আপিল বিভাগ: অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ ও গঠন প্রক্রিয়া বৈধ

24 Live Newspaper

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণ ও সরকার গঠন প্রক্রিয়াকে বৈধ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল খারিজের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করলেন। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এই আদেশ প্রদান করেন।

হাইকোর্ট

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনটি হাইকোর্ট যেভাবে খারিজ করেছিলেন, তা ছিল সম্পূর্ণ যথার্থ ও সঠিক। এ কারণে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই সিদ্ধান্তে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করেনি। সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে বর্তমান সরকারের গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিয়ে আইনি প্রশ্ন তোলার আর কোনো অবকাশ রইল না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। এছাড়া মামলায় ইন্টারভেনার বা পক্ষভুক্ত হয়ে শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, মোহাম্মদ শিশির মনির ও এস এম শাহরিয়ার কবির।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটি চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের শেষের দিকে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন আইনজীবী মহসিন রশিদ। তার যুক্তি ছিল, সংবিধানে যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের সুনির্দিষ্ট বিধান নেই, তাই এ বিষয়ে রেফারেন্স চাওয়া বা সুপ্রিম কোর্টের রুলস না মেনে মতামত নেওয়া সঠিক হয়নি। তবে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ জানুয়ারি সেই রিট সরাসরি খারিজ করে দেন। এরপর রিটকারী আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন।

হাইকোর্ট তার রিট খারিজের আদেশে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেছিলেন, উদ্ভূত এক বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেছেন এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এটি আইনি দলিলের পাশাপাশি জনগণের ইচ্ছার দ্বারাও সমর্থিত। আদালত আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জনগণের সমর্থন ও বৈধতা থাকায় এই সরকার নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সৃষ্ট সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছিলেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ৮ আগস্ট মতামত দেন যে, জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে এবং শপথ পাঠ করাতে পারবেন। সেই আইনি মতামতের ভিত্তিতেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে, যা এখন সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক চূড়ান্ত বৈধতা পেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here