চলতি বছরের জুলাই থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের (স্মার্ট) সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ হলো সর্বোচ্চ সুদের সীমা। গত মাসে স্মার্ট ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগের মাসে যা ৭ দশমিক ২০ শতাংশ ছিল। গত জুলাই মাসে ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ বেড়ে যাওয়ায় স্মার্ট বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের মার্চে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের সুদহার ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এর পরের মাসে তা কমে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ১০ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে আসে। এরপর আবার বাড়া-কমা হলেও কখনও এর ওপরে ওঠেনি। এরপর ২০১৩ সালের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি বিলের সুদহার ১০ শতাংশের নিচে তথা ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশে নেমে আসে। ওই বছরের ডিসেম্বরে ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৫ শতাংশে। এরপর কোনো মাসে ট্রেজারি বিলের সুদহার দুই অঙ্কের ওপরে ওঠেনি। কিছুদিন আগেও ট্রেজারি বিলে ৩ থেকে ৫ শতাংশ সুদে লেনদেন হতো। সম্প্রতি বাড়তে বাড়তে এ পর্যায়ে এসেছে।
ব্যাংকাররা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন বাংলাদেশ ব্যাংক আর সরাসরি সরকারকে ঋণ দিচ্ছে না। সরকারি ঋণ চাহিদা মেটানো হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে। সব মিলিয়ে অনেক ব্যাংক এখন তারল্য সংকটে পড়েছে। সংকট কাটাতে নানা উপায়ে ধার দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার আন্তঃব্যাংক কলমানি থেকেও টাকা ধার করছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বিপরীতে ৩০৪ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। ৯ দশমিক ৯৯ থেকে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ সুদে এ তহবিল নেওয়া হয়। একই দিন ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বিপরীতে ১০ দশমিক ৩০ থেকে ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ সুদে নিয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা। চলতি মাসের শুরুতেও ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট তথা ১০ শতাংশের নিচে ছিল। চলতি মাসে সরকারি ঋণে সর্বোচ্চ সুদ উঠে গত ১৫ নভেম্বর। ওই দিন পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলের বিপরীতে ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদে সরকার ৮১৪ কোটি টাকা ধার করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাত যেন বিপদে না পড়ে সে জন্য প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক বড় অঙ্কের ধার দিচ্ছে। রোববার কয়েকটি ব্যাংকে ধারের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। আর গতকাল আন্তঃব্যাংক ধারের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কলমানিতে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ সুদে তিন হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা ধার করে ব্যাংকগুলো। আন্তঃব্যাংক রেপোসহ বিভিন্ন উপায়ে ধারের সুদ দাঁড়ায় ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সূত্র : সমকাল