Site icon The Bangladesh Chronicle

মোদি কেন বাংলাদেশ নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে কথা বলবেন?

ইনসাইড বাংলাদেশ

 

১৮ জুন, ২০২৩


আগামী ২১ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। এই সফর নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরকে মার্কিন গণমাধ্যম ‘মেগা সফর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই সফরে অন্তত দুটি বড় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। যার মধ্যে একটি হলো ৩০০ কোটি ডলারের অত্যাধুনিক এমকিউ-৯বি ( MQ-9B) ড্রোন সংক্রান্ত। অন্যটি ভারতের তৈরি তেষজ যুদ্ধ বিমানের ইঞ্জিন যা নিয়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে জেনারেল ইলেকট্রনিক্স এর সহায়তায় তৈরি করা হবে কর্ণাটকের রাষ্ট্রয়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডে। এই দুটি চুক্তির বাইরে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই সফরের দিকে কারণ। কারণ এই সফরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশটির সরকারপ্রধান বৈঠক করবেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির একান্ত বৈঠক হবে ২২ জুন। আর এই বৈঠকে অন্যান্য প্রসঙ্গের মত বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আলোচিত হবে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। এই অঞ্চলের শান্তি, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং উপমহাদেশের কৌশলগত অভিন্ন অবস্থান রক্ষার্থে মোদি-বাইডেনের বৈঠকে বাংলাদেশের বিষয়টি আলোচনা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলবেন। এর উত্তরে কূটনীতিকরা মোটামুটি পাঁচটি কারণ বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে;

১. কৌশলগত অভিন্ন অবস্থান: এই অঞ্চলে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। বিশেষ করে চীনের আগ্রাসী তৎপরতার ফলে এই উপমহাদেশে অনেক কিছুর জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আর তাই এই উপমহাদেশে অভিন্ন একটি কৌশল নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ এখন পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই আঞ্চলিক ও কৌশলগত কারণে বিশ্বের সামরিক এবং রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি নিয়ে নরেন্দ্র মোদি আলোচনা করবেন।

২. চীনের প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত: ভারত মনে করে যে বাংলাদেশকে চীনের প্রভাব বলয় থেকে যেকোনো রকমেই মুক্ত রাখতে হবে। আর একই অভিমত ব্যক্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দুটি দেশের এটি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া ভিন্ন। ভারত মনে করে যে বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে নয়, বাংলাদেশকে আস্থায় নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের সীমারেখা টানতে হবে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের জ্যোতিরেখা টানার জন্য চাপ দেওয়ার কৌশলে বিশ্বাসী। ফলে দুই দেশ তাদের তাদের পদ্ধতিগত যে দূরত্ব তা কমিয়ে আনার জন্য এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা করবে।

৩. বাংলাদেশ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা: ভারত মনে করে যে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে অব্যাহত রাখতে গেলে বর্তমান সরকারের কোনো বিকল্প নেই। ভারতে এখন পর্যন্ত বিএনপিকে বা অন্য কাউকে এই সরকারের বিকল্প ভাবতে রাজি নয়। তারা মনে করে যে অনির্বাচিত সরকার আসলে দেশটির সংকট সমাধান হবে না বরং সংকট আরও গভীর হবে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তন করতে চায়। এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নিয়ে তাদের মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত বাংলাদেশের প্রকৃত কৌশলগত অবস্থান বুঝানোর চেষ্টা করবে।

৪. বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব: বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব নিয়েও দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান আলোচনা করবেন। ভারত যেহেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী কাজেই ভারত সবচেয়ে ভালো জানে যে বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব কি। অতি মার্কিন বিরোধিতা বাংলাদেশকে যে চীনমুখী বা রাশিয়াপন্থি করে তুলবে সেই বার্তাটি নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দিবেন।

৫. মৌলবাদের উত্থান এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি: ভারত মনে করে যে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ কারণেই যা কিছু করতে হবে সবকিছু সাবধানে। এই বাস্তবতা থেকেই নরেন্দ্র মোদির  মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Exit mobile version