সরকারের ব্যাংক ঋণে রেকর্ড

The Daily Samakal

 প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২০
ওবায়দুল্লাহ রনি
সরকারের ব্যাংক ঋণে রেকর্ড

রাজস্ব আদায়ে খারাপ অবস্থা এবং সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের শুরু থেকেই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের বেশি বেশি ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ছিল। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ঋণনির্ভরতা আরও বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণ ও অনুদান পাওয়ার পরও ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। এ যাবৎকালের মধ্যে যা সর্বাধিক। ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকার ব্যাংক থেকে নিয়েছিল ২৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

সংশ্নিষ্টরা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতির কারণে রাজস্ব আয়ে খুব খারাপ অবস্থা ছিল। করোনার কারণে অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ফলে আদায় কমেছে ব্যাপক হারে। এ অবস্থায় ৪৫ বছর পর রাজস্ব আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে কম হয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আদায় খারাপ থাকায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে তিন লাখ ৫শ’ কোটি টাকা করা হয়। অথচ গত অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আয় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মানে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৮৫ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত সমকালকে বলেন, রাজস্ব আয় কম থাকায় সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এভাবে ঋণ নিতে হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি খাতে ঋণের যে চাহিদা তাতে করে সরকারের ঋণ দেওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না। এতে বরং সরকার এবং ব্যাংক উভয়ে উপকৃত হচ্ছে। কেননা সরকার সঞ্চয়পত্রের তুলনায় কম সুদে ব্যাংক ঋণ পাচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলো টাকা অলস ফেলে না রেখে ঝুঁকিমুক্ত বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যে প্রবাসীদের ভালো রেমিট্যান্সের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রচুর ঋণ পেয়েছে সরকার। যে কারণে এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গত জুনে ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। গত ৩১ মে যেখানে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ থেকে ঋণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা করা হয়। চলতি অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রচুর ঋণ পাওয়ায় সরকার ব্যাংক থেকে তেমন ঋণ নেয়নি।

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৬ থেকে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ পায়। অথচ সঞ্চয়পত্রে গুনতে হচ্ছে ১১ দশমিক শূন্য ৪ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে গত কয়েক বছরে প্রচুর সঞ্চয়পত্র বিক্রির ফলে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে গেছে। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২৪শ’ কোটি টাকার সুদ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ স্থিতি রয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। সুদ কমাতে সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা কমিয়ে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও টিআইএন বাধ্যতামূলক করাসহ নানা উপায়ে বিক্রিতে নিরুৎসাহিত করছে সরকার। এবারে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা করা হয়। গত অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট ১০ হাজার ৫৮১ কোটি টাকার পেয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা করা হয়। অথচ সরকার নিয়েছিল ২৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে করা হয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা।