Site icon The Bangladesh Chronicle

রুশ কারেন্সি রুবলের ইমপ্যাক্ট

9 April 2022
গতকালের লেখায় উল্লেখ করেছিলাম যে রাশিয়ার কারেন্সি রুবলে গ্যাসের দাম দেয়ার শর্তে পেট্রোডলারের উপর একটা ধকল যাবে। এই সুযোগ নিবে ইউয়ান।
আজ বিজনেস স্টান্ডার্ড এর খবরে দেখলাম ইইউ এর দলছুটের ভূমিকায় যেয়ে হাঙ্গেরি বলেছে তারা রুবলে গ্যাস কিনতে প্রস্তুত। একথা সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান নিউজ ককনফারেন্স এ রয়টার্স এর প্রশ্নের জবাবে বলেছেন।
ইইউ এর সব দেশের তেলের চাহিদার ২৫% আসে রাশিয়া থেকে। ২০২০ সালে ইইউ এর কয়লা চাহিদার ৩০% মিটিয়েছে রাশিয়া। আর সর্বশেষ অস্ত্র হল গ্যাস। সস্তা রাশিয়ান গ্যাসের নেশায় বুদ হয়ে ইইউ তার চাহিদার প্রায় ৪০% রাশিয়ার কাছ থেকে মেটায়। কোন একটি সিঙ্গেল সোর্স থেকে চাহিদার বৃহৎ অংশ মেটাতে গেলে সেটার ঝুকি কম নয়। অবরোধের জবাবে রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হলে পুরো ইউরোপকে ধুকতে হবে।
আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ ঘাটলে একটি অদ্ভুত বিষয় চোখে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র যখন কথিত ওয়ার অন টেররের পেছনে ট্রিলিয়ন ডলার নষ্ট করেছে সেই সময় চীন ও রাশিয়া খুব হিসেব কষে এগিয়েছে। অর্থনৈতিক সংস্কার চীনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে যদি চীনের উপর কেউ অবরোধ দেয় তবে সে নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং সেই ক্ষতির পরিমান চীনের ক্ষতির পরিমান থেকে কম নয়।
চীনের উত্থানে যে বিষয়গুলি পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হল, সারা বিশ্বের ম্যানুফাকচারিং হাব হয়ে উঠা। যুক্তরাষ্ট্রের আইফোন এর কারখানা থেকে শুরু করে পশ্চিমা এমন কোন নামি কোম্পানি নেই যাদের ফ্যাক্টরি চীনে নেই। এর পেছনে চীনের নিরব প্রভাব রয়েছে। আর রয়েছে পশ্চিমাদের অতিমুনাফার আসক্তি। চীন সেদেশের কারখানাগুলিকে এমন পর্যায়ে সুবিধা দিয়েছে যে অধিকাংশ পণ্য ইউরোপ বা আমেরিকায় উৎপাদন করার চেয়ে চীনে উৎপাদন অনেক বেশি লাভজনক। আর এর পেছনে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে চীনের বৈশ্বিক কাঁচামাল সাপ্লায়ার হয়ে উঠা। হুয়াওয়ে ইস্যুতে চীনের উপর রেস্ট্রিকশন এর পেছনে হুয়াওয়ে যতটা না দায়ী তার থেকে বেশি দায়ী মার্কিন আধিপত্য হারানোর ভীতি।
চীনের অদম্য অগ্রযাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সিংহাসনচ্যুত হবার ভয়। কিন্তু চীনের উপর আবরোধ আরোপ করতে গিয়ে আমেরিকার দূর্বলতার নগ্নাবস্থা প্রকাশ পায়। অধিকাংশ মার্কিন প্রতিষ্ঠান যাদের বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে চীনে তারা ভয়াবহ লোকসানে পড়ে। খোদ মার্কিন মুল্লুকে লবিং ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়তে হয় হোয়াইট হাউজ কে। আর এজন্য শেষমেষ আলোচনার টেবিলে সমাধান খুজতে ও দুই দেশ দুই দেশের উপর আর আগ্রাসী না হতে সম্মত হয়।
চীনের সফট পাওয়ার এখানেই। উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা কিংবা এশিয়া, প্রায় সব মহাদেশেই চীনের প্রভাব নিরবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। থামানোর ক্ষমতাও কেও পাচ্ছে না। চীন সরকার নিজের দেশের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আন্তর্জাতিক লবিং চালায় যেন কাজ তারা পায়। বিপুল অলস টাকা বিনিয়োগ করে বাজার দখলে নিচ্ছে চীন। চীনা প্রতিষ্ঠান গুলি এবং সরকারের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন পণ্য ডাম্পিং এর অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ মানে ভাল কিন্তু সস্তা পণ্যের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকতে না পেরে অবচেতনেই চীন নির্ভরতা এখন প্রায় সব দেশের। আর এজন্যই অধিকাংশ দেশের প্রধান ট্রেড পার্টনার হিসাবে এখন চীনের নাম। মনে রাখতে হবে সামরিক শক্তির থেকেও বর্তমানে অর্থনৈতিক সফট পাওয়ার বেশি কার্যকরী। চীন কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি থমকে যাবে। আর এভাবেই ফোকাসের আড়ালে চীন শক্তি বৃদ্ধি করেছে।
রাশিয়া কি তবে বসে ছিল?
রাশিয়া কৌশলগত কারনেই গোল্ডের পাশাপাশি বিশ্বের সবথেকে বেশি টাইটেনিয়ামের রিজার্ভের অধিকারী দেশগুলির একটি। কৌশলে মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্র ছিল ইউরোপকে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল করা। গ্যাস, তেল ও কয়লা সব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাশিয়া সেটি করতে পেরেছে সফল ভাবেই।  হাঙ্গেরির ভাষ্য “And … no one has a say in how we modify our own contract.”
এর প্রেক্ষিতে হাঙ্গেরিকে রাশিয়া ৪.৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস সরবরাহ করবে।
শুধু হাঙ্গেরি নয়, বেলগ্রেডের সাথেও রাশিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পথে রয়েছে। রাশিয়ার সাথে সার্বিয়ার গ্যাস চুক্তি এবছর মে মাসের ৩১ তারিখ শেষ হবে। সার্বিয়ানদের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক কিছুই আসবে রুবল নিয়ে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইইউ যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার কাছ থেকে ইইউ যে গ্যাস পায় তার ১০% আমেরিকা এবছরেই দিবে। আমেরিকা ও অন্য দেশ মিলিয়ে ইইউ কে গত বছরের ২২ বিলিয়ন কিউবিক মিটারের সাথে অতিরিক্ত ১৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস সরবরাহ করবে। আমেরিকার পরিকল্পনা অনুসারে আমেরিকা ও অন্যান্য মিত্র দেশ মিলে ভবিষ্যতে ইইউ কে মোট ৫০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস সরবরাহ করবে। আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দেয় আমেরিকার দুর্বলতা।
পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে গ্যাস, তেল, এলএনজি, ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে দামের যে উর্ধমূখী প্রবণতা সেটি সহসা স্থিতিশীল হবে না। আর এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ সহ সব দেশেই। বিশ্ব পরিস্থিতি শান্ত হোক। আর আমাদের মত দেশের এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যত কর্মপন্থা নেয়া উচিত। আমরা এখন শাখের করাতে রয়েছি। পশ্চিমা ব্লক বর্তমান বাস্তবতায় আগের থেকে দুর্বল হবার কারনে বাংলাদেশের মত দেশের সমর্থন পাওয়ার জন্য তাদের প্রয়াস থাকবে। আবার চীন, রাশিয়ার মত দেশগুলির থেকেও প্রেশার থাকবে। এক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার নীতিতে অবিচল থাকাটায় বাংলাদেশের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আগ বাড়িয়ে গরম পানিতে পা দেয়ার দরকার দেখিনা।
Source: https://www.facebook.com/Agnostic.wasimahin/
Exit mobile version