রাজনীতি করলে সত্য কথা বলতে হয় : শামীম ওসমান

Daily Nayadiganta

রাজনীতি করলে সত্য কথা বলতে হয় : শামীম ওসমান – ছবি – সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্রবাসী নারায়ণগঞ্জবাসীর দেয়া গণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি জননেতা এ.কে.এম. শামীম ওসমান বলেছেন, সাংবাদিকতা করলে যেমন সত্য তুলে ধরতে হয়, তেমনি রাজনীতি করলে সত্য কথা বলতে হয়। আমি মুখের ওপর সত্য কথা বলে ফেলি। এটাই আমার চরিত্র।

বুধবার রাতে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

শামীম ওসমান বলেন, পৃথিবীতে কেউ পারফেক্ট নন। মানুষের ভুল-ত্রুটি থাকবে। আমিও এর ঊর্ধে নই। তবে সবসময় চেষ্টা করেছি ভাল কিছু করার। ভাল কাজ করার মধ্য দিয়ে মানুষের ভালবাসা পেতে চেয়েছি সবসময়। সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, করোনাকালের মহামারী বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষের জীবন কতটা ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। আমদের মনুষ্যত্ব আছে, কি নেই-সেটাও দেখেছি। কেউ বাবার লাশ ফেলে রেখেছে, আবার অন্য মানুষ এসে সেই লাশ দাফন করেছে। আমাদের ভেবে দেখতে হবে, আমরা কি মানুষ হতে পেরেছি?

তিনি প্রবাসে বিরোধ না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ঈর্ষা পরিহার করুন। কারো উন্নতি দেখলে খুশি হতে শিখুন। আর বিরোধ ভুলে নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বাড়ান। রাজনীতিতেও কে কোন দল করলো, তা নিয়ে পড়ে থাকবেন না।

প্রবাসীরা প্রত্যেকে একেকজন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। আপনাদের কর্মকাণ্ডে যেন বাংলাদেশে মুখ উজ্জ্বল হয়। তিনি প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের সাফল্যগাঁথা তুলে ধরার আহবান জানান অভিভাবক এবং মিডিয়ার প্রতি।

তিনি বলেন, প্রবাসে আমাদের নতুন প্রজন্ম মেধা ও মননে সাফল্য অর্জন করছে। এ সব খবর বেশি প্রকাশ হলে সবার মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হবে। এই মেধাবীরা যদি বাংলাদেশ নিয়ে ভাবে এবং বাংলাদেশে কাজ করে, তাহলে খুব দ্রুত বাংলাদেশে চেহারা বদলে যাবে।

তিনি ২০০১ সালের ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করে বলেন, ২২ জনের মৃত্যু আর আমিসহ আরো সহকর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনার কথা কোনদিন ভুলতে পারব না। কাপুরুষ খুনীরা খুন করতে পারে, কোনোদিন সফলতা লাভ করে না। আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের সবসময় গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।

গণ সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শামীম ওসমান এমপি’র এক সময়ের বন্ধু ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতি উত্তরামেরিকা’র সাবেক সভাপতি আরশাদুল বারী আসাদ এবং সভা পরিচালনা করেন তার এক সময়ের রাজনৈতিক সহযোগী মনিরুজ্জামান সেলিম। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন শামীম ওসমানের সহধর্মিনী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থা’র সভাপতি সালমা ওসমান লিপি এবং ডেমেক্রেট নেতা রেহান রেজা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কামরুন নেসা আহমেদ। অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান এমপি এবং তার সহধর্মিনী সালমা ওসমান লিপিকে ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে নারায়ণগঞ্জে ২০০১ সালের ১৬ জুন বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ, শামীম ওসমান এমপি’র শ্বশুড় সাইফ উদ্দিন আহমেদ, প্রবাসী কাজী আজাহারুল হক মিলন ও মহসিন ননীর আরোগ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এই মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা শিহাব উদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সায়েরা রেজাসহ স্থানীয় কণ্ঠিশিল্পীরা। সমবেত দর্শকদের অনুরোধে বিশেষ অতিথি সালমা ওসমান লিপি একটি সঙ্গীত পরিবেশন করে সকলকে মুগ্ধ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে সালমা ওসমান লিপি বলেন, ২০০১ সালের ১৬ জুন আমাদের জীবনে ছিল বেদনার দিন। ছোট-খাটো কেয়ামতের দিন যেন। আমরা হারিয়েছি আমাদের স্বজন-বন্ধু, নেতা-কর্মী। এদিন প্রায় ৩০ মিনিট আমি ভেবেছিলাম বিধবা হয়ে গেছি। সেদিন মানুষের ছিন্নভিন্ন শরীর আর রক্তস্রোত দেখেছি। কী ভযাবহ, কী নৃশংসা সে দৃশ্য! আমি আজো মানুষের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাই, কেউ যেন মানুষের এমন ক্ষতি না করে। তিনি বলেন, আমি মানুষের পাশে দাঁড়াই মোনাজাত নিয়ে। এই মোনাজাত মানুষের কল্যাণের জন্য। তিনি পৃথিবী অচিরেই করোনামুক্ত হোক-এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন