Site icon The Bangladesh Chronicle

তিস্তা চুক্তি দিয়ে কি প্রতিরক্ষা চুক্তিকে বাজিমাত করা হবে ?

Minar Rashid

তিস্তা চুক্তি দিয়ে কি প্রতিরক্ষা চুক্তিকে বাজিমাত করা হবে ?
==========================
এক.
আন্তর্জাতিক নদীতে কোনও দেশ কখনই এক তরফা বাঁধ দিতে পারে না । কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে আমাদের বড়ভাই তাই করেছে । কাজেই গঙ্গা-তিস্তা সহ সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের অধিকার । এটা কখনই বড় ভাই ভারতের অনুকম্পা নয় । কিন্তু সেই ন্যায্য হিস্যাই নিজেদের লোভ, হতাশা ও বোকামির জন্যে বড় ভাইয়ের অনুকম্পা হয়ে পড়েছে । অবস্থা এমন হয়েছে যে আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্যে বড় ভাইয়ের অন্যায্য দাবি মানতে হবে !

তিস্তা চুক্তি নিয়ে এযাবৎ অনেক ক্লাইমেক্স সৃষ্টি করা হয়েছে । বড় ভাই জল দিবে দিবে করেও তা দিচ্ছে না । কেন্দ্র রাজি হয় তো – রাজ্য রাজি হয় না । এটি যে বড় ভাইয়ের একটা বিরাট বদান্যতা , সেটা তুলে ধরতেই এই ক্লাইমেক্সটি সৃষ্টি করা হতে পারে ।
মমতা দিদি নাকি এবার শেখ হাসিনার সম্মানে দিল্লী যাচ্ছেন । এবার দিদিকে হয়তো একটা আস্ত ডিমের অমলেট পুরোটাই খাইয়ে দিতে পারেন । এটা আমার অনুমান মাত্র । সব আলামত দেখে মনে হচ্ছে শেষ মুহূর্তে এবার তিস্তা চুক্তি হয়েও যেতে পারে । বিশেষ কারণে এটাকে রাখা হয়েছে সারপ্রাইজ হিসাবে । শেখ হাসিনার ঝুলিতে একটা বিরাট কৃতিত্ব দেয়ার জন্যে ।
তাছাড়া চুক্তি হলেই ছোটভাইকে জল দিতে হবে – এমন তো কোনও বাধ্যবাধকতা নেই । ছোটভাই কথায় থাকলে এই ধরণের চুক্তিতে অসুবিধে কোথায় ? কারণ নদীর পানির কিউসেক যারা মাপবে , তারা তো আর পর হবে না । আপন লোকই তো ওখানে বসবে।
আর মিডিয়া ?
সেখানেও তো আর শত্রুরা বসে নাই। দরকার পড়লে বর্ষার ছবি শীতকালে পত্রিকায় ছাপানো হবে ।
আর ম্যাংগু জনতা ?
টিভি সেন্টারগুলোও তো আর খালি খালি বসে নাই । যখন জাতির কান্নার কথা , তখন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দিয়ে জাতিকে এরা ঠিকই হাসাতে পারবে । আনন্দের কমতি হলে , ক্রিকেট খেলা তো আছেই ।
চুক্তির পর বিরাট সাসপেন্সে এক দিদি অন্য জনকে জড়িয়ে ধরবেন । তা দেখে আমাদের সুশীল সমাজের তো হুঁশ হারিয়ে ফেলার কথা । দিল্লী জয়ের আনন্দে ঢাকা পড়বে জাতির মনে ভেসে ওঠা প্রতিরক্ষা চুক্তির বাস্তব ভীতির কথা ।

আবারও বলছি , এটা আমার অনুমান মাত্র । তবে অগত্যা ” পুরা ডিমের অমলেট” খাওয়ার আশ্বাস পেয়েই যদি প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকটি সই করে আসতে হয়, সেটা অবশ্য ভিন্ন ক্লাইমেক্স ।
দুই.
স্কুল জীবনে দুই ভাইয়ের বাবার সম্পত্তি শেয়ারিং এর একটা গল্প পড়েছিলাম । ধূর্ত বড় ভাই কীভাবে ছোটভাইকে ঠকিয়েছিল , গল্পটিতে তাই তুলে ধরেছিল । বাবার কাছ থেকে তারা একটি গাভী , একটি তালগাছ এবং একটি কম্বল পেয়েছিল । বড় ভাই একটি চমৎকার প্রস্তাব ড্রাফট করে । গাভীর চমৎকার সম্মুখ ভাগ ছোটভাইকে দিয়ে নোংরা পেছনের ভাগ বড় ভাই নেন । এখন সম্মুখভাগের অধিকারী ছোটভাইকে গাভীর খাবার খাওয়াতে হয় । বড ভাই পেছন থেকে দুধ খায় । ছোটভাইকে কোনও দুধ দেয় না ।

ছোট ভাই ভাবলো , সেকেন্ড টাইম আর ঠকা যাবে না । বড় ভাই এই সুযোগে তালগাছ নিয়ে চুক্তির কথা উপস্থাপন করে । সামনের (উপরের ) ভাগ না পেছনের ভাগ – বলতেই ছোট ভাই পেছনের ভাগ চাইল । চুক্তিমত ছোটভাইকে তালগাছের নিচে পানি দিতে হয় , বড় ভাই উপর থেকে মজা করে তাল পেরে খায় । ছোটভাই শুধু তাকিয়ে দেখে ।
দুই বার ঠকে ছোটভাই তৃতীয়বারের প্রস্তুতি নেয় । এই সুযোগে কম্বলের চুক্তি উপস্থাপন করে । দিনের বেলায় একজন ব্যবহার করবে , রাতের বেলায় অন্যজন । গোল্ডফিস মেমরির ছোটভাই এবার আর পেছনে থাকতে চায় না । তাছাড়া ছোটভাইয়ের সাইকেলোজি স্টাডি করে চুক্তিটি করে গরমের দিনে । যখন রাত আর দিনে কোনও তারতম্য নেই । ফলে
আবারও আগা মানে দিনের বেলার টার্মটা পছন্দ করে । কিছুদিন পরই শীত এলো । দিনের বেলায় ছোট ভাইয়ের কম্বল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না । রাতের বেলায় বড় ভাই আরাম করে কম্বলের নিচে ঘুমায়, ছোটভাই শীতে মরে ।

এ যেন হুবহু ভারত-বাংলাদেশের গল্প এবং দু-দেশের মধ্যকার বিভিন্ন চুক্তির বাস্তব অবস্থা। জানি না কোন ভাবনা থেকে আমাদের আগের পুরুষরা এই গল্পটি আমাদের জানিয়ে গিয়েছিলেন ।
গল্পের পরের অংশটিও মজার । এক প্রতিবেশী ছোট ভাইকে কিছু বুদ্ধি শিখিয়ে দেয় । পরের দিন সকালে বড় ভাই যখন গাভীর দুধ দোহাতে যায় , ছোট ভাই তখন গাভীর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে । বড় ভাই বলে , আরে কী করিস্ কী করিস্? ছোটভাই বলে , আমি আমার অংশেই তো আঘাত করছি । ছোটভাই যে সাবালক হয়ে গেছে , বড় ভাই তা বুঝতে পারে । তখন বাধ্য হয়ে দুধ দুই ভাগ ন্যায্য ভাগ করে নেয় ।

পরের দিন বড় ভাই তালের জন্যে গাছে উঠে । ছোট ভাই একটা কুঠার নিয়ে গাছ কাটতে যায় । বড় ভাই উপর থেকে চেচিয়ে বলে , আরে কী করিস্ কী করিস্? আমি তো পড়ে মরে যাবো !
ছোট ভাই বলে , কেন ? আমি তো নিজের ভাগেই কাটছি । বড় ভাই বলে , তুই থাম্ আমার প্রিয় ছোটভাই ।এখন থেকে আমরা গাছের তাল সমান ভাগে ভাগ করে নেব ।

দিনশেষে ছোটভাই কম্বলটি পানিতে ভিজিয়ে রাখে । বড ভাই সন্ধ্যায় দেখে কপাল খারাপ । তখন থেকে রাতে দুই ভাই-ই কম্বলের নিচে ঘুমায় ।
গল্পের মরালটি হলো , নাবালক থাকা অপরাধ । রাষ্ট্রীয় ভাবনায় এটাকে বলে জিও-পলিটিকেল বা ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা । এই সুবিধাগুলি একদেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে । তাতেই সকলের জন্যে ন্যায্য শেয়ারিং নিশ্চিত হয় ।

তিন.
সবকিছু দেখে মনে হয় , পুরো জাতিটাই নাবালক । অথবা কিছু নাবালক অথবা উন্মাদকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছি ।

Exit mobile version