মানবজমিন ডেস্ক
(৪৮ মিনিট আগে) ১০ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:২১ পূর্বাহ্ন

বিবিসির ডিরেক্টর-জেনারেল বা মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং নিউজ বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। একটি প্যানোরামা ডকুমেন্টারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণ সম্পাদনা করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এমন সমালোচনার পরে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে দায়িত্বে থাকা ডেভি একাধিক বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েন। এর ফলে এই পাবলিক ব্রডকাস্টারটি কটাক্ষ ও সমালোচনার মুখে পড়ে। দ্য টেলিগ্রাফ সোমবার একটি ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ বিবিসি মেমো প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, প্যানোরামা প্রোগ্রামটিতে ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ একত্রে সম্পাদনা করা হয়েছে, যাতে তিনি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় সরাসরি উৎসাহ প্রদান করছেন বলে মনে করা হয়। বৃটিশ রাজনৈতিক নেতারা আশা করছেন এই পদত্যাগের ফলে পরিবর্তন আসবে।
অপরদিকে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। একই দিনে বিবিসির ডিরেক্টর-জেনারেল ও বিবিসি নিউজের প্রধান এমন গুরুত্বপূর্ণ দুইজনেরই পদত্যাগ এক বিরল ঘটনা। রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ডেভি বলেন, সব পাবলিক প্রতিষ্ঠানই নিখুঁত নয়। আমাদের সবসময়ই খোলামেলা, স্বচ্ছ ও জবাবদিহি থাকতে হবে। বর্তমানে বিবিসি নিউজকে ঘিরে যেসকল বিতর্ক চলছে, সেগুলো আমার সিদ্ধান্তে, যদিও সেটা একমাত্র কারণ নয়, অনুধাবনযোগ্যভাবে ভূমিকা রেখেছে। মোটের ওপর বিবিসি ভালোভাবে কাজ করছে। কিন্তু কিছু ভুল হয়েছে এবং ডিরেক্টর-জেনারেল হিসেবে এর চূড়ান্ত দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে।
টারনেস রোববার রাতের বিবৃতিতে বলেন, প্যানোরামা বিতর্ক ‘এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যেখানে এটা বিবিসির ক্ষতি করছে। শেষ সিদ্ধান্ত আমার ওপরেই এসে বর্তায়। সার্বজনীন জীবনে নেতাদের সম্পূর্ণভাবে জবাবদিহি থাকা প্রয়োজন, আর এজন্যই আমি পদত্যাগ করছি। ভুল হয়েছে, তা স্বীকার করি। কিন্তু আমি স্পষ্ট করতে চাই সাম্প্রতিক যে অভিযোগগুলো বিবিসি নিউজ প্রতিষ্ঠানগতভাবে পক্ষপাতদুষ্ট, সে অভিযোগগুলো ভুল। টারনেস গত তিন বছর ধরে নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে দেয়া ভাষণে বলেন, আমরা ক্যাপিটলের দিকে হেঁটে যাবো এবং আমাদের সাহসী সিনেটর ও কংগ্রেসম্যান ও কংগ্রেসওম্যানকে উৎসাহিত করবো। তবে প্যানোরামা সম্পাদনায় দেখানো হয়েছে যে তিনি বলছেন- আমরা ক্যাপিটলের দিকে হেঁটে যাবো এবং আমি তোমাদের সঙ্গে সেখানে থাকবো। আর আমরা লড়ব। আমরা দারুণভাবে লড়ব। সম্পাদনায় যে দুটি অংশ জোড়া দেয়া হয় তা মূলত ৫০ মিনিটেরও বেশি সময়ের ব্যবধানের বক্তব্য। অভ্যন্তরীণ মেমোটি ফাঁস হওয়ার পর বিবিসি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এমনকি হোয়াইট হাউজও প্রতিষ্ঠানটিকে ‘১০০ ভাগ ফেক নিউজ’ বলে আখ্যা দেয়।
রোববার ট্রাম্প পদত্যাগ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, বিবিসির শীর্ষ ব্যক্তিরা ছেড়ে যাচ্ছেন বা বরখাস্ত হচ্ছেন ‘কারণ তারা আমার ৬ জানুয়ারির ওই খুব ভাল (পারফেক্ট!) ভাষণ ‘ডক্টরিং’ করে ধরা পড়েছে’। তিনি লিখেছেন, ‘এরা খুবই অসৎ মানুষ যারা প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকশনের ভারসাম্যকে নড়বড়ে করতে চেয়েছিল। গণতন্ত্রের জন্য এটা কী দুঃখজনক!’
দু’জনের পদত্যাগের আগে বিবিসি চেয়ারম্যান সামির শাহকে সোমবার একটি পার্লামেন্টারি কমিটিতে বিবৃতি দিতে দেখা যাচ্ছিল। সেখানে তিনি ভাষণ সম্পাদনার কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছিল। রোববার পদত্যাগ নিয়ে মন্তব্য করে শাহ বলেছেন, এটি বিবিসির জন্য দুঃখের দিন। কর্মকর্তাদের আরও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে যে, গাজার বিষয়ে একটি ডকুমেন্টারির বর্ণনাকারী ছিলেন একজন হামাস কর্মকর্তার সন্তান। এটি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হওয়া নিয়েও বিবিসির বিষয়ে প্রশ্নে তোলা হয়েছে। বিবিসির সম্প্রচার করা গ্লাস্টনবেরি সেটের একটি অংশ যেখানে পাঙ্ক জুটি বব ভাইল্যান ‘ডেথ, ডেথ টু দ্য আইডিএফ’ বলে স্লোগান শোনান, তাও এডিটোরিয়াল গাইডলাইন ভঙ্গ করেছিল। সংস্কৃতি, মিডিয়া ও স্পোর্টস কমিটির চেয়ারপারসন ডেম ক্যারোলাইন ডাইনেজ জানিয়েছেন যে ‘চিরন্তন সংকট এবং ভুল পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা’ বিবিসিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।









