুকে পড়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া কোন জামায়াতেরপ্রভাবে সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন করেছিলেন? জিয়াপ্রেমিকএই মুন্সিরা কার শিরনি খাচ্ছেন, তারা কি তা আসলেই জানেন?

এক.
বংশতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র বিশেষ করে বিএনপির পরিবারতন্ত্র নিয়ে অনেকেই তাদের উষ্মাপ্রকাশ করেছেন। পরিবারতন্ত্র বা বংশতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই বিদগ্ধজনদের সেই উষ্মা বর্তমানশাসক পরিবারটিকে তেমন করে স্পর্শ করবে না।
বিএনপিকে ঘিরে এই পরিবারটি না থাকলে অনেক আগেই বিএনপির ইতি ঘটার সাথে সাথেএ দেশে গণতন্ত্রের জানাজা পড়তে হতো বলে অনেকেই মনে করছেন। বিএনপিকে যতইদলিত-মথিত চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হোক না কেন- এই পরিবারের ছোঁয়া পেয়ে যেকোনো মুহূর্তেযেকোনো জায়গা থেকেই তা আবার দাঁড়িয়ে পড়তে পারে। কথাটি যতই খারাপ শোনাক নাকেন, এটাই বাস্তব সত্য।

গণতন্ত্রের জন্য দরকার দুই বা ততোধিক সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। পরিবারতন্ত্রে যতইখারাপ থাকুক না কেন, একটি রাজনৈতিক দলের জন্য প্রয়োজনীয় আনুগত্য বা শৃঙ্খলা এটিজুগিয়ে এসেছে। অন্যথায় উপমহাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সকাল-বিকেল অ্যামিবারমতো খণ্ডিত-বিখণ্ডিত হতে থাকে। ভারতে বামপন্থীরা কোনোমতে টিকে থাকলেওবাংলাদেশে তাদের মধ্যে আনুগত্য ও শৃঙ্খলার অবস্থা খুবই নাজুক।

উপমহাদেশে পরিবারতন্ত্রের বাইরে যে আবেগটি রাজনৈতিক দলকে প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলা ওঐক্য জুগিয়েছে তা হলো ধর্মীয় আবেগ বা ভাবাদর্শ। তা-ও সব দল নয়। ভারতে বিজেপিএবং পাকিস্তান বা বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে পারিবারিক উত্তরাধিকার দেখাযায় না। পাকিস্তানে মাওলানা মওদূদীর ছেলে অথবা বাংলাদেশে অধ্যাপক গোলাম আযমেরছেলেদের জামায়াতের নেতৃত্বে দেখা যায়নি। বামধারার কিছু দলেও পারিবারিকউত্তরাধিকার দেখা যায় না।
উপমহাদেশের বাইরে সভ্য বিশ্বও পরিবারতন্ত্রকে পুরোপুরি বাদ দিতে পারেনি। বুশের ছেলেরউল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পটভূমি না থাকলেও পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। হিলারিক্লিনটন ‘অবিশ্বস্ত’ স্বামী ক্লিনটনের ছায়া ধরেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।সেখানকার ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউশনগুলো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে বলেই এসবপরিবারতন্ত্র সেখানে কোনো মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে না। কাজেই আমাদের জন্য কোনটাআগে জরুরি? পরিবারতন্ত্রকে খতম করা নাকি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত ভিতেরওপর দাঁড় করানো?

এক-এগারোর সময়ে যারা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ শুরু করেছিলেন, তাদের অনেকেপুরো পরিবার নিয়েই তাতে শামিল হয়েছিলেন। এক-এগারোর তথাকথিত হিরো মইনউদ্দিনের এক ভাইও এগিয়ে যাওয়া শুরু করেছিলেন। কাজেই দুই পরিবার ধ্বংস হলেও নতুনপরিবার যে গজিয়ে উঠত তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমাদের রাজনৈতিক মানস বা গঠন সত্যিই অদ্ভুত। অন্যকে যদি মনে করি, আমার মতোইরক্ত-মাংসের মানুষ তবে আর আনুগত্য করতে রুচি হয় না। কাজেই পরিবারতন্ত্র আমাদেরএকধরনের নিয়তি বা রাজনৈতিকভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পুরো জাতির রাজনৈতিকমানসের পরিবর্তন না হলে দু-একজন চিন্তাবিলাসী দিয়ে পরিবারতন্ত্রের