Site icon The Bangladesh Chronicle

প্রবাসী আয় বেড়েছে, আগস্টেই এসেছে ২২২ কোটি ডলার

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক ধারা ফিরতে শুরু করেছে। ফলে সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এই মাসে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২২২ কোটি ডলার। যদিও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা কার্যত বন্ধ ছিল। তখন প্রবাসে থাকা অনেক বাংলাদেশিই দেশে প্রবাসী আয় না পাঠানোর ঘোষণা দেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তাঁরাই আগের চেয়ে বেশি আয় পাঠানোর জন্য প্রচারণা শুরু করেন। এর ফলে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগের মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯১ কোটি ডলার। আর গত বছরের আগস্টে এসেছিল ১৬০ কোটি ডলার। অর্থাৎ সদ্য সমাপ্ত আগস্টে এর আগের মাসের তুলনায় ৩১ কোটি এবং গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৬২ কোটি ডলার বেশি এসেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে জুনে, যা পরিমাণে ২৫৪ কোটি ডলার। এটি একক মাস হিসেবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার রেকর্ড। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ডলার। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৫ কোটি ডলার এসেছে মে মাসে।

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংক খাতের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ব্যাংক খাতে টেকসই সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার-সংকট কাটাতে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই বৈঠকে। তাতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দাম দাঁড়ায় ১১৭ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা। এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলো এখন ডলারের দাম কিছুটা বেশি দিতে পারছে।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারি ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে ১৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ১০ দিন মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিস্থিতিতে কিছু জটিলতার কারণে প্রবাসী আয় কমে যায়। এমনকি কোথাও কোথাও প্রবাসী আয় না পাঠানোর দাবিও ওঠে। শোনা যায়, তখন মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশিদের অনেকেই সোনা কেনায় মনোযোগ দেন। সোনার বার কিনে দেশে নিয়ে এলে একটু বেশি টাকা মিলবে এমন আশায় তাঁরা প্রবাসী আয় না পাঠিয়ে সোনার বার কেনেন। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় বিদেশে আসা-যাওয়ার বিমান টিকিটও বিনা মূল্যে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে জন্য সোনার বার কেনা বাড়লে বৈধ পথে প্রবাসী আয় কমে যায়। তবে সরকার পরিবর্তন ও ডলারের দাম নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে প্রবাসী আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

আলাপকালে বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দাম বাড়িয়ে প্রবাসী আয় কেনার যে প্রতিযোগিতা ছিল, তা কমে এসেছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি কমায় ব্যাংকগুলোর সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে প্রবাসী আয় বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাাঁড়ায় ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার।

prothom alo

Exit mobile version