রিজেন্ট ও জেকেজির গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন, প্রশ্ন রিজভীর

করোনা প্রতিরোধে লক্ষণভিত্তিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন রিজভী। – ছবি : নয়া দিগন্ত

রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারসহ স্বাস্থ্যখাতের ‘নৈপথ্য গডফাদাররা কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হোমিওপ্যাথিক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এইচ ড্যাব) উদ্যোগে কোভিড-১৯ ভাইরাস মোকাবিলায় মেডিকেল ক্যাম্প হয়। সংগঠনের সভাপতি শফিকুল আলম নাদিমের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব একেএম জাকির হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সম্মিলিত হোমিওপ্যাথিক জোটের সভাপতি আরিফুর রহমান মোল্লা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক মুজিব উল্লাহ, মুজিব, গাজী নাজিমউদ্দিন, কাশেমুর রহমান খান, আশরাফ হিলালী, শাহ মোয়াজ্জেম সোহেল, ফয়সাল মেহবুব মিজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী বলেন, সাহেদের কেলেংকারী, জেকেজির চেয়ারম্যানের (সাবরিনা) কেলেংকারী- এরা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। আজকে যখন চারদিক থেকে আওয়াজ উঠেছে কৈ রুই-কাতলা তো ধরা পড়ে না। কালকে (শনিবার) নামমাত্র একজন (ডা: সাবরিনা) ধরা পড়লেন। আমরা জানতে চাই, এর পেছনে গডফাদার কারা? এর পেছনে সেই ক্ষমতাশালী লোক তারা কারা? কই তারা তো ধরা পড়ে না। সাহেদের সাথে, জেকেজির সাথে আরো জড়িত যারা আছে তাদেরকে তো আপনারা ধরতে পারবেন না। রুই-কাতলাদের আপনারা ধরতে পারবেন না। কারণ ওরা ক্ষমতাশালী লোক।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, সিঙ্গেল স্ট্যান্ডার্ডে চলছে আওয়ামী লীগ। সেই সিঙ্গেল স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে তাদের মধ্যে মানবতার কোনো কাজ নেই, তাদের জনগনের পাশে দাঁড়ানোর কোনো কাজ নেই। তারা দাঁড়িয়েছে জনগণের পকেট থেকে টাকা দিয়ে যে ত্রাণ কেনা হয়েছে সেই ত্রাণ আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসা থেকে, না হলে গ্যারেজ থেকে, না হলে পুকুর থেকে, না হলে মাটির তলা থেকে পাওয়া গেছে। এভাবে তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন নিজের পকেট থেকে অর্থ দিয়ে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, বলেন দলের সিনিয়র এ যুগ্ম মহাসচিব।

রিজভী বলেন, কয়েকদিন ধরে আপনারা দেখছেন সংবাদপত্রের পাতায়, আগের কথা না-ই বা বললাম। মাস্কের দুর্নীতি কে করেছে? মন্ত্রীর ছেলে। করোনার জন্য জীবন বাঁচানোর মেসিন ভ্যান্টিলেটর, সেই ভেন্টিলেটর দুর্নীতির সাথে জড়িত কে? ক্ষমতাসীন দলের লোক অথবা মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন। যখন পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যম চারিদিকে ছি ছি পড়ে গেছে। আওয়ামী লীগের এমন কোনো নেতা নাই যার সাথে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিকের সম্পর্ক নাই। ছবি তুলেছেন সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদন দিয়েছে তাদেরকে করোনা টেস্ট করার জন্য। স্বাস্থ্য অধিদফরের ডিজি যখন অনুমোদন দেয় সেটা তো সরকারেরই অনুমোদন।

রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মো: সাহেদের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, উনি সরকারের পক্ষে টকশো করছেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য তিনি। তারপরে বললেন কি? তিনি নাকী হওয়া ভবনের লোক। যখন ফাঁস হয়ে যায়, যখন মুখ দেখানোর কিছু থাকে না, তখন বিএনপি অথবা হাওয়া ভবনের বলে চাপিয়ে দেয় তারা। ওরা দুর্নীতি-লুটপাট সব করে যখন ধরা পড়ে যায় তখন বলে হচ্ছে হাওয়া ভবনের লোক। তাদেরকে বলি, এতোদিন লালন করেছেন, পুষেছেন, সমৃদ্ধি দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। যাদের (করোনা আক্রান্ত রোগী) পজেটিভ তাদেরকে নেগেটিভ সনদ দিয়েছেন, আর যাদের নেগেটিভ তাদেরকে পজেটিভ সনদ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করছেন….।

বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, একটি মাসুম বাচ্চা মেয়ে মাহমুদা পলি, তাকে রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে এসছেন। কেন? সে ফেসবুকে লিখেছেন সরকারের বিরুদ্ধে। এখনো সে কারাগারে। ছাত্রদলের সাবেক নেতা টিটো হায়দারকে ৪/৫দিন আগে তুলে নিয়ে গেছেন। সবাই দেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারি লোকেরা তাকে ধরে নিয়ে গেছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এই দুর্বৃত্তপনা দিয়ে এই অমানবিক মনুষ্যত্বহীন মানসিকতার শাসন দিয়ে আপনাদের একের পর এক কালো আচরণ বন্ধ করে রাখতে পারবেন না। কোনো না কোনো ফাঁক দিয়ে বের হবেই। সরকারের এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান রিজভী।